ঐতিহ্য হারিয়েছে তাজিয়া মিছিল

* কমেছে তাজিয়ার সংখ্যা * হয় না রক্তাক্ত জখমের খেলা

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি 

একযুগ পূর্বেও সপ্তাহজুড়ে শোনা যেত ঢাক-ঢোলের ঢাক গুড় গুড় শব্দ। পথচারী ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হতো তাজিয়া ও অন্যান্য উপকরণ তৈরির অর্থ। বিভিন্ন এলাকায় চলতো শিন্নি রান্নার আয়োজন। বিভিন্ন এলাকা থেকে বের হতো তাজিয়া মিছিল। যুবকরা হায় হোসেন, হায় হোসেন উচ্চারণ করে নিজেদের গায়ে চাবুক আর ছুরির আঘাত করে রক্তাক্ত করতো। মুখে কেরোসিন নিয়ে শূন্যে ছুড়ে আগুন ধরাতো। বিভিন্ন ধরনের খেলারও আয়োজন করা হতো। তবে এখন আর সেসব খেলা হয়না। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যের সেই তাজিয়া মিছিল। আজ ১৭ জুলাই পবিত্র আশুরার দিন। নারায়ণগঞ্জেও বের হবে তাজিয়া মিছিল। তবে গেলবারের তুলনায় এবারো সংখ্যা কমে যাবে বলে জানিয়েছেন এ মিছিল বের করার আয়োজকরা। তাদের আশঙ্কা দিন দিন এ ঐতিহ্যটুকু হারিয়ে যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতবর্ষ উত্তর প্রদেশে শিয়া ও সুুন্নি জামায়াতের তৈমূর লং নামে এক বাদশা ৬০০ বছর আগে থেকে তাজিয়া মিছিল শুরু করে। এর মূল উদ্দ্যেশ ছিল ইতিহাসকে জানানো আর অমুসলিমকে মুসলিম রূপান্তর করা। তারই ধারাবাহিকতায় ১৭৭ বছর আগে বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল তাজিয়া মিছিল। বাংলাদেশে এ উৎসব করে মূলত পালন করে থাকে পাকিস্তানি আটকেপড়া অবাঙালিরা ও শিয়া মতাবলম্বীর। কিন্তু ধীরে ধীরে সে উৎসব সবার জন্য পরিণত হয়। নারায়ণগঞ্জে প্রায় অর্ধশত বছর আগে থেকেই তাজিয়া মিছিল বের হয়। তখন শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকাতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হতো। কে কার চেয়ে বেশি বড় পরিসরে আয়োজন করবে তা নিয়ে চলতো রীতিমতো প্রতিযোগিতা। আশুরার কয়েকদিন আগে থেকেই এলাকাতে প্রচারণা চলতো। সঙ্গে চলতো ঢাক গুড় গুড় শব্দে ঢোল পেটানো। এটা একটা ঐতিহ্য ছিল। আশুরার দিন দুপুরের পর থেকেই বের হতো তাজিয়া। তাজিয়া মিছিলের সামনে পেছনে থাকে ঢাকঢোল আর বাদ্য বাজনা। শিয়া অনুসারী যুবকেরা হাতে তলোয়ার, বড় ছুরি নিয়ে গায়ে রক্তাক্ত করে কারবালা প্রান্তরের সেই ঘটনার ঘটনা স্মরণ করতো। মুখে কেরোসিন নিয়ে শূন্যে ছুড়ে আগুন ধরাতো। যদিও বর্তমানে প্রশাসনের বাধায় এসব খেলা আর দেখা যায় না।

শহরের টানবাজার র‌্যালি বাগান এলাকার আয়োজকরা জানান, তাদের পূর্বপুরুষ থেকে ইমাম হাসান হোসেনের কবরের মতো আকৃতি বানিয়ে ইতিহাস স্মরণ করে। এখন শুধু তাজিয়ার অগ্রভাগে ঢোল নিয়ে থাকে যুবকরা। পূর্বে তারা ছুরি, লাঠি দিয়ে নানা ধরনের খেলা খেলতো। এখন পুলিশ প্রশাসনের বাধায় আগের মতো খেলাধুলা হয় না। দিন দিন সেই উৎসবে ভাটা পড়ে গেছে। ম্লান হয়ে গেছে সেই ঐতিহ্য। কমেছে তাজিয়ার সংখ্যাও।