ঢাকা ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দুর্নীতিবাজদের প্রধান অতিথি করে প্রথম সারিতে বসানো হচ্ছে

দুদক চেয়ারম্যান
দুর্নীতিবাজদের প্রধান অতিথি করে প্রথম সারিতে বসানো হচ্ছে

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিভিন্ন সংগঠনে প্রধান করা হচ্ছে, অনুষ্ঠানে অতিথি করে প্রথম সারিতে বসানো হচ্ছে। নাগরিকরাই দুর্নীতিবাজকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। গতকাল শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) আয়োজিত দুর্নীতি দমনে নাগরিকদের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনারে এমন অভিযোগ করেন মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন, সাবেক সংসদ ব্যারিস্টার শামিম হায়দার পাটওয়ারী ও সাংবাদিক জ.ই মামুনসহ অনেকে। নাগরিকদের উদ্দেশ্যে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুর্নীতিকে কেউ সমর্থন করে না। আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রধান যদি অত্যন্ত দুর্নীতিপরায়ণ হয়। তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেও আপনিও দুর্নীতিকে সহায়তা করছেন। এই বিবেকটা জাগ্রত করতে হবে। আপনার পাশের বাসায় ইলিশ মাছ ভাজে আপনি সেটার ঘ্রাণ পান না? আপনার পাশের বাসার লোকটা যদি দুর্নীতি করে আপনি টের পান না? আপনার কী কিছুই করণীয় নেই। আপনি শুধু দুদকের সমালোচনা করছেন। বাড়ির মালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনার বাসার ভাড়া ৫০ হাজার টাকা অথচ যার বেতন ২০-৩০ হাজার টাকা তাকে বাসা ভাড়া দিচ্ছেন কেন।

নাগরিকদের কী কিছুই করার নেই। কিছু করার না থাকলে বর্জন তো করতে পারি’। দুদকের চুনোপুঁটি ধরা প্রসঙ্গে অভিযোগ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, এখানে নাগরিকদের ভূমিকা নয়, দুর্নীতি দমনে কমিশনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুর্নীতি বলতে আমরা বুঝি শুধু সরকারি কর্মকর্তারই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এটা ইচ্ছাকৃতভাবে বলা হয় কী না, শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কথা বলে অনেকেই প্রকাশ্যে যা খুশি তাই করে যায় এটাও দেখা দরকার।

শিডিউলভুক্ত অপরাধ নিয়ে দুদক কাজ করে। তিনি বলেন, অনেক সুন্দর পরিবেশে কাজ করতে পারছি। এ জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। অভিযোগের সংখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টোল ফ্রি নাম্বারে যেসব অভিযোগ আসে তার ৯০ শতাংশই আমাদের তফসিলবহির্ভূত। অভিযোগ অনুসন্ধান করে তারপর আমলে নিতে হয়। দুদকের বিররুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কথা বলা খুব সোজা। কাজ করা কঠিন। আমরা কাজ করি, আমরা সমালোচনা শুনব। এই সমালোচনা শোনার মানসিকতা আমাদের আছে। ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিয়মের বাইরে কাজ করলেই তো দুর্নীতি হয়।

প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট দুর্নীতির জন্য দায়ী। সব ডিপার্টমেন্ট ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওখানে দুর্নীতি অনিয়ম সব হচ্ছে। যারা ছেড়ে দিয়ে রেখেছে তারা আবার দেখছে দুদক কী করে। সেবা ক্রয়, টেন্ডারে সেখানে লোকজন যদি তাদের কাজটা ঠিক মত করে, আমাদের কাছে দুর্নীতির অভিযোগ কম আসবে। অর্থপাচার হওয়ার পর জাতি জানতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠান বিএফআইইউ অর্থ পাচারের আমাদের একটা তথ্য দিয়েছে ৬ মাস পরে। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আপনি চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার ডলার পাঠাবেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পারমিশন ছাড়া আপনি কি পারবেন? তাহলে টাকা পাচার হয় কীভাবে? মন্দ ঋণ যে হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকে ও অন্য ব্যাংকের নিরীক্ষা আছে না? তারা তো নিরীক্ষা করে। কোথাও আসে? যখন খেলাপি হয়ে যায় তখন জানা যায়। এর আগে কারা জানতে পারে ঋণগুলো যখন প্রসেস হয়, দেওয়া হয়। যে যার কাজ করছে না। তার ভেতরে দুদক নিয়ে আপনাদের অনেক প্রত্যাশা, এত প্রত্যাশা যে আমরা আপনাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আগাতে পারছি না।

সেমিনারে মনজিল মোরসেদ বলেন, দুদক কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। দুদকে ডেপুটেশনে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সংস্থাটি ব্যবস্থা নিতে পারে না। দুদক মামলা খুব কম করছে।

চুনোপুঁটি ধরা হচ্ছে। দু’একজন রাঘববোয়াল ধরা হচ্ছে। ১০০ রাঘববোয়ালের মধ্যে মাত্র যদি ৫ জন ধরেন এটা কিন্তু বলতে পারব না, এটা যথার্থ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যেভাবে দুর্নীতি বাড়ছে এজন্য দুদকে চৌকস কর্মকর্তা দরকার। অনেক প্রভাবশালী আছে যারা জেলা প্রশাসকদের ভয় ভীতি দেখায়।

ডিসিদের তারা পাত্তা দেয় না, ডিসিরা মুভ করতে পারে না। এমন ঘটনাও আমরা জানি। অনেক উপজেলায় একদম একনায়কতন্ত্র শাসন চলে। এর মধ্যে দুদক, যার কোনো হাতিয়ার ও অস্ত্র নেই জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু কাগজপত্রের ওপর নির্ভর করে দুদক মামলাটি কোর্টে নেবে। এখানে স্বীকারোক্তি আদায় করতে না পারায় দুদক প্রকৃত ঘটনা বের করতে পারে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত