ঢাকা ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লিফটে আটকে রোগীর মৃত্যু, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পদক্ষেপ

লিফটে আটকে রোগীর মৃত্যু, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পদক্ষেপ

গত ১২ মে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘গাজীপুরে হাসপাতালের লিফটে ‘৪৫ মিনিট’ আটকে থেকে রোগীর মৃত্যু’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমোটো) গ্রহণ করেছে। কমিশনের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সুস্মিতা পাইক স্বাক্ষরিত সুয়োমোটোর বিষয়বস্তু নিচে উল্লেখ করা হলো-

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটে দীর্ঘ সময় আটকে থাকার পর এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। লিফটের ভেতরে আটকেপড়া রোগীর স্বজনরা লিফটম্যানদের কল দিলে উদ্ধার না করে তারা দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করলে ফায়ার সার্ভিস এসে উদ্ধার করে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১২ মে, ২০২৪ তারিখ রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ওই রোগী হলেন গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রানীগঞ্জ বাড়িগাঁও গ্রামের শারফুদ্দিনের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৫৩)। মমতাজের মেয়ে শারমিন আক্তার বলেন, ‘আমার মা সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সকাল ৬টায় হাসপাতালে নিয়ে আসি। প্রথমে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সেখানে পরীক্ষার পর জানা যায়, হার্টের কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরে হাসপাতালের ১১ তলা থেকে ৪ তলার হৃদরোগ বিভাগে নেওয়ার কথা বলে। লিফটে উঠলে ৯ তলার মাঝামাঝি হঠাৎ লিফট বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় আমি, আমার মামা, ভাইসহ কয়েকজন মাকে নিয়ে ভেতরে ছিলাম। আমাদের দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। আমরা লিফটে থাকা তিনজন লিফটম্যানের নম্বরে কল দিই। তারা গাফিলতি করেন। ফোনে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। শারমিন আক্তারের দাবি, ‘৪৫ মিনিট তারা ভেতরে অবস্থান করেছেন। উপায় না পেয়ে ৯৯৯-এ ফোন দেন। ফোন পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এসে তাদের উদ্ধার করে। শারমিনের অভিযোগ, দায়িত্ববোধহীন লিফটম্যানদের গাফিলতির কারণেই তার মা মমতাজ বেগমের মৃত্যু হয়েছে।

গৃহীত সুয়োমোটোতে উল্লেখ রয়েছে, চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির আশায় হাসপাতালে এসে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত লিফটে আটকে থেকে মৃত্যুর অভিযোগটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো সরকারি হাসপাতালে এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত অনভিপ্রেত। ওঠানামা করার জন্য লিফট একটি অত্যাধুনিক বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্র, নিয়মিতভাবে যার ত্রুটি-বিচ্যুতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়। শহীদ তাজউদ্দীন হাসপাতালের উক্ত লিফট নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা হয় কি না তা কমিশনের নিকট বোধগম্য নয়। এছাড়া, বারবার ফোন করার পরেও কেনো লিফটম্যানরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়নি তা নিবিড়ভাবে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক মর্মে কমিশন মনে করে। বর্ণিত প্রেক্ষাপটে, উল্লিখিত ঘটনার সঠিক তদন্তপূর্বক কাদের অবহেলায় লিফটে ৪৫ মিনিট আটকে থেকে রোগীর মৃত্যু হলো তা শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে। আদেশের অনুলিপি জ্ঞাতার্থে জেলা প্রশাসক, গাজীপুর ও সচিব, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। আগামী ২৫/০৬/২০২৪ তারিখ প্রতিবেদনের জন্য ধার্য করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত