নারায়ণগঞ্জের মিশনপাড়ায় অবস্থিত রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম নিয়ে গুজব

প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ শহরের মিশনপাড়ায় অবস্থিত রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে গত শুক্রবার দিনগত গভীর রাত আড়াইটার দিকে দানবাক্সের টাকা চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহারাজকে গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে। যা নিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ আশেপাশের মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দেয়। তবে হত্যাচেষ্টার বিষয়টি গুজব বলে দাবি করেছেন রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের মহারাজ স্বামী একনাথনন্দ। এই ঘটনায় আশ্রমে কর্মরত এক কর্মচারীকে আটক করে আশ্রম কর্তৃপক্ষের হাতে সোপর্দ করেছে পাহারায় থাকা শিক্ষার্থীরা। তবে ওই সময় পালিয়ে গেছে অপর এক কর্মচারী। জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের দানবাক্স থেকে টাকা চুরি করে পালানোর চেষ্টার অভিযোগে এক কর্মচারীকে আটক করেছে রাতে এলাকায় পাহারারত শিক্ষার্থীরা। গত শুক্রবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে এই টাকা চুরির চেষ্টার ঘটনা ঘটে। আটক হওয়া রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের ওই কর্মচারী এক কিশোর, তাই সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুযায়ী তার নাম দেয়া হয়নি। এ ঘটনায় জড়িত অন্য এক কর্মচারী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া ওই কর্মচারীও একজন কিশোর। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে শহরের রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের দানবাক্সের টাকা চুরি করে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে আশ্রমেরই দুই কর্মচারী। আশ্রমের ছাত্রাবাসের ছাত্ররা টের পেয়ে ধাওয়া দিলে ওই দুই কর্মচারী আত্মগোপন করে। হৈ চৈ চিৎকার শুনে পাশের এলাকায় প্রহরায় থাকা শিক্ষার্থীরা রামকৃষ্ণ মিশনে গিয়ে জানতে পারে সেখানে চোর প্রবেশ করেছিল এবং দানবাক্সের টাকা লুট করতে বাধা দেয়ায় মহারাজকে গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রায় আড়াই ঘন্টা মিশন সংলগ্ন সরকারি শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের ভেতরে ঘন ঝোপঝাড়ে তল্লাশি চালিয়ে গতকাল শনিবার ভোর ৫টার দিকে এক কর্মচারীকে আটক করে শিক্ষার্থীরা। এরপর আটককৃত ওই আদিবাসী কিশোরকে মিশন কর্তৃপক্ষের কাছে সোপর্দ করে শিক্ষার্থীরা। আটককৃত ওই কিশোরসহ ঘটনায় জড়িত দুইজনের পরিচয় জানতে চাইলে মিশন কর্তৃপক্ষ জানায় ওই দুই কিশোর আদিবাসী। তারা খাগড়াছড়ি এলাকার বাসিন্দা। তবে তাদের কোনো এনআইডি বা বার্থ সার্টিফিকেট নেই। রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম সংলগ্ন এলাকার এক বাড়ির মালিক শফিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা শুনেছি আশ্রমের মহারাজকে গলাচেপে হত্যার চেষ্টা করেছে তার দুই কর্মচারী। সেখানে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত।’ শুনেছি এখানে ঘটনায় জড়িত দুইজনসহ ৭/৮ জন কর্মচারী রয়েছে যাদের কোন পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন নেই। এটা নিয়েও ধোয়াশা তৈরি হয়েছে। রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে আবাসিক ভবনে থাকা ফারইষ্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শোভন দাস জানান, রাতে হৈ চৈ শুনে ঘুম থেকে উঠে বাইরে বের হয়ে তিনি শুনতে পান এটাক হয়েছে। হামলাকারীরা মহারাজের রুমে গিয়েছিল। পরে ধাওয়া খেয়ে হামলাকারীরা পালিয়ে গেছে। এরপর তিনি আবার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে যান। রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের কর্মচারী সুজন রায় জানান, ঘটনার সময় তিনি তার কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। মিশনের গার্ডরা ওই দুই কর্মচারীর খোঁজে তার রুমে আসে। তাদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন এটাক হয়েছে। পরে গার্ডদের সঙ্গে ওই দুই কর্মচারীর খোঁজে তিনি রুম থেকে বের হয়ে যান। রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের মহারাজ স্বামী একনাথনন্দ বলেন, তাদের আশ্রমের দুই কর্মচারী প্রণামী বাক্সের (দানবাক্সের) টাকা চুরি করে পালানোর চেষ্টা করেছিল। তখন আশ্রমের ভিতরে পাহারায় থাকা স্টাফ ও শিক্ষার্থীরা দেখে ফেললে ওই দুই আদিবাসী কিশোর দেয়াল টপকে পালিয়ে যায়। এর মধ্যে এক কর্মচারীকে আটক করেছে এলাকার লোকজন। আশ্রমের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো উদ্বেগ আছে কি না জানতে চাইলে মহারাজ একনাথনন্দ বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেই। তবে ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হয়নি। ঘটনায় জড়িত দুইজনসহ আদিবাসী কিশোরদের বিষয়ে মহারাজ বলেন, আমাদের এখানে ৪/৫ জন কিশোর আদিবাসী কাজ করতো যাদের কোনো পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন নেই। এই ঘটনার পরে আগামীতে তাদেরকে আর কাজে রাখা হবে না।