দুই পার্কে বাড়ল প্রবেশ ফি

প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার

বাংলাদেশের দুই পার্কে প্রবেশ ফি বাড়ানো হয়েছে। এতে করে সরকারের রাজস্বও বেড়েছে। এর মধ্যে গত সোমবার থেকে কক্সবাজারের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ফি আদায় কার্যকর করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত বোটানিক্যাল গার্ডেন বা জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের ফি আদায় কার্যকর করা হয় জানিয়েছেন জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের পরিচালক শওকত ইমরান আরাফাত। গত সোমবার মিরপুর উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ২১৫ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান। এই বোটানিক্যাল গার্ডেনে আছে এক হাজারের বেশি প্রজাতির বৃক্ষ এবং বন্যপ্রাণী। অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের এবং শিক্ষকরা তাদের পড়ুয়াদের নিয়ে আসেন সেখানে। একইভাবে প্রকৃতিপ্রেমীদের পছন্দের স্থান বোটানিক্যাল গার্ডেন। কিন্তু এবার এর প্রবেশমূল্য পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সাধারণ প্রকৃতি ও বৃক্ষপ্রেমী মানুষের মতই সেখানে আসেন পড়ুয়ারা। এমনকী সেখানে প্রাতঃভ্রমণের জন্যও আসেন অনেকেই। কিন্তু এবার থেকে সেখানে প্রবেশ করতে হলেই টান পড়বে পকেটে। কারণ, মিরপুরে অবস্থিত এই বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রবেশমূল্য অনেকটাই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যান্ত্রিক শহরের ভেতর এক টুকরো বাগানে গিয়ে স্বস্তি খুঁজতেন মানুষ। আশপাশের বাসিন্দারা শরীরচর্চার জন্য উদ্যানে হাঁটতেন।

এতদিন উদ্যানে প্রবেশের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের ২০ টাকা ফি দিতে হতো। তবে এবার এক ধাক্কায় ৫ গুণ ফি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে পার্কে সকালে হাঁটতে আসা ব্যক্তিদের জন্য এক বছরের জন্য কার্ড ফি ৫০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। তারা প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ১ ঘণ্টা অবস্থান করতে পারবেন। জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের পরিচালক শওকত ইমরান আরাফাত বলেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশমূল্য বাড়ানো বন এবং জীববৈচিত্র্যের পক্ষে ইতিবাচক। সেখানে অযথা কেউ প্রবেশ করবে না। এতে বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা বাড়বে। তিনি বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান এবং ইকো পার্কের প্রবেশমূল্য বাড়ানো হয়েছে। নতুন প্রবেশমূল্য কার্যকর হলে শুরুতে দর্শনার্থী কিছুটা কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সার্বিক বিবেচনায় বন ও বন্যপ্রাণীর জন্য এটা মঙ্গলজনক হবে। তিনি আরো বলেন, প্রবেশ মূল্য বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন এসেছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। আর ফি আদায় করে ঠিকাদার। আমরা শুধু প্রচার প্রচারণা কীভাবে করা যায় সেটা চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, আগে আনুষ্ঠানিকভাবে না থাকলেও নতুন প্রজ্ঞাপনে সকালে হাঁটার জন্য ১ ঘণ্টা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য বাৎসরিক ৫০০ টাকা ফি দিয়ে একটি কার্ড নিতে হবে। এখন থেকে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে প্রবেশের জন্য ১২ বছরের ঊর্ধ্বে সকলকে ১০০ টাকা, ১২ বছরের নিচে প্রতিজন ৫০ টাকা ফি প্রদান করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে আসা ১০০ জনের কম শিক্ষার্থীদের গ্রুপের জন্য ১০০০ টাকা ও ১০০ জনের বেশি হলে ১৫০০ টাকা ফি প্রদান করতে হবে। আজ ৪ জুলাই থেকে তা কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। পরিচালক শওকত ইমরান আরাফাত বলেন, শুধু ফি বাড়ানো হয়নি। রাজস্বও বেড়েছে। তার দেয়া তথ্য মতে, গত অর্থ বছরে ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়। তা বেড়ে চলতি অর্থ বছরে ৩ কোটি ৭ লাখ টাকা হয়েছে।

এক নজরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক :

কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পূর্বপার্শ্বে ডুলাহাজরা রিজার্ভ ফরেষ্টে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য সম্বলিত বনাঞ্চলে সাফারি পার্কটি অবস্থিত।এটি ১৯৮০-৮১ সালে হরিন প্রজনন কেন্দ্র হিসাবে চালু হয়েছিল। বর্তমানে এটি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য নানা রকম বুনো জীব-জন্তুর নির্ভয় আবাস স্থল এবং ইকো-ট্যুরিজম ও গবেষণার পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এর আয়তন ৯০০ হেক্টর। এখানে বুনো জীব জন্তুর অবাধ চলাফেরা পর্যটকগণ উপভোগ করতে পারেন। এই পার্কে তথ্য শিক্ষা কেন্দ্র, প্রাকৃতিক ঐতিহাসিক জাদুঘর, পরিদর্শন টাওয়ার এবং বিশ্রামাগার রয়েছে। কক্সবাজার জেলা সদর হতে উত্তরে পার্কটির দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার এবং চকরিয়া সদর হতে দক্ষিণে ১০ কিলোমিটার। ২০০১ সালের ১৯ জানুয়ারি ২ হাজার ২৫০ একর বনাঞ্চলে গড়ে তোলা হয় দেশের প্রথম এই সাফারি পার্ক। এর আগে ১৯৮০ সালে এটি ছিল হরিণ প্রজননকেন্দ্র। বর্তমানে পার্কের বিভিন্ন বেষ্টনীতে আছে সিংহ, বাঘ, জেব্রা, ওয়াইল্ড বিস্ট, জলহস্তী, ময়ূর, অজগর, কুমির, হাতি, ভালুক, হরিণ, লামচিতা, শকুন, কচ্ছপ, রাজধনেশ, কাকধনেশ, ইগল, সাদা বক, রঙ্গিলা বক, সারস, কাস্তেচরা, মথুরা, নিশিবক, কানিবক, বনগরুসহ ৫২ প্রজাতির ৩৪১ প্রাণী।

গত মঙ্গলবার দুপুরে সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে গত সোমবার থেকে নতুন নিয়মে ফি আদায় কার্যকর করা হয়েছে। পূর্বে প্রাপ্তবয়স্কদের ৫০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের (১৫ বছরের নিচে) টিকিটের মূল্য ২০ টাকা। গত সোমবার থেকে ০১- ১২ বছরের উর্ধ্বে (প্রতিজন) প্রবেশ ফি-১০০ টাকা, ০২-১২ বছরের নিচে (৫-১২ বছর প্রতিজন) প্রবেশ ফি-৫০টাকা, ০৩-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে আগত শিক্ষার্থী গ্রুপ (১০০ জন পর্যন্ত) প্রবেশ ফি-১০০০ টাকা। ০৪-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে আগত শিক্ষার্থী গ্রুপ (১০০ জনের উর্ধ্বে) প্রবেশ ফি-১৫০০ টাকা। ০৫-বিদেশি পর্যটক (প্রতিজন) প্রবেশ ফি-১০০০/- বা এর সমমূল্যের ইউএস ডলার)। সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম আরো বলেন, শুধু ফি বাড়ানো হয়নি। রাজস্বও বেড়েছে। তার দেয়া তথ্য মতে, গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে পার্কটি ইজারা দেয়া হয়েছিল ৮২ লাখ টাকায়। ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে পার্কটি ইজারা দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকায়। এতে করে সরকার দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাজহারুল ইসলাম আরো বলেন, পর্যটক মৌসুমে সাফারি পার্কে দৈনিক গড়ে আড়াই হাজার দর্শনার্থী আসেন। বৃষ্টি, ফি বাড়ানো কারণে গত কয়েকদিন ধরে দর্শনার্থী একটু কম। তিনি বলেন, সাফারি পার্ক ঘোরার জন্য আছে একটি এসি ও দুটি নন-এসি বাস। পার্কে ঢুকতে টিকিট কাটতে হয়। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সাফারি পার্ক খোলা থাকে। সপ্তাহে এক দিন (মঙ্গলবার) সাফারি পার্কটি বন্ধ থাকে।