তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর বৃদ্ধি

১৫০ ক্যান্সার চিকিৎসকের যৌথ বিবৃতি

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ এবং তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর বৃদ্ধির জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছেন দেশের প্রখ্যাত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালের ১৫০ জন চিকিৎসক। বিবৃতি প্রদানকারী উল্লেখযোগ্য ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হলেন অধ্যাপক ডাঃ এমএ হাই, পরিচালক, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি হাসপাতাল ও ওয়েলফেয়ার হোম, অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ক্লিনিক্যাল অনকোলজি এবং রেডিওথেরাপি, স্কয়ার হাসপাতাল, অধ্যাপক ডা. এএম এম শরিফুল আলম, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান ক্লিনিক্যাল অনকোলজি, আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতাল প্রমুখ।

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের উদ্যোগে এক যৌথ বিবৃতিতে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ছয়টির সাথেই তামাক জড়িত। তামাক ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি যেমন ক্যান্সার, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, শ্বাসকষ্ট ও পায়ে পচন এবং খাদ্যনালীতে ক্যান্সারসহ নানা শারীরিক জটিলতা সম্পর্কে এখন আর কারো অজানা নয়। গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখনো ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ (৩ কোটি ৭৮ লাখ) তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করেন, ধূমপান না করেও প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিভিন্ন পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। তামাক ব্যবহারের ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি বা ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ এবং অন্যান্য ধরনের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ বেড়ে যায়। এ কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করে। এমতবস্থায় তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কার্যকরভাবে করারোপের মাধ্যমে মূল্য বাড়িয়ে তামাকের ব্যবহার হ্রাসে উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিক।

এতে করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত হবে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনেও তা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে (২০১৯-২০২৩) বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৬৪৩ ডলার বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ ডলার। অথচ এ সময়ে বেশির ভাগ সিগারেটের দাম হয় প্রায় অপরিবর্তিত থেকেছে অথবা সামান্য বেড়েছে। ফলে সিগারেটের প্রকৃত মূল্য কমে গেছে। এতে করে সিগারেট অধিক সহজলভ্য হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে বিড়ি-সিগারেটের খূচরা শলাকা বিক্রিও তামাকজাত দ্রব্যকে সহজলভ্য করছে। এর ফলে কিশোর ও তরুণদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে বৈ কমছে না। অন্যদিকে নিম্ন আয়ের মানুষও ধূমপানে নিরুৎসাহিত না হয়ে বরং উৎসাহিত হয়ে পড়ছে। এত করে তারা আর্থিক ও শারীরিক উভয় ঝুঁকির মুখে পড়ছে। এখনই এটা নিয়ন্ত্রণে না আনা গেলে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা অসম্ভব হবে। এমতবস্থায় বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি আইন করে নিষিদ্ধ করা উচিত। বিশ্বের বহু দেশে খূচরা বিক্রি নিষিদ্ধ রয়েছে। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে সংশোধন করেও এটা করা যায়। এটা এখনই কার্যকর করা উচিত। পাশাপাশি কার্যকরভাবে করারোপের মাধ্যমে সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি করা জরুরি। এমতাবস্থায়, তামাকের নেতিবাচক প্রভাব থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার নিমিত্ত আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তামাক কর ও দাম বৃদ্ধির জন্য নিম্নোক্ত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে- প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের নিম্ন স্তরের মূল্য ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা, মধ্যম স্তরের মূল্য ৬৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা, উচ্চস্তরের মূল্য ১১৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের মূল্য ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা।

অন্যান্য স্তরে ৬৫% এবং নিম্নস্তরের সিগারেটের উপর কমপক্ষে ৬৩% সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫% সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা ৫৫ টাকা, এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০% সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। বর্তমান ব্যবহারকারীর ৭৫%-ই নিম্নস্তর সিগারেটের ভোক্তা। অথচ এই স্তরে সম্পূরক শুল্কহার মাত্র ৫৮ শতাংশ, তাই এটা বাড়িয়ে কমপক্ষে ৬৩ শতাংশ করা হলে বিশেষ করে তরুণ ও নিম্ন আয়ের ভোক্তার মধ্যে সিগারেটের ব্যবহার কমবে এবং রাজস্ব আয় বাড়বে। এই বর্ধিত রাজস্ব চলমান আর্থিক সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারে ধূমপায়ীদের নিরুৎসাহিত করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি আরো শক্তিশালী করে প্রণয়ন এবং কার্যকরভাবে কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা আশু জরুরি বলে তারা অভিমত দেন। ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয়কে বাস্তবে রূপ দিতে হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরো কঠোর করা ও বিদ্যমান তামাকজাত দ্রব্যের কর কাঠামোর সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই বলেও তারা বিবৃতিতে জানান।