রংপুর অঞ্চলের ৮ জেলার গত ছয় মাস থেকে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা পাচ্ছে না। ফলে খরার ঝুঁকিতে পড়েছে এই অঞ্চল। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সব্জি, বোরো ধান, আম, লিচু ফসলের চাষাবাদে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
আবাহাওয়া অফিস এই বিষয়টিকে অস্বাভাবিক আবহাওয়া বলে মনে করছে। এই পরিস্থিতিতে বোরো, আম, লিচু সবজিসহ অন্যান্য ফসল এখন পুরোপুরি সেচ নির্ভর হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে খেত ফেটে যেতে শুরু করেছে। অপরিকল্পিত সেচ যন্ত্র ব্যবহারের ফলে কৃষকদের বাড়তি খরচের পাশাপাশি ভূগর্ভের পানিরস্তরও নেমে যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বর, ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের হার ছিল শূন্যের কোঠায়। মার্চ মাসে এই অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে ৯৮ দশমিক ২ মিলিমিটার। এপ্রিলের ১৭ দিন পেরিয়ে গেলেও আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে বৃষ্টিপাতের হার শূন্যের কোঠায়। গত দুই বছর থেকে অস্বাভাবিকহারে বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে এই অঞ্চলে। তবে ২০২২ সালে এই অঞ্চলে ডিসেম্বরে ৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার, জানুয়ারিতে ৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার ও ফেব্রুয়ারিতে ৮২ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। চলতি বছরের মার্চ মাসেও কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত হয়নি। এপ্রিলেও বৃষ্টি দেখা নেই এই অঞ্চলে।
ফলে অনাবৃষ্টির কারণে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে কৃষি ক্ষেত্রে। তথ্য মতে খরার ঝুঁকিতে রয়েছে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম.গাইবান্ধা জেলা। জলবায়ুর পরিবর্তনসহ নানান কারণে বৃষ্টি শূন্য হয়ে পড়ছে। এদিকে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে বোরো আবাদের মৌসুম চলছে। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকরা সেচ দিয়ে জমির ফসল রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। এতে কৃষকদের বাড়তি খরচ হচ্ছে। ফলে ধানের উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বোরোসহ অন্যান্য আবাদ পুরোপুরি সেচনির্ভর হয়ে পড়েছে। এতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বাড়ছে। পানি অভাবে অনেক স্থানে খেত ফেটে যেতে শুরু করেছে। রংপুর অঞ্চলে কয়েক লাখ সেচ যন্ত্র দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে পানির স্তর নিচে নেমে গিয়ে কৃষি উৎপাদন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। আবাদি জমিও সেচ সংকটে পড়তে পারে এমনটা আশঙ্কা করা হচ্ছে । ফলে ভূপ্রকৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। মুকুল থেকে গুটি আসার সময় অব্যাহত অনাবৃষ্টি আর তাপদাহের কারণে পুড়ে যাচ্ছে লিচুও আমের মুকুল, ঝরে পড়েছে লিচুর গুটি। প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণে চরম দুশ্চিন্তায় রংপুর বিভাগের চাষিরা। এই অবস্থায় আমও লিচুর বাগানে সেচসহ বিভিন্ন পরিচর্যা করে গাছের রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আবহাওয়ার প্রতিকূল এই অবস্থা মোকাবিলা করে গাছের আম ও লিচু রক্ষায় চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লিচুর মুকুল থেকে গুটি আসার সময় সাধারণত তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে লিচুর ফলনের জন্য বেশ ভালো। দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, লিচুগাছে এবার প্রচুর মুকুল আসার পরও বৈরি আবহাওয়ার কারণে কিছু মুকুল ঝরে গেছে। তারপরও এখন দানা পর্যায়ে চলে এসেছে। লিচু অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরের বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, প্রতিকুল এই আবহাওয়া মোকাবিলা করে লিচুর ফলন রক্ষায় আমরা সার্বক্ষণিক লিচু চাষিদের পরামর্শ দিয়ে আসছি। এ জন্য চাষিদের তিনি বিকালে বা সন্ধ্যায় লিচুগাছে নিয়মিত সেচ এবং বোরণ স্প্রে করার পরামর্শ দেন। তবে তিনি জানান, কৃষিবিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী কৃষকরা যেভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে তাতে লিচুর ফলনের বেশি ক্ষতি হবে না।
রংপুর অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, অন্য সময় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কিছু বৃষ্টি হলেও গত সাড়ে ৫ মাসের মধ্যে শুধু মার্চে বৃষ্টি হয়েছে ৯৮ মিলিমিটার। তাও স্বাভাবিকের চেয়ে কম। এপ্রিলে এ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়নি।