পেকুয়ায় ব্যক্তিমালিকাধীন জমি কেটে বিএডিসি’র খাল খনন

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার, পেকুয়া প্রতিনিধি

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা টইটং ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা নিরসন ও শুষ্ক মৌসুমে সেচকাজে সুবিধার জন্য এলাকার নুনাছড়ি থেকে লেইগ্যাছড়া পর্যন্ত খাল খননের বাজেট দেয় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। ‘চট্টগ্রাম- কক্সবাজার সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় এই খনন কাজের বরাদ্দ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মুসক ট্রেডার্স মৌলভীবাজার। বিএডিসি’র নির্দেশনা অনুযায়ী এই খালের দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটার, প্রস্থ ৩০ ফুট ও নিম্নে ১০ ফুট হওয়ার কথা থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ফসলি জমির উপর দিয়ে জোর করে প্রস্থ ৭০ থেকে ৮০ ফুট খাল খনন করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন জমির মালিকপক্ষ।

অবৈধভাবে কৃষি জমিতে খাল খননের কাজ বন্ধসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা চেয়ে বিএডিসি’র সহকারী পরিচালক কক্সবাজার কাছে লিখিত অভিযোগ দিযেছেন ভুক্তভোগী। জেলা প্রশাসক (ডিসি) কক্সবাজার এবং পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও (ইউএনও) অভিযোগের অনুলিপি দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকেরা।

সরেজমিন দেখা যায়, এবিসি মহাসড়কের টইটং সীমান্ত ব্রিজ থেকে টইটং জুমপাড়া সড়কের নুনাছড়ি থেকে লেইগ্যাছড়া পর্যন্ত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনর (বিএডিসি) অর্থায়নে ২ কিলোমিটার খাল খননের কাজ চলছে। পূর্বের ১০ থেকে ১৮ ফুটের খালটি ৭০ থেকে ৮০ ফুট করতে স্কাভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে খালের দুই পাশে সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দখলীয় কৃষি জমি। ১ কিলোমিটারেরও বেশি খাল খনন সম্পন্ন হয়েছে। খননের মাটি রেখে খালের দুই পাশে তৈরি করা হয়েছে ১০ ফুটের দুইটি রাস্তা। জমির মালিকদের থেকে আসা যেকোনো বাধা রুখতে ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে মোতায়েন রাখা হয়েছে একদল গ্রামপুলিশ।

খাল খননের দৃশ্য দেখতে গিয়ে একাধিক স্থানীয় কৃষক ও জমির মালিকদের সাথে কথা হয়। তারা সেখানকার স্থানীয় প্রভাবশালী চেয়ারম্যানের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। তবে তারা অনেকটা অসহায় হয়ে বলেছেন, খালটি ভরাট হয় যাওয়ায় অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল নেমে এসে আশপাশের নিচু জমি প্লাবিত হয়। এতে ফসল ও চাষাবাদের ক্ষতি হয়। খালটি খনন করা হলে পানি প্রবাহিত হয়ে চলে যাবে। খাল খননে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। খাল খনন করলে বর্ষায় জলবদ্ধতা নিরসন ও শুষ্ক মৌসুমে সেচকাজে সুবিধা হবে। কিন্তু কোনো ধরনের নোটিশ ও জমির ক্ষতিপূরণ না দিয়ে নকশায় খালের যে পরিমাণ জমি রয়েছে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণের জমিতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) খাল খনন করছে। দুই পাশে অতিরিক্ত খনন করা জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন। খননের এসব মাটি খালের দুই পাশে ফসলি জমিতে রেখে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। এতে খাল খননে কৃষকদের লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হচ্ছে জমির মালিকদের।

এদিকে আজ সকাল ১০টায় ফসল ও জমির ক্ষতিপূরণের দাবিতে পেকুয়া চৌমুহনীর একটি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন জমির মালিকরা। সংবাদ সম্মেলনে এলাকাবাসীর পক্ষে থেকে লিখিত বক্তব্যে ভোক্তভোগী আবু সুফিয়ান মোস্তফা কামাল বলেন, বিএডিসি’র নির্দেশনা অমান্য করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নিজের প্রভাব বিস্তার করে আমাদের ফসলি জমি বিনষ্ট করে খাল খননের কাজ করছে। বিএডিসি’র নির্দেশনায় খাস জমিতে উপরে ৩০ ফুট ও নিম্নে ১০ ফুট খাল খননের কথা থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাব বিস্তার করে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের ব্যক্তিমালিকাধীন ফসলি জমির ওপর দিয়ে ৭০ থেকে ৮০ ফুট প্রস্থের খাল খনন করছে। জমির মালিকেরা প্রতিবাদ করলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি দেন তিনি। তার এই অত্যাচার থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান এলাকাবাসী। তারা জমির ক্ষতিপূরণের জন্য বিএডিসির কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এলাকার কোনো কৃষকের জমি ক্ষতিগ্রস্ত করে খাল খনন করা হচ্ছে না। বিএডিসি'র সিডিউল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে অবগত নই। এ সম্পর্কে বিএডিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী জানেন। তবে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার এসে পরিমাপ করে গেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএডিসি’র চকরিয়ার উপসহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক বলেন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) অর্থায়নে ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সেচ উন্নয়ন প্রকল্প’র অধীনে পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নে ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে একটি খাল খননের বাজেট দেয়া হয়েছে। খননের কাজ পায় মুসক ট্রেডার্স মৌলভীবাজার। বিএডিসি’র নির্দেশনা আছে খালের দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটার উপরে ৩০ ফুট ও নিম্নে ১০ ফুট করা হবে, যার বাজেট দেয়া হয়েছে প্রতি কিলোমিটার ৯ লাখ টাকা করে। যদি নির্দেশনা থেকে মাটি বেশি কাটা হয়, তার উপর ভিত্তি করে টাকার পরিমাণও বাড়বে।

ব্যক্তিমালিকাধীন ফসলি জমি কেটে খাল খননের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২ কিলোমিটার খাল খনন করতে ২০০ জনের জমির মাথা পড়বে। ইতিমধ্যে ১ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। খাল খননে কেউ বাধা দেয়নি। কিন্তু এখন এক ব্যক্তি খাল খননে তার ব্যক্তিমালিকাধীন জমি কাটা হচ্ছে- অভিযোগ তুলে কাজে বাধা দিয়েছে। অভিযোগকারীর জমিতে খাল খনন করা হয়েছে কি না- তা জানার জন্য সার্ভেয়ার দিয়ে তার জমি পরিমাপ করা হয়েছে। কিন্তু সার্ভেয়ারের দেয়া তথ্যমতে অভিযোগকারীর জমিতে এখনো খাল খনন করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, টইটং ইউনিয়নে বিএডিসি ব্যক্তিমালিকাধীন কৃষি জমিতে খাল খনন করছে এমন লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এক ভুক্তভোগী। অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সার্ভেয়ার দিয়ে পরিমাপ করার নির্দেশনা দিয়েছি। এ বিষয়ে বিএডিসি ব্যবস্থা নেবেন।