ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আতঙ্কে ফাঁকা সচিবালয়, পদোন্নতি বঞ্চিতদের সভায় ক্ষোভ

আতঙ্কে ফাঁকা সচিবালয়, পদোন্নতি বঞ্চিতদের সভায় ক্ষোভ

দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সকালে রুটিন মাফিক অফিস করছিলেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। সচিবালয়ের বিভিন্ন স্থানে কর্মচারীদের জটলা করে আলোচনা করতে দেখা যায়। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল সরকারের পতনের। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাড়ে এগারোটার দিকে গুজব ওঠে সচিবালয়ে হামলা হতে পারে। সেই গুজবে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী সচিবালয় ছেড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হোন। ভয়ে-আতঙ্কে সচিবালয় এক ঘণ্টার মধ্যে ফাঁকা হয়ে যায়। কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ভয়ে ও আতঙ্কে কর্মসংস্থান ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন পুলিশ নিরাপত্তা দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এ কারণে অফিস ছুটি দিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই সবাই কর্মসংস্থান ছেড়ে যাচ্ছেন। তবে কে ছুটি দিয়েছেন তার উত্তর কেউ দিতে পারেননি।

সচিবালয়ে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নিরাপত্তার জন্য সচিবালয়ের এক নম্বর গেট ছাড়া বাকি সবগুলো গেট বন্ধ ছিল। দুপুর ১২টা বাজার কিছু আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থল থেকে বের হতে শুরু করেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের হয়ে যাওয়ার লম্বা লাইন বাঁধে সচিবালয়ের প্রধান ফটকে। কর্মকর্তাদের একটি অংশ গাড়ি ছাড়াই পায়ে হেঁটে সচিবালয় ছাড়েন। আর একটা অংশ তাদের গাড়িতে করে সচিবালয় থেকে বের হয়ে যান। প্রতিটি কক্ষে তালা ঝুলছে। অধিকাংশ কক্ষের জানালা বন্ধ ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসনের পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা গতকাল সচিবালয়ে মিটিং করেছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের লাইব্রেরি কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখতে গিয়ে অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করেন।

উপস্থিতদের মধ্যে প্রশাসনের ৮৪ থেকে ১৮ ব্যাচ পর্যন্ত কর্মকর্তারা ছিলেন। তাদের অনেকেই কর্মজীবনে একের অধিক পদোন্নতি পাননি। অনেকে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে অবসরে গিয়েছেন। আবার অনেকে উপ-সচিব কিংবা যুগ্ম সচিব পর্যন্ত অবহেলিত থেকে কর্মজীবন শেষ করেছেন। বঞ্চিতদের মধ্যে এক থেকে দুই বছর চাকরির মেয়াদকাল আছে এমন কর্মকর্তাও ছিলেন।

সচিবালয়ে থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী মিজানুর রহমান বলেন, সবাই অফিস ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তাই আমরাও চলে যাচ্ছি। শুনেছি, আমাদের কেউ নিরাপত্তা দিতে পারবে না। এ পরিস্থিতিতে অফিস করা সম্ভব নয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা শামীমা বলেন, দুই বছর ধরে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে কাজ করছি। অন্য দিনের মতোও নির্ধারিত সময়ে অফিসে এসেছি। অফিসে আসার পর উপর থেকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে। তাই বাসায় চলে যাচ্ছি। কে ছুটি দিয়েছেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা শুনেছি উপর থেকে বলছে সচিবালয় খালি করে দিতে। কেউ নিরাপত্তা দিতে চাচ্ছে না। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। থানা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সচিবালয়ে হামলা হতে পারে, মানুষের মধ্যে এমন আতঙ্ক রয়েছে। এ কারণে সচিবালয় থেকে সবাই বাসায় চলে গেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত