ঢাকা ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা

হামলার ২৩ বছরেও বিচার শেষ হয়নি

হামলার ২৩ বছরেও বিচার শেষ হয়নি

নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ অফিসে বর্বরোচিত বোমা হামলার বিচার কাজ ২৩ বছরেও শেষ হয়নি। নৃশংস এ বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয় এক যুগ পরে ২০১৩ সালে। তবে ১১ বছরেও শেষ হয়নি সাক্ষ্যগ্রহণের কাজ। দুটি মামলায় ১৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ২২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকলেও চাঞ্চল্যকর এই মামলার বিচার কাজে ধীরগতি হওয়ায় নিহত ও আহতদের স্বজনরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।

জানা গেছে, ২০০১ সালে ১৬ জুন চাষাঢ়া আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বোমা হামলার ঘটনায় ২০ জন নেতাকর্মী নিহত হয়। সেদিন নিহত হয়েছিল শহর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল হাসান বাপ্পী, সহোদর সরকারী তোলারাম কলেজ ছাত্র-ছাত্রী সংসদের জিএস আকতার হোসেন ও সঙ্গীত শিল্পী মোশাররফ হোসেন মশু, সঙ্গীত শিল্পী নজরুল ইসলাম বাচ্চু, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ভাসানী, নারায়ণগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবিএম নজরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সাইদুর রহমান সবুজ মোল্লা, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী পলি বেগম, ছাত্রলীগ কর্মী স্বপন দাস, কবি শওকত হোসেন মোক্তার, পান সিগারেট বিক্রেতা হালিমা বেগম, সিদ্ধিরগঞ্জ ওয়ার্ড মেম্বার রাজিয়া বেগম, যুবলীগ কর্মী নিধু রাম বিশ্বাস, আব্দুস সাত্তার, আবু হানিফ, এনায়েত উল্লাহ স্বপন, আব্দুল আলীম, শুক্কুর আলী, স্বপন রায় ও অজ্ঞাত এক মহিলা। নিহত মহিলার পরিচয় পেতে তেমন কোন চেষ্টা করেনি প্রশাসন। হামলায় শামীম ওসমান সহ অর্ধশতাধিক আহত হয়। তার ব্যক্তিগত সচিব চন্দন শীল, যুবলীগ কর্মী রতন দাস দুই পা হারিয়ে চিরতরে বরণ করেছে পঙ্গুত্ব।

বোমা হামলার ১২ বছর পর ২০১৩ সালের ২ মে ৬ জনকে অভিযুক্ত ও ৩১জনকে অব্যাহতি প্রদান করে চার্জশীটটি দাখিল করে তদন্তকারী সংস্থ আইডি। অভিযুক্ত ৬ জন হলেন নারায়ণগঞ্জে ক্রসফায়ারে নিহত যুল ক্যাডার মমিনউল্লাহ ডেভিডের ভোট ভাই শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান (ইতোমধ্যে অপর এক মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর), জঙ্গী নেতা ওবায়দুল্লাহ রহমান, ভারতের দিল্লি কারাগারে আটক সহোদর আনিসুল মোরসালিন, মুহিবুল মুত্তাকিন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এর ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু। ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন শামীম ওসমান। সেদিন তিনি বলেন, ‘১৬ জুনের ঘটনায় প্রধান ভিক্টিম হিসেবে আমার যে সাক্ষ্য নেয়া হয়েছিল, আমি দেখলাম তার সাথে ঘটনার কোনো মিল নাই। ঘটনার পরে আমি সাক্ষ্যতে যে জবানবন্দী দিয়েছিলাম এখন দেখি বিচার চলাকালে সেই কথা কিছুই নাই। আমাদের বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে। ফলে আমি চাই এ ঘটনায় যারা প্রকৃত দোষী তাদের যেন বিচার হয়। আমি আদালতের কাছে অনুরোধ করেছি যিনি মামলা তদন্ত করেছেন তাকে আদালতে তলব করা হোক। এ মামলায় অনেকের নাম আছে যারা অপরাধী না। যারা প্রকৃত অপরাধী তারা এ মামলা থেকে সেভ হয়ে গেছে। আদালত আমার বক্তব্য শুনে কনভেন্স হয়েছেন। আদালত পরে ওই আদালতের এপিপিকে নির্দেশ দিয়েছেন পিটিশন দেওয়ার জন্য।’বর্তমান মামলাটির বিচার কার্যক্রম প্রসঙ্গে আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মনিরুজ্জামান বুলবুল জানান, অনেক সাক্ষী আগের ঠিকানাতে নাই, কেউ হয়তো মারা গেছে, কেউ বিদেশ চলে গেছে। মূলত সাক্ষী না আসাতে বিলম্ব হচ্ছে। এর মধ্যে অনেকবার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলী হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত