নতুন রূপে ফিরছে চট্টগ্রাম জাতিসংঘ পার্ক

বন্দর নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় প্রায় ২ দশমিক ১৭ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত জাতিসংঘ পার্ক। একসময় পার্কের ভেতরে বাগান, জলাশয়, প্রচুর গাছ ও হাঁটার স্থান ছিল। ২০১২ সালে পার্কের ১ একর জায়গায় দুটি সুইমিং পুল ও জিমনেসিয়াম নির্মাণ শুরু করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। কাজ শেষ হয় ২০১৫ সালে। পরবর্তীতে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাবে কীভাবে একটি উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যায়, তার উজ্জ্বল উদাহরণ হলো পাঁচলাইশ জাতিসংঘ পার্ক। ৫ কোটি টাকা খরচের পরেও ২০১৬ সাল থেকে একপ্রকার পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল পার্কটি। পার্কের একপাশে সুইমিংপুল ও জিমনেসিয়ামের প্রবেশপথে সব সময় তালা থাকত। আর বাগান ও জলাশয়টি ডোবায় রূপ নিয়েছিল। তাই এখানে আর কোনো দর্শনার্থী আসত না। একসময়ের সুন্দর পার্কটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল শুধু সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাবে। তবে আশার কথা হচ্ছে প্রায় এক দশক পর ‘পরিকল্পিত’ উদ্যান হতে যাচ্ছে, সেই পরিত্যাক্ত উদ্যানটি। উদ্যানটি আবারো সাজছে নতুন সাজে। এ জন্য পার্কের ভেতরে সিটি করপোরেশনের নির্মাণ করা সুইমিংপুল ও জিমনেসিয়াম ভেঙে ফেলা হয়েছে। প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢেলে সাজানো হচ্ছে পুরো পার্কের অবকাঠামো। মাঠের ভেতরে কেটে সমান করা হচ্ছে উঁচু-নিচু জমি। মাঠের চারপাশে নির্মাণ করা হয়েছে সীমানা প্রাচীর ও প্রবেশফটক। সরেজমিন দেখা গেছে, পার্কের ভেতরে এখন হাঁটার পথ, স্থাপনা ও ফোয়ারার কাজ চলছে। উদ্যানের ঠিক মধ্যখানে রয়েছে ফোয়ারাটি। এর চারপাশ দিয়ে এঁকেবেঁকে গেছে হাঁটার পথ। উদ্যানে বসার স্থান নির্মাণ এখনো শেষ হয়নি। সীমানাপ্রাচীর ও প্রবেশ ফটক নির্মাণ প্রায় শেষ। এ ছাড়া বাকি রয়েছে উদ্যানে আলোকসজ্জার কাজ। গণপূর্ত অধিদপ্তর জানিয়েছে, নতুন প্রকল্পের আওতায় সীমানাপ্রাচীর, প্রবেশ ফটক, অফিস, দোকান, টিকিট কাউন্টার ও শৌচাগার নির্মাণ করা হবে। ফোয়ারা, হাঁটার পথ ও বসার জন্য আসন নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া উদ্যানে আসা শিশুদের জন্য খেলাধুলা ও শরীরচর্চার সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমানে প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবেন বলেন আশাবাদী কর্মকর্তারা। ২০১৫ সালের জুনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকায় নির্মিত স্থাপনাগুলো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে। ২০১৬ সালে পার্কের মালিকানা নিয়ে গণপূর্তের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের বিরোধ দেখা দেয়। সে বছর করপোরেশন উদ্যান, জিমনেসিয়াম ও সুইমিং পুল বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২৫ বছরের জন্য ইজারা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বাণিজ্যিকভাবে পার্ক ইজারা দেওয়ার উদ্যোগের প্রতিবাদ জানায় গণপূর্ত অধিদপ্তর। নগর-পরিকল্পনাবিদ মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান জানান, নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে যেভাবে উদ্যানকে সাজানো হচ্ছে, সেটি যাতে যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। এই উদ্যান নিয়ে যাতে দুই সংস্থার মধ্যে আর কোনো সমন্বয়হীনতা না থাকে। আর উদ্যানটি যেন সব সময় ব্যবহারের উপযোগী থাকে। এ বিষয়ে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ বাবু আহমেদ জানান, একসময়ের দৃষ্টিনন্দন পার্কটি ময়লা-আবর্জনায় পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছিল। প্রায় এক দশক পর পাঁচলাইশ এলাকাবাসী পার্কটি পেতে যাচ্ছে। এটা তাদের জন্য স্বস্তির খবর। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে একপ্রকার পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল পার্কটি। পার্কের একপাশে সুইমিংপুল ও জিমনেসিয়ামের প্রবেশপথে সব সময় তালা থাকত। আর বাগান ও জলাশয়টি ডোবায় রূপ নিয়েছিল। হাঁটার পথে বর্ষায় ৩-৪ ফুট পানি থাকত। তাই এখানে আর কোনো দর্শনার্থী আসত না। নতুন করে পার্ক নির্মাণের পর তাতে টিকিট কাউন্টার রাখা হবে। তবে শুরুতে পার্কটি উন্মুক্ত থাকবে সবার জন্য। ভবিষ্যতের কথা ভেবে টিকিট কাউন্টার করা হচ্ছে। উদ্যানে হাঁটতে ও ঘুরতে আসা মানুষদের জন্য একটি দোকান থাকবে। উদ্যানটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ছোট অফিস করা হবে। জানা গেছে, ২০২২ সালে এসব স্থাপনা ভেঙে নতুন করে পার্কটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রায় ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম জেলার পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান উন্নয়ন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। জাতিসংঘ পার্কে উন্নয়নকাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে। এর আগে পার্কের ভেতরে থাকা সুইমিংপুল ও জিমনেসিয়াম ভেঙে ফেলা হয়। দুটি সুইমিংপুলের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ছিল ১২০ ফুট, প্রস্থ ৫০ ফুট। একটির গভীরতা ৮ ফুট, আরেকটির সাড়ে ৮ ফুট। জিমনেসিয়াম ভবনটি ৭ হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর ছিল। তবে তাতে শরীরচর্চার কোনো সরঞ্জাম ছিল না। এরপর পার্কের উন্নয়নে সিটি করপোরেশন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর পৃথকভাবে উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ না করায় উদ্যানটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। পরে একপ্রকার পরিত্যক্ত হয়ে যায় দৃষ্টিনন্দন উদ্যানটি। প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা এই স্থাপনা কোনো কাজেই আসেনি। এরপর ২০২২ সালে স্থাপনাগুলো ভেঙে নতুন করে উদ্যানটি ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর উদ্যানটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।