ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা

করোনা মহামারির পর বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিদেশ থেকে আগত এবং বিদেশগামী প্রত্যেক যাত্রীকে থার্মাল স্ক্যানারে চেক করার পরই বিমানে উঠতে কিংবা দেশে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। একই সাথে বিমানের বোর্ডিং করার সময় কারো শরীরে জ্বর বা চুলকানি জাতীয় সমস্যা থাকলে তাদের বোর্ডিং না করার জন্য এয়ারলাইন্সগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কারো শরীরে লক্ষণ পাওয়া গেলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে আইসোলেটেড করে পরবর্তীতে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) রেখে চিকিৎসা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

গত রোববার সকালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ এসব তথ্য জানিয়ে বলেছেন, বিমানবন্দরে একজন চিকিৎসক এবং দুজন সহকারীর সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি টিম মোতায়ন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ বলেন, এমপক্স ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে আমাদের টিম কাজ করছে। তিনি বলেন, গত রোববার সারাদিন আমাদের বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াতকারী প্রত্যেক যাত্রীকে থার্মাল স্ক্যানারের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়েছে। সবগুলো এয়ারলাইন্সকে আমরা চিঠি দিয়ে সতর্ক করে বলেছি, কারো শরীরে কোনো লক্ষণ থাকলে তাকে যেনো বোর্ডিং করা না হয়। গতরাত পর্যন্ত বিমানবন্দরে এই ধরণের লক্ষণ নিয়ে কোনো যাত্রী আসেনি বলে উল্লেখ করে গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম বলেন, তাপমাত্রা ও ইচিং বা এমপক্স এর লক্ষণ আছে এমন কেউ শনাক্ত হলে তাকে বিমানেই রেখে আমাদের জানাতে এয়ারলাইন্সগুলোকে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, কেউ শনাক্ত হলে তাকে আমরা আলাদা করে একটি রুমে নিয়ে যাব। সেখানে আইসোলেটেড রাখা হবে। পরে ওই যাত্রীকে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে। সংক্রামক রোগের জন্য সেখানে ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, এমপক্স নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। বিদেশফেরত যাত্রীদের বিমানবন্দরে স্ক্যানিং করেই দেশে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। বিমানবন্দরে কোভিডের সময় আমরা একটি ডেস্ক চালু করেছিলাম। সেটা এখনো আছে। তবে লোকবল কমানো হয়েছিল। এখন বিভিন্ন উপজেলা থেকে ডাক্তার ও টেকনোলজিস্ট এনে বিমানবন্দরের ওই ডেস্কের লোকবল আবার বাড়ানো হবে। তিনি আরো বলেন, এমপক্স গুটি বসন্তের মতো একটি রোগ। এটি ছোঁয়াচে। তাই কোথাও কোনো রোগী শনাক্ত হলে যারা সেই রোগীকে সেবা দিবেন সেই ডাক্তার, নার্সসহ অন্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। রোগীর সংস্পর্শে যারা আসবেন তারা অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধোবেন এবং মাস্ক পরিধান করবেন।

কোভিডকালে যেমন স্বাস্থ্য বিধি মানা হয়েছিল তেমন কঠোরভাবে না হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য তিনি সকলের প্রতি অনুরোধ জানান। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, গর্ভবতী এবং যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদেরকে অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, আমাদের নতুন ডিজি মহোদয় দায়িত্ব নিয়েছেন। কয়েকদিনের ভেতরে হয়তো কোনো নির্দেশনা আসবে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। বিদেশ থেকে আসার ২১ দিনের মধ্যে এমপক্সের উপসর্গ দেখা দিলে ১০৬৫৫ নম্বরে কল করতে অনুরোধ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, পিঠে ব্যথা, দুর্বলতা, ফোলা নসিকা গ্রন্থি ও ত্বকের ফুসকুড়ি বা ক্ষত এমপক্স তথা মাঙ্কিপক্সের সাধারণ উপসর্গ। উল্লেখ্য, আফ্রিকার কয়েকটি দেশে এমপক্সের প্রাদুর্ভাবকে ‘বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ তৈরি করার মতো জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা’ ঘোষণা করেছে ডব্লিউএইচও। এমপক্সের দুটি ধরন আছে- ক্লেইড-১ ও ক্লেইড-২। এই রোগের সংক্রমণে জ্বরের মতো লক্ষণ দেখা দেয়। ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে এটি সেরে যায়। তবে সংক্রমণ গুরুতর হলে সেক্ষেত্রে মুখ, চোখ এবং যৌনাঙ্গসহ পুরো শরীরে ক্ষত তৈরি হতে পারে। চামড়ায় ক্ষত তৈরি হয়ে এমপক্স প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত প্রতি ১০০ জনের মধ্যে অন্তত চারজনের মৃত্যুর রেকর্ড রয়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে। এর সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত