ঢাকা ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি

২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) অধিকতর শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে খসড়া সংশোধনী প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের ১৬৯ জন সংসদ সদস্য সম্মত থাকলেও আইনটি পাস করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশোধিত আইন পাসের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। গতকাল সোমবার রাজধানীর বিএমএ ভবনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুয়র (ডরপ) এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের আগেই তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাধারণ সম্পাদক ডা. এহতেশামুল হক বলেন, বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটছে। আর এই অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার। তাই এই অকাল মৃত্যু ঠেকাতে অবিলম্বে বিদ্যমান আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। মানুষের স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্য খাতের আলোচনা আসলে কিউবার কথা উঠে আসছে। আমেরিকা থেকেও মানুষ স্বল্প খরচে ভালো চিকিৎসার জন্য কিউবায় যায়। এর কৃতিত্ব কিউবার রাষ্ট্রনায়ক ফিদেল ক্যাস্ট্রোর। তিনি বাজেট ও আয়ের চিন্তা না করে সেবার চিন্তা করেছেন।

অনুষ্ঠানে সিটিএফকের লীড পলিসি এডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সিগারেটের মার্কেটিংকে আমরা ডেথ মার্কেটিং বলি। এটা আসলে মৃত্যুর ব্যবসা। এই ব্যবসায় ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক ছাড়া কেউ লাভবান হয় না। ই-সিগারেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিগারেট কোম্পানিগুলো নানা সেবার নামে তারা এখন টার কম, নিকোটিন কম বলে নতুন আঙিকে ব্যবসা করছে। অথচ তারা বলতে পারছে না যে এটা ক্ষতিকর নয়। কম আর বেশি বিষয় না। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম সোহেল বলেন, তামাকের পক্ষে কোনো যুক্তি নেই। জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি এর ক্ষতির ভয়াবহতা বহুমুখী। তামাক থেকে ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকার রাজস্ব আসে, অথচ তামাকজনিত রোগের পেছনে সরকারের বার্ষিক ব্যয় ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।

এখানেও ক্ষতির পরিমাণই বেশি। এ সকল দিকগুলোকে নীতিনির্ধারক ও সাধারণ মানুষের সামনে বেশি বেশি তুলে ধরতে হবে। সমাপনী বক্তব্যে সেমিনারে ডরপের প্রধান নির্বাহী এএইচএম নোমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে আমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয় হতে হবে। এ লক্ষ্যে আইন জরুরি। খসড়াও তৈরি তার পরেও এটা এখনও কেন বাস্তবায়ন হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। প্রাশাসনে থাকা দায়িত্বরতরা কেন এটি করছেন না জানি না। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বীর সঞ্চালনায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- ডরপ-এর উপ-নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান। তিনি এ সংক্রান্ত ক্ষতির দিক ও পরামর্শ তুলে ধরেন। বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের আর্থিক ও যেসব স্বাস্থ্য ক্ষতি হয়ে থাকে : ১. দেশের ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ বা প্রাপ্তবয়স্ক ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহার করে। ২. পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ। ৩. তামাকের ব্যবহারে পঙ্গুত্ব বরণ করে ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ। ৪. বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ৬টির সঙ্গেই তামাক জড়িত। ৫. বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী তামাক ব্যবহারকারীদের তামাকজনিত রোগ যেমন ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশের বেশি। এছাড়া তামাকজনিত অন্যান্য ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ১০৯ শতাংশের বেশি। ৬. টোব্যাকো অ্যাটলাসের ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী তামাক ব্যবহারের কারণে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে।

অর্থাৎ প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ মারা যায়। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের তথ্যে বছরে মোট মৃত্যুর ১৯ শতাংশ তামাকের কারণে হয়ে থাকে। ৭. ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ব্যায়ের পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, অথচ একই সময়ে (২০১৭-১৮) তামাকখাত থেকে সম্পূরক শুল্ক ও মূসক বাবদ অর্জিত রাজস্ব আয়ের পরিমাণ মাত্র ২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। নীট ব্যায় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।

অনুষ্ঠানে ৬টি দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো- ১. ধূমপানের নির্ধারিত এলাকা বিলুপ্ত করা। ২. বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন বন্ধ করা। ৩. তামাক কোম্পানির সিএসআর বন্ধ করা। ৪. খুচরা শলাকা ও তামাকদ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করা। ৫. ই সিগারট বা এইচটিপি নিষিদ্ধ করা। ৬. প্যাকেটে-কৌটায় সচিত্র সতর্কবার্তার আকার ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ করা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত