পূরণ হয়নি ৫০ শতাংশ সেচের লক্ষ্যমাত্রা

তিস্তায় পানি না থাকায় জমিতে খেতে ফাটল

প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর

পানিশূন্য হয়ে পড়েছে রংপুর বিভাগের ৫ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী। নদীতে পানি না থাকায় কৃষকরা ঠিকমতো তাদের জমিতে সেচ দিতে পারছেন না। সেচের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ শতাংশও পূরণ না হওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন এই অঞ্চলের লাখো কৃষক। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে তিস্তা ব্যারাজের উজানে ১০০০-১৫০০ কিউসেক পানি পাওয়া গেলেও ভাটির দিকে ১০০ কিউসেক পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। তিস্তা ব্যারাজ থেকে শুরু হয়ে সেচ প্রকল্পের ৭৬৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য খাল নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২টি উপজেলায় বিস্তৃত হয়েছে। মূল খাল থেকে টারশিয়ারি ও সেকেন্ডারি নালার মাধ্যমে পানি পৌঁছায় কৃষকের জমি পর্যন্ত। কিন্তু পানি ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন সেচ সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকরা। সুবিধাভোগী কৃষকরা জানান, নদীতে পানি না থাকায় আর পানির প্রবাহ নিশ্চিত না হওয়ায় সেচনালা কাজে আসছে না। এতে চাষাবাদ করতে পারছেন না তারা। বিকল্প উপায়ে জমিতে সেচ দিতে খরচ বেশি হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৭৯ সালে উত্তরের ৮ জেলার কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সেচ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্তু ব্যারাজের উজানে ভারত বাঁধ নির্মাণ করে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় বাধাগ্রস্ত হয় প্রকল্পটি। পরে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের ১ লাখ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১৯৯৩ সালে তিস্তা সেচ প্রকল্পের অপারেশনাল কার্যক্রম চালু করা হলেও কখনোই তা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। ফলে সেচযন্ত্রের ওপর নির্ভর করতে হয় কৃষকদের। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিস্তা নদীতে ৬০-৬৫ হাজার কিউসেক পানিপ্রবাহ থাকলেও অক্টোবর থেকে পানি কমতে শুরু করে। ডিসেম্বরে তিস্তা শুকিয়ে যায়। জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত তিস্তায় ৭০০-১৫০০ কিউসেক পানি থাকলেও সেসময় সেচের জন্য পানি প্রয়োজন হয় কমপক্ষে ৫ হাজার কিউসেক। কৃষকরা বলছেন, পুরো মৌসুম সেচ প্রকল্প থেকে পানি না পাওয়ায় বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্প থেকে তাদের জমিতে পানি নিতে দ্বিগুণেরও বেশি ব্যয় হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তিস্তা সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৬ সালে ১০ হাজার, ২০১৭ সালে ৮ হাজার, ২০১৮ সালে ৩৫ হাজার, ২০১৯ সালে ৪০ হাজার, ২০২০ সালে ৪১ হাজার এবং ২০২১ ও ২০২২ সালে ৫৩ হাজার, ২০২৩ সালে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। নদীবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলসের সিনেটর ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, যেখানে তিস্তার পানিই অনিশ্চিত, সেখানে সেচ খাল সংস্কার করা অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই না। তিনি বলেন, আগে নদীকে বাঁচাতে হবে তারপর সেচের কথা ভাবতে হবে। ব্যারাজের জলকপাট বন্ধ করে উজানের পানি সেচ কাজে লাগানোর জন্য ভাটিতে নদী মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে শুনেছি তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা। কিন্তু বাস্তবে তিস্তাকে বাঁচানোর কোনো উদ্যোগ এখনো সরকার থেকে গ্রহণ করা হয়নি। আমরা চাই উত্তরাঞ্চলকে মরুকরণের হাত থেকে বাঁচাতে সরকার দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।