ঢাকা ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রংপুরের ৭ হাসপাতালে দুর্ভোগ

জেনারেটর থাকলেও বরাদ্দ নেই তেলের

জেনারেটর থাকলেও বরাদ্দ নেই তেলের

রংপুরের সাতটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জেনারেটর থাকলেও তেলের অভাবে সেগুলো চালানো হয় না। এ কারণে লোডশেডিংয়ের সময় কোনো কোনোটিতে অস্ত্রোপচার বন্ধ থাকে। আর গরমে রোগীদের হাঁসফাঁস অবস্থার পাশাপাশি রাতেও কখনো কখনো অন্ধকারে কাটাতে হয়। এদিকে অব্যবহৃত অবস্থায় দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় কোনো কোনো হাসপাতালের জেনারেটর বিকল হয়ে গেছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। রংপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, পীরগাছা, পীরগঞ্জ, কাউনিয়া ও মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া আছে জেনারেটর। বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প ব্যবস্থায় হাসপাতালের কার্যক্রম চালু রাখার জন্য এসব জেনারেটর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২ বছর আগে থেকে জেনারেটরের তেলের বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যায়। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জরুরি অস্ত্রোপচারের সময় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে অনুরোধ করা হয়। তবুও অনেক সময় বিদ্যুৎ থাকে না। কখনো অস্ত্রোপচারের মাঝপথেও বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হয়। তাপপ্রবাহ বাড়লে ঘন ঘন লোডশেডিং দেওয়া হয়। এতে রোগীদের নিয়েও দুর্ভোগে পড়তে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

গতকাল রোববার বিকালে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যুৎ না থাকায় ফ্যান ও লাইট বন্ধ। গরম থেকে বাঁচতে রোগী, স্বজন, চিকিৎসক-নার্সরা হাতপাখা, কাগজের প্যাড দিয়ে বাতাস করছেন। হাসপাতালের রোগী হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের ডাঙ্গীরহাট গ্রামের বাসিন্দা নুর বানু আক্ষেপ করে বলেন, ‘হামার গরিবের ভরসা এই হাসপাতাল। কোনো সমস্যা হইলে এটে দৌড়ি আসি। কিন্তু এইটে কারেন্ট গেইল ফ্যান ঘুরে না গরমে জীবন বের হয়া যায়। রাইতোত তো কারেন্ট গেইলে আন্ধারোত থাকির নাগে।’ রোগী ও তাদের স্বজনেরা জানান, রাতে বিদ্যুৎ গেলে মোবাইল ফোনের লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেন তারা।

তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহীন সুলতানা বলেন, ‘হাসপাতালে জেনারেটর আছে; কিন্তু তেলে কোনো বরাদ্দ নেই। আমি আসছি (এক বছরের বেশি সময়) থেকে জেনারেটর চলে না, দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা হয়নি।’

পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক সপ্তাহ আগে উপজেলা পরিষদ থেকে একটি জেনারেটর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটিও তেলের অভাবে বন্ধ রয়েছে। ওই হাসপাতালে ভর্তি রোগী তাম্বুলপুর গ্রামের যুবক সবুজ মিয়া বলেন, ‘শুনেছি হাসপাতালে জেনারেটর আছে। কিন্তু কোনো দিন সেটা চালু করে না। গরমে খুব কষ্ট হচ্ছে।’

পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বিশ্বেশ্বর চন্দ্র বর্মন বলেন, পড়ে থেকে আগের জেনারেটর বিকল হয়ে গেছে। এক সপ্তাহ আগে উপজেলা পরিষদ থেকে একটি জেনারেটর দেওয়া হয়েছে। তেল বরাদ্দ না থাকায় সেটাও চালানো যাচ্ছে না। গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটারে মাতৃস্বাস্থ্য সেবা প্রকল্প ও রোগীর কাছ থেকে তেলের ব্যবস্থা করে একটি জেনারেটর চালানো হয়। তবে বহির্বিভাগ ও ওয়ার্ডে বিকল্প বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালে ভর্তি রোগী মৌলভীবাজার এলাকার রফিকুল বলেন, ‘হাসপাতালের বাজে অবস্থা। এখানে বিদ্যুৎ গেলে দুই-তিন ঘণ্টা পরে আইসে। রোগে কাহিল, তার ওপর চিকিৎসা নিবার আসি গরমে আরও কাহিল হছি। এটে ফ্যান ঘুরে না।’

গঙ্গাচড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসিফ ফেরদৌস বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং গঙ্গাচড়া উপজেলায়। এখানে দিনে ৬ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। গরমে রোগীদের কষ্ট হয়।’ তিনি স্বীকার করেন, একটি প্রকল্প থেকে এবং কখনো কখনো রোগীর কাছ থেকে তেলের ব্যবস্থা করে অপারেশন থিয়েটারে জেনারেটর চালু রাখা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ওয়াজেদ আলী আমাদের প্রতিদিনকে বলেন, ‘রংপুরের কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জেনারেটর চালানোর জন্য সরকারিভাবে তেলের বরাদ্দ নেই। তাই জেনারেটর থাকলেও তা আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তা ছাড়া হাসপাতালগুলোতে যাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, সে জন্য পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত