ঢাকা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রংপুর অঞ্চলের রোপা আমন ধান রোপণে ব্যস্ত কৃষক

রংপুর অঞ্চলের রোপা আমন ধান রোপণে ব্যস্ত কৃষক

রংপুর অঞ্চলের রোপা আমন ধান চাষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে কৃষক। জমি তৈরি, চাষাবাদ আর জমিতে চারা রোপণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি আমন মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ৬ লাখ ৪০ হাজার ৪০৪ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান রংপরের ৮ উপজেলায় চলতি বছর ১লাখ ৬৬ হাজার ৯২৩ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করা হবে।

তিনি বলেন, গত সোমবার পর্যন্ত শতকরা ৫২ শতাংশ জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জেলায় ১৬ হাজার কৃষককে কৃষি প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। গত সোমবার রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বুজরুক হরিপুর গ্রামাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, ফসলের প্রান্তর জুড়ে শ্যালো মেশিনের শব্দ। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে স্থাপন করা হয়েছে শ্যালো মেশিন। আমনের চারা রোপনের সময় গড়িয়েছে। অবশেষে শ্যালো মেশিন স্থাপন করেই আমন রোপন শুরু করেছেন কৃষকরা। আবার কেউ কেউ রোপনকৃত আমনের চারা রক্ষায় জমিতে নিয়মিত সেচ দিচ্ছেন। রংপুর অঞ্চলে বন্যার পানি নেমে গেছে। যার কারণে উচুঁ নিচু সব শ্রেণির জমিতে নতুন রোপা আমন ধানের চারা রোপণের ধুম পড়ে গেছে। রোপা আমন ধান চাষ বৃষ্টি পানির নির্ভর ফসল।

প্রকৃতি এ বছর প্রাণভরে বৃষ্টি দিয়েছে প্রচুর। তার পরেও প্রকৃতি নির্ভর এই ধানচাষে যদি খরার সময় সেচ দেয়া যায়। তাহলে শতকরা ৬০ পার্সেন্ট বেশি ফলন হয় থাকে। সদর এলাকার কৃষক মনিরুজ্জামান জানান, প্রায় সপ্তাহ দুয়েক আগে বৃষ্টির পানি পেয়ে জমি চাষ করেছিলাম। কিন্তু মাঝে কয়েক দিন প্রচন্ড খরতাপে চাষকৃত জমি শুকিয়ে যায়। গভীর নলকূপ থেকে সেচ পানি নিয়ে রোপণ করারও উপায় নেই। আবার চারার বয়স হয়ে যাচ্ছিল, মহা চিন্তায় ছিলাম। অবশেষে গত কয়েকদিন আগে পানি পেয়ে জমি রোপণ করেছি। তিন বিঘা জমি রোপণ করেছি। উপজেলা জুড়েই চলছে জমি রোপন। এজন্য শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে, বেড়েছে কদর। তিন বিঘা জমি রোপন করতে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

দিন রাত সমানতালে চলছে জমি চাষ ও রোপণের কাজ। একসঙ্গে জমি রোপণের কারণে শ্রমিক সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বিঘায় প্রকার ভেদে ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত রোপণের খরচ। শ্রমিক মোস্তফা জানান, আমরা এক সাথে ৮-১০ জন শ্রমিক জমি রোপণ করছি। এক বিঘা জমি রোপণের জন্য ১৬০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত ৪-৫ বিঘা জমি রোপণ করা হচ্ছে। আবার কোনো দিন ৬ বিঘাও রোপণ করা যায়। কৃষকরা জানান, সময়মতো বৃষ্টির পানি না পেলে জমি রোপণ করা যেত না। কারণ সেচ পানিতে রোপা আমন ধান রোপণ করা অসম্ভব। আবার গভীর নলকূপ অপারেটরদের রয়েছে দৌরাত্ম্য। রহমতের বৃষ্টির পানিতে জমি চাষ করা গেলেও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে অতিরিক্ত দামে কিনতে হয়েছে সার কীটনাশক। এক বিঘা জমি রোপণ করতেই নিম্নে ৫ হাজার টাকা থেকে ঊর্ধ্বে ৬ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। শ্রমিক সংকট ব্যাপক। রোপা আমন ধান রোপণে কৃষকদের মাঝে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কারণ ধান কাটা মাড়াইয়ের পর আলু রোপণ হবে। এজন্য কে কার আগে রোপণ করতে পারে। আগে রোপণ করতে পারলে আগে কাটা পড়বে। আর হয়তো ১০-১২ দিনের মধ্যে জমি রোপণ শেষের দিকে চলে আসবে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল জানান, চলতি আমন মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় ৬ লাখ ২০ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬ লাখ ১২ হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়েছে। যা শতকরা হিসেবে ৯৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত