ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  বরিশাল ব্যুরো

বরিশালের হিজলা উপজেলার বড়জালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন হাওলাদারের বিরুদ্ধে ৪৬ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছে ৮ ইউপি সদস্য। এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও ইউএনও বরাবর গত বুধবার অভিযোগ দিয়েছে ইউপি সদস্যরা। গতকাল শুক্রবার অভিযোগের তথ্য নিশ্চিত করেছেন হিজলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহাঙ্গীর হোসেন। দেওয়া অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সরকারিভাবে জেলেদের দেওয়া ৪ লাখ ১০ হাজার টাকার চাল আত্মসাতের অভিযোগ তোলা হয়েছে। এছাড়া চাল পরিবহন বাবদ জেলেদের কাছ থেকে ১০ লাখ ৪৮ হাজার ২শ টাকা আদায় করে আত্মসাত করেছে বলা হয়েছে। ইউনিয়নের প্রতিটি পরিবারে হোল্ডিং প্লেট থাকার পরও নতুন প্লেট বসানোর কথা বলে ২শ টাকা করে মোট ১৪ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন।

এছাড়া আয়রণ ব্রিজের ৬ লাখ টাকার বিভিন্ন মালামাল গোপনে বিক্রি ও ১২ লাখ টাকার ইট সড়ক থেকে তুলে ব্যক্তিগত ঠিকাদারি কাজে ব্যবহারের অভিযোগ করা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন। অভিযুক্ত চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন হাওলাদার হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। অভিযোগকারী বড়জালিয়া ইউপি সদস্যরা হলেন, ইলিয়াস হোসাইন, ঝন্টু বেপারী, মো. আলী, মোশারফ হোসেন তালুকদার, হুমায়ন কবির, ঝন্টু হাওলাদার, জুয়েল রাড়ী এবং নাছরিন বেগম। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ইউনিয়নের মোট ৩ হাজার ৪৯৪ জন জেলের অনুকূলে ২ হাজার ৬৪৫ জেলের নামে ২১১.৬০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ইলিশ আহরণ থেকে বিরত রাখতে ১৯.০২.২৪ তারিখে ইউএনও স্বাক্ষরিত বরাদ্দে প্রতি জেলে ৪০ কেজি করে ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসে ৮০ কেজি চাল পাওয়ার কথা ছিলো। এরপর বরাদ্দকৃত জেলেদের নামের তালিকা না করেই চাল বিতরণ করেন এবং ২ হাজার ৬৪৫ জন জেলের নামে ভূয়া তালিকা তৈরি করেন। সেই তালিকায় মৃত ব্যক্তিকেও জীবিত দেখিয়ে চাল বিতরণ করা হয়েছে বলে উপস্থাপন করেছেন। এছাড়া ভুয়া তালিকায় ১০৪ জেলের নাম দিলেও তাদের চাল না দিয়ে ৮.৩২০ মেট্রিকটন চাল আত্মসাত করেন এনায়েত। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। চাল পরিবহণ বাবদ সরকারিভাবে অর্থ পাওয়ার পরও মোট ৩ হাজার ৪৯৪ জেলের প্রত্যেকের কাছ থেকে ট্যাক্স বাবদ ২০০ ও রশিদ ছাড়া ১০০ টাকা করে মোট ৩০০ টাকা আদায় করে। যা টাকার অংকে ১০ লাখ ৪৮ হাজার ২০০ টাকা। এই টাকার কোন হিসেব না দিয়ে তিনি আত্মসাৎ করেছেন। লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রতিটি খানা বা পরিবারে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আগে থেকেই দেওয়া হোল্ডিং প্লেট বিদ্যমান থাকলেও ৭ হাজার পরিবারে নতুন হোল্ডিং প্লেট স্থাপন করেছেন। এ জন্য প্রতি হোল্ডিং প্লেট বাবদ ২০০ টাকা করে মোট ১৪ লাখ টাকা পরিষদে জমা না দিয়ে শতভাগ আত্মসাত করেছেন চেয়ারম্যান এনায়েত। ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে আগের নির্বাচিত পরিষদের রেখে যাওয়া আয়রণ ব্রিজের রেলপাত, ভীম, এঙ্গল, জয়েন্ট ও রড গোপনে বিক্রি করে ৬ লাখ টাকা আত্মসাত করেছে। এছাড়া বাউশিয়ার সড়ক থেকে ১ লাখ ও বাহেরচর কোরবান বাড়ি সংলগ্ন রাস্তা থেকে ৫০ হাজার ইট ইউনিয়ন পরিষদে এনে তার বাড়ি ও ব্যক্তিগত ঠিকাদারী কাজে ব্যবহার করেছেন। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১২ লাখ টাকা। বড়জালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অভিযুক্ত এনায়েত হোসেন হাওলাদার সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইউএনও স্যার বিষয়টি তদন্ত করছেন। তদন্তেই সত্য-মিথ্যা প্রমাণিত হবে। হিজলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।