সড়কে নেই ট্রাফিক ব্যক্তি উদ্যোগে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা

আতঙ্ক ও জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন পুলিশ সদস্যরা

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পরদিনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি সব অফিস-আদালত খোলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে অফিসগামী যানবাহন সড়কে বের হতে শুরু করে। তবে সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কোনো পুলিশ সদস্য ছিলেন না। এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। যানজটের পাশাপাশি ঘটেছে দুর্ঘটনাও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত গত কয়েকদিনের বিক্ষোভের সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। সরকার পতনের পুলিশের ওপর একের পর এক হামলার খবর আসছে। আতঙ্ক ও জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন পুলিশ সদস্যরা। সোমবার সরকার পতনের পর পুলিশ সদর দপ্তরেও অগ্নিসংযোগ দেয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় জীবনের শঙ্কায় কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ পুলিশ অধস্তন কর্মচারী সংগঠনের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞাপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর থেকে সারা দেশে পুলিশ সদস্যদের ওপর অতর্কিত হামলা, পুলিশ সদস্য খুনসহ স্থাপনা ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সারা দেশে সাড়ে চারশ’ থানা আক্রমণের শিকার হয়েছে। অগণিত পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে; যা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সামিল। এহেন পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ পুলিশের অধস্থন কর্মচারী সংগঠন আজ ৬ আগস্ট হতে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করছে। সকাল থেকে রাজধানীর বিজয় সরণি, মহাখালী, বনানী, কারওয়ান বাজার ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা, সড়কে স্বাভাবিক সময়ের মতো সড়কে যানবাহন চলাচল করছে। কোথাও কোথাও তীব্র যানজট দেখা গেলেও অধিকাংশ সড়কই ফাঁকা। মূলত ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় রাস্তার মোড়গুলোতে যানবাহনে জটলা বাঁধতে দেখা যায়। তবে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ব্যক্তি উদ্যোগে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতেও দেখা গেছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিজয় সরণি পয়েন্টে স্থানীয় ছাত্র-জনতাদের ট্রাফিক পুলিশ ভূমিকায় কাজ করতে দেখা যায়। তারা মোড়ের চারপাশে অবস্থান নিয়ে সড়ক নিয়ন্ত্রণ করছেন। জানতে চাইলে খোরশেদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় নেই। গাড়িগুলো এলোমেলো যাওয়ায় যানজট হচ্ছে। আমরা মনে করি দেশ আমাদের। দেশের সমস্যা সমাধানে আমাদেরই এগিয়ে আসা দরকার।

রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরেও দেখা গেছে এমন চিত্র। সেখানে লাঠি হাতে দুই মিনিট পর পর বিভিন্ন পাশের গাড়ি ছাড়ছেন বেশ কয়েকজন তরুণ। বাইক চালকদের মাথায় হেলমেট না থাকলে অনুরোধ করছেন যেন, পরবর্তী সময়ে হেলমেট ব্যবহার করেন। রিকশাচালকদের সারিবদ্ধভাবে একপাশে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা পলিটিকাল ইনস্টিটিউটের ছাত্র রেজাউনুল রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল ১১টা থেকে আমরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করি। আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী রয়েছেন। আমাদের অভিজ্ঞতা কম এ বিষয়ে। তবু নিজেদের মধ্যে এ ও বি পদ্ধতি দাঁড় করিয়ে সড়ক নিয়ন্ত্রণ করেছি।

ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক্যালের আরেক শিক্ষার্থী ইসরাত বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, সব কিছু নিয়ন্ত্রণের। তবে দ্রুতই যেন সব কিছু স্বাভাবিক হয়। ট্রাফিক পুলিশ তাদের কাজে নামেন। তারা আগের চাইতেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন, এমনটাই প্রত্যাশা। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মিরপুর-১০ গোল চত্বরে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট না করারও আহ্বান জানানো হচ্ছে। সেইসঙ্গে পাড়া মহল্লায় কেউ যেন আক্রমণের শিকার না হন, সে বিষয়ে সবাইকে কাজ করারও আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। এদিকে এ বিষয়ে জানতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমানসহ ট্রাফিক বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির এক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, আমাদের সিনিয়র কর্মকর্তাসহ বেশিরভাগ সদস্যরা শেখ হাসিনা সরকারের অনুগত ছিল।

তারা সরকারের চাহিদামতো কাজ করছ। দুর্নীতি করছে। যার ফলে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হলে দায়িত্ব পালনে জীবনের শঙ্কা রয়েছে।