ঢাকা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

কিংবদন্তি কিলো ফ্লাইটের কমান্ডার, সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান, এয়ার ভাইস মার্শাল বীর সুলতান মাহমুদ (অব.) এর ১ম মৃত্যু বার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় গতকাল বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পালন করেছে। এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিভিন্ন ঘাঁটি ও ইউনিটের মসজিদসমূহে গতকাল বাদ মাগরিব তার জীবনীর উপর আলোকপাত করত বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ গত ১ আগস্ট ১৯৪৪ সালে তৎকালীন নোয়াখালী (বর্তমানে ফেনী) জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম নূরুল হুদা এবং মাতার নাম মরহুমা আনকুরেন্নেছা বেগম। তিনি ১৯ আগস্ট ১৯৬০ সালে তদানীন্তন পাকিস্তান বিমান বাহিনী একাডেমিতে যোগদান করেন এবং ০১ জুলাই ১৯৬২ সালে জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন। এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ ছিলেন একজন চৌকস বৈমানিক। চাকরিকালীন কর্মকর্তা দেশ বিদেশে বিভিন্ন পেশাগত কোর্সে অংশগ্রহণ করেন এবং সফলতার সঙ্গে তা সম্পন্ন করেন। এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ, বীর উত্তম ১৯৭১ সালে দেশপ্রেমের অদম্য চেতনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অর্জন করেন লাল-সবুজের পতাকা। বীর মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন স্কোয়াড্রন লীডার সুলতান মাহমুদের বীরত্বগাঁথা এ মহান ইতিহাসের এক অনুকরণীয় অধ্যায়। তৎকালীন স্কোয়াড্রন লীডার সুলতান মাহমুদ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের অদম্য ইচ্ছায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে ২নং সেক্টরে (মতিনগর ও মেলাঘর) স্থলযুদ্ধে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি ১নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। একজন বৈমানিক হওয়া সত্ত্বেও স্থলযুদ্ধে তিনি অদম্য সাহসের সঙ্গে রামগড় থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত অসংখ্য দুঃসাহসিক অপারেশন পরিচালনা করেন। গেরিলা কমান্ডার হিসেবে তার পরিচালিত বড় একটি অভিযান হলো চট্টগ্রামের মদুনাঘাটে বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন ধ্বংস ও চট্টগ্রাম এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা। এই স্থলযুদ্ধ চলাকালে তিনি ডান হাঁটুতে শত্রুর বুলেটবিদ্ধ হয়েছিলেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন স্কোয়াড্রন লীডার সুলতান মাহমুদ সুস্থ হয়ে ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তারিখে ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে নবগঠিত ‘কিলো ফ্লাইট’ এর অধিনায়কত্ব গ্রহণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি পাইলট ইন কমান্ড হিসেবে ১৯৭১ সালের ০৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে অ্যালুয়েট-ওওও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল তেল ডিপো ধ্বংস করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রথম বিমান আক্রমণ অভিযানের সূচনা করেন। তার চৌকষ অধিনায়কত্বে কিলো ফ্লাইট স্বল্পসময়ের মধ্যে মোট ৫০টি দুঃসাহসিক বিমান অভিযান সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করে। তন্মধ্যে তিনি ২৫টি অভিযানে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। আকাশ হতে পরিচালিত এ সব অভিযানসমূহ শত্রুর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসের পাশাপাশি তাদের মনোবল দুর্বল করে যা আমাদের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বীর মুক্তিযোদ্ধা তৎকালীন স্কোয়াড্রন লীডার সুলতান মাহমুদ যুগপৎভাবে স্থলযুদ্ধে দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা, নবগঠিত বিমান বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান এবং আকাশযুদ্ধে অকুতোভয় আক্রমণ পরিচালনা করার মাধ্যমে দেশপ্রেমের এক অনন্য নজির স্থাপন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশাত্মবোধ ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য তৎকালীন স্কোয়াড্রন লীডার সুলতান মাহমুদকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত