ঢাকা ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোর ৩২ শতাংশ টয়লেট ব্যবহার অনুপযোগী

আইসিডিডিআর,বি তথ্য
রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোর ৩২ শতাংশ টয়লেট ব্যবহার অনুপযোগী

রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোর ৩২ শতাংশ টয়লেটই ব্যবহারের অনুপযোগী। আর ব্যবহার উপযোগী টয়লেটের ৬৭ শতাংশ সবসময় অপরিচ্ছন্ন থাকে। বিপরীতে বেসরকারি হাসপাতালের ৯২ শতাংশ টয়লেট ব্যবহারের উপযুক্ত হলেও এসব হাসপাতালেরও ৪৪ শতাংশ টয়লেট অপরিচ্ছন্ন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)। ঢাকার ১২টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ওপর পরিচালিত গবেষণায় এই তথ্য পেয়েছে আইসিডিডিআর,বি। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় পরিচালিত গবেষণাটি সম্প্রতি প্লাস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। আইসিডিডিআর,বি জানায়, গবেষকরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং ইউনিসেফ ব্যবহৃত মানদ- অনুসারে টয়লেটের কার্যকারিতা সংজ্ঞায়িত করেছেন। দৃশ্যমান মল, তীব্র গন্ধ, মাছি, থুতু, পোকামাকড়, ইঁদুর এবং কঠিন বর্জ্যরে উপস্থিতির ভিত্তিতে পরিচ্ছন্নতার মূল্যায়ন করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোর মাত্র ৬৮ শতাংশ টয়লেট ব্যবহার উপযোগী। তবে এসব টয়লেটের মাত্র ৩৩ শতাংশ পরিচ্ছন্ন। অপরদিকে বেসরকারি হাসপাতালের ৯২ শতাংশ টয়লেট ব্যবহার উপযোগী। এ ক্ষেত্রেও পরিচ্ছন্ন পাওয়া গেছে ৫৬ শতাংশ টয়লেট। এছাড়া টয়লেটের সাপেক্ষে ব্যবহারকারীর অনুপাত বেশি দেখা গেছে হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে। সরকারি হাসপাতালে ২১৪ জন ব্যবহারকারীর বিপরীতে টয়লেট রয়েছে মাত্র একটি। আর বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে একটি টয়লেট ব্যবহার করছেন ৯৪ জন। আইসিডিডিআর,বি বলছে, এই অনুপাত ওয়াটারএইড প্রস্তাবিত মানের তুলনায় অনেক কম। ওয়াটারএইডের নির্ধারিত মান অনুযায়ী, প্রথম ১০০ জনের ক্ষেত্রে প্রতি ২০ থেকে ২৫ রোগী বা পরিচর্যাকারীর জন্য একটি টয়লেট থাকতে হবে। এর উপরে প্রতি ৫০ জনের জন্য থাকতে হবে অতিরিক্ত একটি টয়লেট। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি উভয় হাসপাতালই বাংলাদেশ জাতীয় ওয়াশ (ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন) স্ট্যান্ডার্ড ও বাস্তবায়ন নির্দেশিকা ২০২১ অনুযায়ী অন্তর্বিভাগে প্রতি ছয়টি বেডের বিপরীতে একটি টয়লেটের মানদ- পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে একটি টয়লেটের বিপরীতে ব্যবহারকারী রয়েছেন ১৭ জন। বেসরকারি হাসপাতালে এই সংখ্যা ১৯। ব্যবহারের সুবিধা, সাধারণ ব্যবহার উপযোগিতা এবং পরিচ্ছন্নতার অভাব রয়েছে এসব টয়লেটে। এর বাইরেও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য সুবিধা রয়েছে এক শতাংশেরও কম হাসপাতালে। এছাড়া মাত্র ৩ শতাংশ হাসপাতালে মাসিকের সময় ব্যবহৃত প্যাড এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ময়লা ফেলার ঝুঁড়ি পাওয়া গেছে। আইসিডিডিআর,বি বলছে, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং এর প্রাপ্যতা হাসপাতালগুলোতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, হাসপাতালে সাধারণত রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুগুলো সংক্রমণের শঙ্কা বেশি থাকে। ব্যবহার উপযোগী ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের অপ্রাপ্যতা কলেরা ও টাইফয়েডের মতো রোগের জীবাণু ছড়িয়ে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী বিজ্ঞানী এবং গবেষকদলের প্রধান ডা. মো. নুহু আমিন বলেন, ঢাকার হাসপাতালের প্রকৃত স্যানিটেশন পরিস্থিতি আমরা যা দেখেছি তার চেয়েও খারাপ হতে পারে। কারণ আমাদের গবেষণাটি কোভিড-১৯ মহামারির পরে পরিচালিত হয়েছিল। তখন অনেক হাসপাতাল মূলত কোভিড রোগীদের চিকিৎসা থেকে সাধারণ চিকিৎসাসেবার দিকে মনোনিবেশ করছিল। এর ফলে রোগীর প্রবাহ এবং টয়লেট ব্যবহার কমে যেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে পরিচ্ছন্ন ও কার্যক্ষম টয়লেট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির নির্দেশনা প্রয়োজন। বিশেষ করে লিঙ্গগত প্রয়োজনীয়তা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদা মেটাতে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে। বিশ্বব্যাপী, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বড় শহরের হাসপাতালে টয়লেটের অবস্থার বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহারকারী-টয়লেট অনুপাত অনুমান করা যায় এমন গবেষণার অভাব রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে মৌলিক স্যানিটেশন নিশ্চিত করা দেশগুলোর অন্যতম অগ্রাধিকার। আইসিডিডিআর,বির ধারণা, এই গবেষণাটি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে এই বিষয়ে গবেষণার ঘাটতি পূরণের সহায়ক হবে। এছাড়া, ঢাকার হাসপাতালগুলোতে অপর্যাপ্ত স্যানিটেশনের সমস্যা সমাধানের জন্য জাতীয় নীতি পরিবর্তনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই গবেষণা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত