ঢাকা ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

বাড়ছে মানসিক চাপ : আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা

বাড়ছে মানসিক চাপ : আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে  শিক্ষার্থীরা

উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বে টানা ৩ সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে পুরো ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে বাড়ছে দুশ্চিন্তার চাপ। শিগগিরই ক্যাম্পাস খোলার ব্যপারে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপও নিতে দেখা যাচ্ছে না কোনো পক্ষকেই। এতে করে সেশনজটমুক্ত কুবি ক্যাম্পাসে সৃষ্টি হয়েছে সেশনজটের শঙ্কা, মানসিক চাপে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত তিন মাস ধরে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে শিক্ষক সমিতি এবং উপাচার্য আবদুল মঈনের মধ্যকার মতবিরোধ চূড়ায় পৌঁছেছে। সর্বশেষ গত মার্চ মাসে শিক্ষক সমিতি সাত দফা দাবি ঘোষণা করে এবং দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য পরপর তিন দফায় ক্লাস বর্জনের ঘোষণাও দেয় কুবি শিক্ষক সমিতি। পরে গত ২৮ এপ্রিল উপাচার্যের নেতৃত্বে শিক্ষকদের মারধরের ঘটনায় উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে এক দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। পরবর্তীতে শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া ও শিক্ষকদের মারধরের ঘটনার বিচার দাবিতে দফায় দফায় মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন থেকে দুইটি ভিন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তদন্ত কমিটি নিয়ে আপত্তি রয়েছে শিক্ষক সমিতির। ফলে খুব সহসাই ক্যাম্পাস খুলছে না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। ক্যাম্পাস বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কেমন হতে হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী বিশ্বজিৎ সরকার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারনে আমাদের সরাসরি ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে। চাকরির বাজারে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের যে পরিকল্পনা ছিল তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো জানান, আমাদের মাস্টার্স শেষ সেমিস্টার চলাকালীন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়। দুটি পরীক্ষা হয়েছে আর বাকি দুটি পরীক্ষা কবে হবে তা আমরা জানি না। এমনকি প্রশাসনও সেটা বলতে পারছে না। ইংরেজি বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার বলেন, ‘শেষ বর্ষে এসে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। এতে করে একদিকে বাড়ছে মানসিক চাপ, অন্যদিকে ক্যারিয়ার নিয়েও আছি দুশ্চিন্তায়। বিশ্ববিদ্যালয় একদিন খুলবে সেটা হতে পারে আগে কিংবা পরে। কিন্তু আমাদের জীবন থেকে যে সময়টুকু চলে যাচ্ছে, তা কি আমরা কখনো ফিরে পাবে?’

তিনি আরো বলেন, গ্র্যাজুয়েশন সময়মতো শেষ করতে না পারলে আমরা বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারব না। আমাদের ক্লাস-পরীক্ষাগুলো দ্রুত নিয়ে নেওয়া হোক। যাতে আমাদের সেশনজটের মতো ভয়ানক বেড়াজালে না পড়তে হয়। এদিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলমান সংকটের কারণ বিভিন্ন বিভাগের অন্তত আটটি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। এছাড়া অন্তত সাতটি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রস্তাবিত রুটিন প্রকাশ স্থগিত রয়েছে বলেও জানান তারা।

মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পাবেল রানা জানান, গত ৬ মে আমাদের অষ্টম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজও আমরা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় বসতে পারিনি। শিক্ষক নাকি বাবার মতো। কোনো বাবা কী তার সন্তানের খারাপ চাইতে পারে? এমনিতেই করোনার কারণে আমাদের ১ বছরেরও বেশি সময় নষ্ট হয়েছে। এখন যদি এভাবে আরো সময় অপচয় হতে থাকে, তাহলে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করতেই আমাদের বয়স হয়ে যাবে সাতাশ-আটাশ। চাকরি কবে করব, পরিবারকে কখন সহযোগিতা করব? প্রশাসনকে শিগগিরই ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, শিক্ষকরা আজ অস্তিত্ব সংকটে দাঁড়িয়ে আছে। শিক্ষার্থীরাও অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্যাম্পাস খুলে দেয়ার জন্য একাধিকবার দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন আমাদের কথা শুনছেন না। তিনি আরো বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীদের সেশনজট নিরসনে আমরা অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে হলেও পুষিয়ে দিব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত