চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টিপাতে নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা

দুর্ভোগ বাড়ছে

প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টিপাতে নগরজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার কারণে অল্প সময়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এদিকে এমন বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসের শঙ্কা করছেন অনেকে। নগরের লালখান বাজার টাঙ্কির পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা বাসা ছেড়ে কিছু বাসিন্দা লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে চলে এসেছে বলে জানা গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রমতে জানা যায়, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করেছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস ১৪৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি হওয়ায় ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় পাহাড় ধসের সতর্কবার্তা থাকলেও পাহাড় ছেড়ে কেউ যায়নি আশ্রয়কেন্দ্রে। একইসাথে উত্তর বঙ্গোপসাগর, উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে।

কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। এদিকে টানা বৃষ্টিতে নগরের কিছু কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের কারণে দ্রুত নগরের পানি নামতে না পারায় সকালেই জলাবদ্ধ চট্টগ্রাম দেখতে পান নগরবাসী। বাড়তে থাকে দুর্ভোগ। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আলী আকবর জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটে জোয়ার শুরু হয়েছে। ভাটা শুরু হয় ১০টা ৫১ মিনিটে। আবার জোয়ার আসবে বিকাল ৫টা ৪১ মিনিটে। চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চলের মানুষ ভারী বৃষ্টিপাতের সময় জোয়ারে শঙ্কিত থাকে। এ সময় পানি নামতে না পেরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানিবন্দি হয়ে থাকতে হয়। বিশেষ করে পুরোনো আমলের বাড়ি, ভিটা, দোকান, গুদামগুলোতে পানি ঢুকে দুর্ভোগ বাড়ায়। তবে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ ছিল না। তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকসহ কর্মস্থলগামী এবং খেটে খাওয়া মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। বেশি ভাড়ায় রিকশা ও ভ্যানে চড়ে অনেককে পানি পার হতে দেখা গেছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়ে রাস্তাঘাটে পানি জমে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারী ও যাত্রীরা। সকালে নগরের জিইসি মোড়, প্রবর্তক মোড়, পাঁচলাইশ, চকবাজার, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, কাপাসগোলা, শুলকবহর, আগ্রাবাদ, হালিশহরসহ বেশ কিছু নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সড়কে হাঁটুসমান পানি জমে যায়। এতে গাড়ি চলাচলে বাধাগ্রস্ত হতে দেখা যায়। অনেক বড় সড়কে স্বাভাবিক গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিছু গাড়ি আটকে পড়ে পানিতে। দুর্ভোগে পড়েন যাত্রী ও পথচারীরা। বহদ্দারহাট মোড়ে দুর্ভোগে পড়া এনজিও কর্মী রিফাত আলম বলেন, সময় নিয়ে বের হয়েছি অফিসে যাওয়ার জন্য। কিন্তু রাস্তাঘাটে পানি জমে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বেশ দুষ্কর হয়ে পড়েছে। গাড়ি তো তেমন পাচ্ছি না আবার যাদের পাচ্ছি তারা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছে। ভীষণ বেকায়দায় পড়ে গেছি। অপরদিকে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় নগরের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির তথ্যমতে, নগরীর ২৬টি পাহাড়ে ৬ হাজার ৫৫৮টি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি আছে আকবরশাহ থানাধীন ১, ২ ও ৩ নম্বর ঝিলসংলগ্ন পাহাড়গুলোতে। পাহাড় ধসের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই পরিবারগুলো সেখানে বসবাস করছে।