হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে গরমে অতিষ্ঠ রোগীরা

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশজুড়ে বইছে দাবদাহ। পাশাপাশি বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় ভ্যাপসা গরমে জনজীবনে নেমে এসেছে অস্বস্তি। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় গরমের তীব্রতা ভোগাচ্ছে সাধারণ মানুষকে। গতকাল ছুটির দিনে রাস্তায় মানুষ কম থাকলেও গরমে বেশি অস্বস্তিতে পড়তে দেখা গেছে খেটে খাওয়া মানুষকে। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। এর মধ্যে রয়েছে লোডশেডিংয়ের সমস্যা। হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে গরমজনিত কারণে অসুস্থ রোগীর চাপ। চিকিৎসা নিতে এসেও হাসপাতালে আরেক দফা গরমের সম্মুখীন হতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের। এবার এপ্রিলের শুরু থেকেই তীব্র গরম পড়ছে দেশজুড়ে। ঈদের পর হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া রোগীদের বেশিরভাগই আসছে হিট স্ট্রোক, জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া নিয়ে। এসব রোগে সবচেয়ে বেশি কাবু হচ্ছে শিশুরা। দীর্ঘ ছুটির পর সামনের সপ্তাহ থেকে খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এভাবে দাবদাহ চলমান থাকলে শিশুদের জন্য আরো বড় সমস্যা হতে পারে।

সুচিকিৎসার জন্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীরা ভিড় জমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। গত বৃহস্পতিবার ঢামেক গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে এসেও অতিরিক্ত গরমে খারাপ অবস্থা হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের। বেড ও মেঝেতে থাকা প্রায় সবাই হাতপাখা কিংবা ছোট টেবিল ফ্যান ব্যবহার করছেন। সাজেদা খানম তার ৪ বছরের মেয়েকে নিয়ে ঢামেকের শিশু ওয়ার্ডে মেঝেতে আছেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন রাত থেকেই মেয়ের পাতলা পায়খানা শুরু হয়েছে। এরপর পেটব্যথা ও জ্বর। প্রথমে ফার্মেসি থেকে স্যালাইন কিনে খাওয়ালেও ভালো না হওয়ায় মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে চলে এসেছি।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু ওয়ার্ডে পা ফেলার জায়গা নেই। বেড ছাড়িয়ে মেঝেতেও আসন পেতে চিকিৎসা নিচ্ছে শিশুরা। জরুরি বিভাগ ও আউটডোরের মেডিসিন বিভাগে রোগীর চাপ সবচেয়ে বেশি। হাসপাতালের ভিতরে পর্যাপ্ত বাতাসের অভাব, রোগীর চাপ ও ফ্যান স্বল্পতায় কষ্টে আছেন অধিকাংশ রোগী। ভর্তি রোগীদের সঙ্গে স্বজনরাও কষ্ট করছেন। বেশিরভাগই গরমে ঘামছেন। হাসপাতালের ভিতরে থাকা রোগীরা গরমে কষ্টে আছেন, কিছু জায়গায় পাখা নষ্ট- এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি স্টোর রুমে যেসব পাখা ছিল কর্মীদের বলেছি যেখানে নষ্ট পাখা আছে সব পরিবর্তন করে দিতে। যেখানে নতুন করে পাখা লাগানো যায় সেখানে পাখা সংযুক্ত করতে বলেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এখানে তো অনেক রোগী আসে, অনেক বেশি ভিড়। তাই অনেকেই নিজের লাইট-ফ্যান ব্যবহার করেন। তাই আমি টেকনিশিয়ানদের বলে দিয়েছি যাতে আলাদা লাইনের ব্যবস্থা করা হয়, সেখান থেকে তারা লাইন নিয়ে ফ্যান, লাইট যেন জ্বালাতে পারে। যাতে বিপদ না হয়।’

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর, বি) বা কলেরা হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ঈদের পর থেকে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালগুলোতে। যার বেশিরভাগই ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। আইসিডিডিআর, বিতে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভিড় বেড়েছে রোগীদের। হাসপাতাল সূত্র জানায়, সাধারণ সময়ে ডায়রিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ রোগী আসে। বর্তমানে তা বেড়ে ৫০০ থেকে ৬০০’র বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। আইসিডিডিআর,বি’র চিকিৎসকরা বলেছেন, কয়েক দিন ধরে অতিরিক্ত গরমের কারণে পানির চাহিদা বেড়েছে। অনিরাপদ পানি ও খাবার গ্রহণের কারণে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. কামরুজ্জামান (কামরুল) বলেন, গরম বেশি পড়লে সাধারণত ডায়রিয়া, জন্ডিস, পানিবাহিত রোগ, হেপাটাইটিস এ ও ই ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যায়। এ সময়ে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া উচিত না। এছাড়া বাইরে থেকে এসেই এসি ছেড়ে দেওয়া, ঠান্ডা পানি খাওয়া, রাস্তার ধারের শরবত পান থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, এ সপ্তাহ থেকে শিশুদের স্কুল খুলে দেওয়া হবে। এখন শিশুরা ঘরেই আছে, তবে স্কুল খোলা হলে তারা লম্বা সময় স্কুলে থাকবে। স্কুল খুলে দিলে এবং তাপমাত্রা আরও বাড়লে শিশুদের হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়বে। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা প্রয়োজন। এছাড়া শিশুদের রাস্তার ধারের খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। একই সঙ্গে জ্বরের পাশাপাশি ঘণ্টায় তিনবারের বেশি বমি হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে বলেও জানান তিনি।