ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শূন্য চাঁদাবাজিতে সদরঘাট জনমনে স্বস্তি

* নৌকা ঘাটসহ সব জায়গায় চাঁদাবাজি শূন্যর কোঠায় * আশপাশের দোকানে কমছে কিছু জিনিসপত্রের দাম * আধিপত্য নেই লাল, নীল ও হলুদ কুলি বাহিনীর * নেই জুয়াসহ মাদকের রমরমা কারবার
শূন্য চাঁদাবাজিতে সদরঘাট জনমনে স্বস্তি

রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র বুড়িগঙ্গা নদী। এ নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে দেশের অন্যতম বৃহৎ নদীবন্দর সদরঘাট। বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের জীবিকার অন্যতম উৎস এ নদীবন্দরটি। ঢাকার প্রবেশ দ্বার খ্যাত এই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে পুরান ঢাকার বাণিজ্য নগরী সদরঘাট।

কিন্তু এ ঘাটকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে চাঁদাবাজি, মাদক কারবার ও জুয়া খেলার এক বড় চক্র। ছিল সরকার দলীয় ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির আতুড়ঘর। এছাড়াও কুলিদের বেপরোয়া কার্যক্রমসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর পাল্টে গেছে সদরঘাটের চিত্র। সদরঘাট ফিরে পেয়েছে এক নতুন প্রাণ। ফলে অনেকটা স্বস্তিতেই রয়েছে যাত্রীসহ আশপাশের সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা।

সদরঘাট ও এর আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলোতে কিছু জিনিসপত্রের দাম কমেছে। সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে খাবারেও। আগে নৌকাঘাটে চাঁদা তোলা হতো। কিন্তু এখন চাঁদা তোলা বন্ধ আছে। একসময় কুলিদের লাল-নীল-হলুদ বাহিনী অভিনয় কৌশলে যাত্রীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করত। কিন্তু সেই রঙিন বাহিনীকে সদরঘাটে দেখা যায়নি। সদরঘাটের আশপাশে প্রকাশে অনেকে মাদকদ্রব্য কারবারি চলতো; কিন্তু বর্তমানে বন্ধ আছে। তবে অনেকেই জানান গোপনে তাদের কারবারি চলছে। এ বিষয়ে এমভি সাত্তার খান-২ এর কেরানী খোকন বলেন, ক্ষমতার রদবদলের পর লঞ্চে কেউ চাঁদা তুলতে আসেনি কেউ। আশপাশের টোকাই ছেলেরা মাদকদ্রব্য বিক্রি করত ও সেবন করত। তাদের এখন দেখা যায় না। বলা চলে সকল অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

লঞ্চের ভাড়া সরকারের নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হচ্ছে। কেউ ভাড়া বেশি নিচ্ছে না। প্রয়োজনে দাম কিছুটা কম রাখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঝালমুড়ি বিক্রেতা রবিুল ইসলাম বলেন, আমি বহুদিন ধরেই সদরঘাটে ঝালমুড়ি বিক্রি করছি। কিছুদিন পান বিক্রির কাজও করেছি। আমাকে এখানে ব্যবসা করতে গিয়ে চাঁদা দিতে হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই চাঁদা নিত। ১০০ টাকা করে চাঁদা দিতাম।

নিজে পরিশ্রম করে টাকা আয় করে অকারণে অন্যকে ভাগ দেয়াটা খুব কষ্টের। ক্ষমতার রদবদলের পর এ চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে। আপাতত এখন আর কেউ চাঁদা তুলতে আসে না। চাঁদা ছাড়া যদি ব্যবসা করতে পারি তাহলে অন্তত ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারব। সদরঘাট থেকে একটি খাবারের দোকান থেকে আরিফ হাসান নামে এক হোটেল বয় বলে, জিনিসপত্রের অতিরিক্ত দাম, চাঁদাবাজিসহ ইত্যাদি কারণে আমাদের খাবারের দাম বেশি রাখতে হয়েছে। এখনো দেশে জিনিসপত্রের দাম তেমনভাবে কমেনি। কিন্তু চাঁদাবাজিটা কমেছে।

চাঁদাবাজির কারণে লাভের একটা বড় অংশ চলে যেত। এখন চাঁদাবাজি নেই তাই প্রতি প্লেটে খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছি। জিনিসপত্রের দাম কমলে খাবারের দামও কমবে।

কাপড় ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুলের ছেলেরা এসে জোর করে চাঁদা তুলছিল। না দিলে ভয়ভীতি দেখাত। কিন্তু বর্তমানে কেউ চাঁদা তুলতে আসে না। আমরা এখন খুব স্বস্তিতে আছি। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সলেমান বলেন, সদরঘাটের চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অনিয়ম বন্ধের জন্য আমরা আগে থেকেই কাজ করছি। এ ধারাবাহিকতা আমাদের চলমান থাকবে। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য পরবর্তীতে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয় করব। এবিষয়ে সদরঘাট নৌ থানার সাব ইন্সপেক্টর আল আমিন বলেন, সদরঘাটে এখন চাঁদাবাজি নেই। মাদক কারবারের বিষয়টি আগেও ছিল না এখনও নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত