রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রংপুর ব্যুরো

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ভুলে অস্ত্রোপচারের সময় এক রোগীকে অন্য গ্রুপের রক্ত শরীরে প্রবেশ করানোর ঘটনার ১৮ দিন পর গত বুধবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগী ফাতেমা বেগমের মৃত্যু হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রক্তের গ্রুপ নির্ধারণে ভুল করে অন্য গ্রুপের রক্ত শরীরে প্রবেশ করানোর পরে ঢাকার সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফাতেমা বেগমের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানা গেছে। নিহত ফাতেমা নগরীর কেরানীপাড়ার বাসিন্দা দুলাল মিয়ার স্ত্রী।

মৃত্যু ফাতেমা বেগমের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মারুফ জিয়াম গত বুধবার রাতে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, জরায়ুর মুখে অপারেশনের জন্য গত ২১ জুন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি হন ফাতেমা। ২২ জুন তার রক্ত পরীক্ষা করতে হাসপাতালে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে স্যাম্পল পাঠানো হয়। সেখানে তার রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ করা হয় এ পজেটিভ। অপারেশনের পর রক্ত লাগবে জেনে ‘এ’ পজেটিভ ডোনার থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। ওইদিন দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সফলভাবে ফাতেমা বেগমের অপারেশন সম্পন্ন করা হয় এবং তার শরীরে এ পজেটিভ রক্ত প্রবেশ করানো হয়। এর ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে ফাতেমা বেগমের ক্যাথেটার দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। এ খবর পেয়ে চিকিৎসকরা এসে জরায়ুর মুখে আবার অপারেশনের কথা বলে। এজন্য আবার ফাতেমা বেগমের রক্ত পরীক্ষার জন্য হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে পাঠানো হয়। এবার তার রক্তের গ্রুপ ‘ও’ পজেটিভ দেখা যায়। ভুল রক্ত দেয়ার জন্য ফাতেমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে জানা যায়। তাৎক্ষণিকভাবে ফাতেমাকে আইসিইউতে নিয়ে ২৯ জুন পর্যন্ত চিকিৎসা দেয়া হয়। হাসপাতালের আইসিইউ থেকে জানানো হয় ফাতেমা বেগমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিতে হবে।

বিষয়টি সমঝোতা করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার জন্য ১ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ফাতেমার পরিবারকে। এ সময় ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসার সব ব্যয়ভার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বহন করার দাবি জানায় ফাতেমার পরিবার। কর্তৃপক্ষ এতে রাজি না হওয়ায় ফাতেমা বেগমের মেয়ে সাহারা খাতুন হাসপাতাল পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এবং ফাতেমা বেগমকে ঢাকার সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে ভর্তি করে। এখানে দিন দিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। গত বুধবার ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজের পরিচালক ডাক্তার ইউনুস আলী সাংবাদিকদের জানান, সাধারণত কোনো রোগীর শরীরে ভুল রক্ত গেলে তার কয়েক মিনিটের মধ্যেই রোগী রিয়্যাক্ট করে। চুলকানি অথবা অস্থিরতা দেখা যায়। ফাতেমা বেগমের ক্ষেত্রে তা ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা পর বোঝা গেছে। হাসপাতালে কখনো এমনটি ঘটে না। ফাতেমা বেগমের মেয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৩ জুলাই ৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাক্তার কামরুজ্জামানকে আহ্বায়ক, ইউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাক্তার শহিদুল ইসলাম সুগম, মেট্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার আনিসুজ্জামান, গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার সফুরা খাতুন, আইসিইউ বিভাগের ডাক্তার জামাল উদ্দিন মিন্টু, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডাক্তার মজিদুল ইসলাম ও উপ পরিচালক ডাক্তার আখতারুজ্জামান সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এই কমিটিকে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেয়া হলে রোগী ও তাদের স্বজনরা ঢাকায় অবস্থান করায় কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি। এরপর তদন্ত কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবার তিন দিনের সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার কমিটি তদন্ত রিপোর্ট দিলে ঢাকার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।