ঢাকা ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাল্যবিয়ের উচ্চ ঝুঁকিতে সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ শিশুরা

বাল্যবিয়ের উচ্চ ঝুঁকিতে সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ শিশুরা

অনেক জেলায় বাল্যবিয়ে কমে আসার প্রবণতা দেখা গেলেও অন্যান্য জায়গায় তা বাড়ছে, যার সবচেয়ে শিকার হচ্ছে অসহায় জনগোষ্ঠীর সদস্যরা। সম্পদশালী পরিবারে শিক্ষিত কন্যাশিশুদের মধ্যে বাল্যবিয়ের হার কমে আসছে। অপরদিকে সুবিধাবঞ্চিত, অশিক্ষিত ও গ্রামীণ কন্যাশিশুদের মধ্যে বাল্যবিয়ের প্রচলন এখনো উচ্চহারে রয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) ও ইউনিসেফ।

গতকাল রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় বাংলাদেশের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাল্যবিয়ে বন্ধে যৌথ বৈশ্বিক কর্মসূচির (জিপিইসিএম) তৃতীয় পর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ইউএনএফপিএ-ইউনিসেফ জানিয়েছে, বাল্যবিয়ে বন্ধে যৌথ বৈশ্বিক এই কর্মসূচি চলবে ২০৩০ সাল পর্যন্ত। এর মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি আইনি নীতিমালা আরো শক্তিশালী করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সংস্থা দুটি জানায়, বাংলাদেশজুড়ে সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করা হবে। এর লক্ষ্য হবে বাল্যবিয়ে নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টায় সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ ও দক্ষতা (রিসোর্স) বৃদ্ধি এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা প্রদান। কর্মসূচির নতুন এই ধাপে বাল্যবিয়েবিরোধী আইন ও নীতিমালা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।

শিশুদের শিক্ষা থেকে ঝরেপড়ার হার হ্রাস করার লক্ষ্যে কাজ করা হবে। সরকারের সামাজিক সুরক্ষার স্কিমগুলো আরো কার্যকর করা ও কমিউনিটির সঙ্গে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক রীতি-নীতি পরিবর্তনে গুরুত্ব দেওয়া হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৫ নম্বর লক্ষ্যে ২০৩০ সাল নাগাদ শিশুবিবাহ নিরসনের আহ্বান জানানো হয়েছে, সেই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই এ সংক্রান্ত প্রচেষ্টা ২২ গুণ বাড়াতে হবে। অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন (রিমি) বলেন, বাংলাদেশে শিশুদের অধিকার রক্ষায় আমাদের যে অঙ্গীকার, তার মূলে রয়েছে শিশুবিবাহ নিরসন। আমরা ইউএনএফপিএ ও ইউনিসেফের সমন্বিত প্রচেষ্টার ভূমিকা স্বীকার করি এবং শিশুবিবাহ নিরসনে গৃহীত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও শিশুবিবাহ নিরোধ আইনের প্রয়োগ নিশ্চিতে ঘনিষ্ঠ ও কার্যকরভাবে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি। রিমি বলেন, শুধু আইনের মাধ্যমে শিশুবিবাহ নিরসন করা যাবে না। সে কারণে এ বিষয়ে মানুষের চিন্তা-ভাবনা পরিবর্তনে কাজ করার উপরেও আমরা গুরুত্ব দেব। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সাল নাগাদ ১৮ বছরের কম বয়সি কন্যাশিশুর বিবাহ পুরোপুরি বন্ধ করার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছেন। এই প্রচেষ্টায় সরকারকে সহায়তার জন্য গ্লোবাল প্রোগ্রামে শিশুবিবাহ নিরসনে গৃহীত জাতীয় কর্মপরিকল্পনার পুরো মাত্রায় বাস্তবায়ন নিশ্চিতের জন্য কাজ করা হবে। সে লক্ষ্যে অনেক খাতের সম্মিলন ঘটিয়ে পরিবর্তন আনতে সক্ষম এবং তথ্য-উপাত্তভিত্তিক নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বাংলাদেশে ইউএনএফপিএর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ক্রিস্টিন ব্লখুস বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বছর মাত্র ২.১ শতাংশ হারে বাল্যবিবাহ কমছে। এর অর্থ দাঁড়ায়, বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ নিরসনের জন্য দুই শতকের বেশি সময় অর্থাৎ ২১৫ বছর লেগে যাবে। তিনি বলেন, কন্যাশিশুদের স্কুলে পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে পারলে তা বেশ কাজে দেবে। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবায় বর্ধিত ও সুপরিকল্পিত বিনিয়োগ এবং কম্প্রিহেন্সিভ সেক্সুয়ালিটি এডুকেশন কিশোরীদের তাদের শরীর ও জীবন সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক ধারণাপ্রসূত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম করে তুলবে, যা তাদের পরিবর্তনের দূত ও ভবিষ্যৎ নেতা হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করে দেবে। বাংলাদেশে ইউনিসেফের ওআইসি রিপ্রেজেন্টেটিভ স্ট্যানলি গুয়্যাভুয়া বলেন, ইউনিসেফ আবারো প্রতিটি শিশুর ক্ষমতায়ন, বিশেষ করে গ্রামীণ কিশোরী ও অল্প বয়সি নারীদের জীবনদক্ষতা তৈরিতে কাজ করার অঙ্গীকার নিয়েই কর্মসূচির নতুন এই পর্যায় শুরু করছে। তিনি বলেন, যেসব জেলায় উচ্চ মাত্রায় বাল্যবিবাহ রয়েছে, সেসব জায়গায় আমরা অন্যান্য অংশীজনদের নিয়ে বাল্যবিবাহের মূল কারণ মোকাবিলার পাশাপাশি এক্ষত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন, এমন সবাইকে যুক্ত করব। সেইসঙ্গে আমরা বিবাহিত ও অবিবাহিত কিশোরীদের সমন্বিত সহায়তা প্রদান করব। কর্মসূচির আগের পর্যায়গুলোতে ইউএনএফপিএ ও ইউনিসেফ যৌথভাবে সরকারকে সহায়তা দিয়ে এসেছে। যাতে ৫৫ লাখ শিশুর কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত