বৃষ্টিহীনতার জন্য সারা দেশে বাড়ছে দাবদাহ। সেইসাথে কয়েকদিন ধরেই তীব্র দাবদাহে খাঁ-খাঁ করছে বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহী। বৃষ্টিহীনতার কারণে আমের জন্য বিখ্যাত রাজশাহীতে ঝরে যাচ্ছে আমের গুটি। ফলে আম চাষিরা চলতি মৌসুমে লোকসানে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজশাহীতে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর গাছে আমের মুকুল ও গুটি সবই কম। বাগানের গাছগুলোতে মুকুল না ফুটলেও এসেছে নতুন পাতা। আর যে গাছগুলোতে মুকুল থেকে গুটি হয়েছে; তা পড়েছে তীব্র দাবদাহের কবলে। বৃষ্টিহীনতার এমন সময়ে সর্বশেষ টিকে থাকা আমের গুটিগুলোও এখন ঝরছে খরায়।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে আমের বোঁটার রস শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। পানির সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগেও আসছে না চাষি ও ব্যবসায়ীদের মনে স্বস্তি। একে তো গাছে কম আম, দ্বিতীয়ত যে আম আছে সেখান থেকে ঝরে পড়ছে। সব মিলে এক ধরনের লোকসানের আভাস চাষি ও ব্যবসায়ীদের মনে।
চাষিদের দাবি, প্রতি বছর আমের গুটি ঝরে। যাকে সাধারণ গুটি ঝরা হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু এ বছর সাধারণের চেয়ে বেশি আমের গুটি ঝরছে খরায়। মুকুল আসার পর থেকেই খরা প্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে বৃষ্টি হয়নি। মাটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা হ্রাস পাওয়ায় আমসহ বিভিন্ন ফসল শুকিয়ে যাচ্ছে। তাদের ধারণা, এরই মধ্যে অনেক বাগানে ১০ থেকে ১৫ ভাগ আমের গুটি ঝরে গেছে খরার কারণে।
আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজশাহী জেলার পুঠিয়া, চারঘাট, বাঘা ও দুর্গাপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আমের চাষ হয়। এ বছর এসব উপজেলার আমের বাগানগুলোতে মুকুল কম এসেছে। বেশিরভাগ গাছে আমের মুকুলের পরিবর্তে গজিয়েছে নতুন পাতা। পুঠিয়া উপজেলার বিড়ালদহ গ্রামের আম চাষি আ. জলিল জানান, তার ৩০টির মতো আমের গাছ আছে। কিন্তু মুকুল কম এসেছে, আর মুকুল আসার পরে বৃষ্টি না হওয়ায় ৪ থেকে ৫টি গাছের মুকুল ব্যতীত সব গাছের মুকুল ঝরে গেছে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর আমের অন ইয়ার থাকলেও এবার অফ ইয়ার, ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমের ফলন কমবে। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে। এ সময় চাষিদের বিভিন্ন হপার পোকা নিধনে ওষুধের পাশাপাশি সকাল-সন্ধ্যা পানি স্প্রে করা দরকার।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ২৪ হেক্টর বেশি। চলতি বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৫ টন।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। প্রচণ্ড খরার কারণে আমের মুকুল ঝরে পড়ছে। রাজশাহীতে এমনিতেই মুকুল এবার অনেক কম এসেছে। আর খরার কারণে মুকুল ঝরে পড়ায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তারপরও আম চাষিদের গুটি ঝরে পড়া রোধে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।