রাজধানীর বেশিরভাগ থানা লন্ডভন্ড সুরক্ষায় কোনো নির্দেশনা নেই

প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের বেশ কয়েকটি থানায় হামলা করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। ভাঙচুর-লুটপাট ছাড়াও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে কয়েকটি থানা। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশ স্থাপনা ঘিরে হামলা চালানো শুরু করলেও পুলিশ পাল্টা গুলি ছোড়ে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা আত্মগোপনে চলে গেলে বাহিনীটির চেইন অব কমান্ড ভেঙে যায়। উপায় না দেখে বিভিন্ন থানা ও স্থাপনার ফোর্সও চলে যায় আত্মগোপনে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের ব্যারাকগুলোতে পুলিশ সদস্যরা থাকলেও তারা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে মঙ্গলবার রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব থানাই ছিল পুলিশশূন্য। ঢাকার ৫৩টি থানা এখন অরক্ষিত থাকলেও সেগুলো সুরক্ষায় এখন পর্যন্ত পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বা ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

পুলিশ সদস্যরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা কোনোভাবেই থানার সামনে যেতে পারছেন না। এ অবস্থায় থানাগুলো রক্ষা হবে, কীভাবে এমন প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। জানা গেছে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরই ঢাকার থানাগুলোতে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। গত সোমবার দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হামলা চালায় তারা। ঢাকায় প্রথমে হামলা করা হয় দক্ষিণখান থানায়। এরপর বিকালে যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও থানা, সবুজবাগ থানা, মতিঝিল থানা, কামরাঙ্গীরচর থানা, মোহাম্মদপুর থানা, আদাবর থানা ছাড়াও অর্ধেকের বেশি থানায় হামলা এবং ভাঙচুর করা হয়েছে। পরের বিক্ষুব্ধ জনতা লুটপাটের পর আগুনে জ্বালিয়ে দেয় থানাগুলো।

মঙ্গলবার সরেজমিন আদাবর থানায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কিছু সংখ্যক মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। ভাড়া করা ভবনে থানাটি দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় কার্যক্রম চালাতো। থানার নিচে তিনটি পোড়া প্রাইভেটকার। উৎসুক জনতা দেখে সেগুলোর ছবি তুলছেন। থানায় উঠে কেউ যেন লুটপাট করতে না পারে, সেজন্য কেউ একটি তালা ঝুলে দিয়েছে। উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক দফা হামলা হয়েছে থানায়। আজও থানাটি অরক্ষিত। সকাল থেকে আদাবর এলাকায় বিক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন স্থানে এবং প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ অফিস এবং সরকারি অফিসগুলোতে। দুপুর একটার দিকে সেনাবাহিনীর কয়েকটি গাড়ি এসে উপস্থিত লোকজনকে সরে যেতে বলে। তবে তার আগে সেখানে কোনো বাহিনীর লোকজন দেখা যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, গত সোমবার থানায় আগুন দেওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা নিরাপদে যে যার মতো চলে যান। এরপর থেকে থানাটি ফাঁকা পড়ে আছে। থানার ভেতরে যতো কাগজপত্র ছিল সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একইদিন মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে দেখা যায়, প্রধান গেটে অনেক মানুষের জটলা। থানার ভেতরে রাখা আধুনিক প্রাইভেটকার এবং পুলিশের বাহনগুলো ভাঙচুর করেছেন মানুষ। থানার ভেতরে ভাঙচুর করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ওসির রুমে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শুধুমাত্র দুটি নেমপ্লেটের সাইনবোর্ড ছাড়া কিছু নেই। সব ভেঙে তছনছ করা হয়েছে। দেখে বুঝার উপায় নেই একদিন আগেও এই রুম থানার ওসি বসতেন। কোনো পুলিশ সদস্যকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। থানা থেকে বের হয়ে উত্তর দিকের গলি হয়ে পেছনে তিনতলা একটি ভবন। তাতে পুলিশ সদস্যরা ছাড়াও তাদের পরিবার থাকতেন। সেই ভবন এখন পুরোটাই জনশূন্য। গত রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক পরিবার সেখানে থাকলেও রাতে অবস্থা বেগতিক দেখে পালিয়ে যায়। দুপুরে আবাসিক ভবনটির একটি গেটের নিচে সিঁড়ির পাশে রাখা টেবিলে একটি ভ্যানিটি ব্যাগ, খাবার চানাচুর পড়ে ছিল। পাশেই একজন চিৎকার করে বলছিলেন, ভাই আপনারা কোনো কিছু নেবেন না, এগুলো আমাদের সম্পদ। কিন্তু কে শোনে কার কথা। কথা কেউ শুনছিলেন না। থানার ভেতরে ঢুকে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে যান তারা।

বিক্ষুব্ধ জনতার ভাঙচুরের হাত থেকে রেহাই পায়নি থানার ওসি, এসি ও এডিসির গাড়িও। গাড়িগুলো ভাঙচুরের পর অনেক গাড়ির টায়ার যন্ত্রাংশ খুলে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পুরো থানা এখন অন্ধকারে। দেখে মনে হবে এটা কোন পোড়াবাড়ি। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের ডিসি ফারুক হোসেন বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি। এছাড়া থানাগুলোকে রক্ষার জন্য কোনো পুলিশ সদস্য থানার সামনে যেতে পারছেন না। সেনাবাহিনীর কোনো সহযোগিতা নিচ্ছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ওপর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশ পাইনি। ফলে কী হবে, কী করব বুঝতে পারছি না। এ বিষয়ে কথা বলতে পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া বিভাগে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে গতকাল আনসারকে থানাগুলোর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।