ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নারায়ণগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানা

ধসে পড়েছে উপরের তিনটি তলার ছাদ

ধসে পড়েছে উপরের তিনটি তলার ছাদ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া গাজী টায়ার কারখানার বিধ্বস্ত ছয় তলা ভবনটির ৪, ৫ ও ৬ তলার ছাদের বেশ কিছু অংশ ধসে তিন তলার ছাদের উপর পড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পরিদর্শন শেষে পুরো ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়ে শুধুমাত্র নীচতলার বেইজমেন্টে তল্লাশি করার পরামর্শ দেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রাকিব আহসান। পরে নীচ তলার বেইজমেন্টে তল্লাশি করে ফায়ার সার্ভিস কতৃপক্ষ। তবে ভেতরে কোনো লাশ বা মানবদেহের অংশবিশেষ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বিভিন্ন ফ্লোরে ড্রোন দিয়েও তল্লাশি চালিয়ে কোনো লাশ বা মানবদেহের অংশবিশেষ পাওয়া যায়নি। যে কারণে আপাতত উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক। নীচতলার ভেতরে বেশ কয়েক জায়গায় এখনো আগুন জ্বলতে দেখা গেলেও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলছেন এই আগুন আর ছড়াতে পারবে না। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটায় তদন্ত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে উপজেলার রূপসি এলাকায় আগুনে পুড়া ভবনটি পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর অধ্যাপকসহ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরা। এরপর ফায়ার সার্ভিসের লেডার মেশিনের মাধ্যমে ভবনের অবকাঠামোসহ প্রতিটি তলার ভেতরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন তারা। তবে কোনো তলাতেই জীবিত বা মৃত কোনো মানুষের অস্তিত্ব পাওয়া যায় নি।

পরে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক রাকিব আহসান এসব তথ্য নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, ভবনটির ৪, ৫ ও ৬ তলার ছাদের বেশ কিছু অংশ ধসে তিন তলার ছাদের উপর পড়েছে। যে কারণে দুই তলা থেকে ছয় তলা পর্যন্ত ভেতরে তল্লাশি করা বা এই মুহূর্তে ভেঙে ফেলাও সম্ভব নয়। যে কোনো সময় পুরো ভবনটি ধসে পড়তে পারে। বর্তমান অবস্থায় ভবনটি রাজধানীর বিজয় স্বরণির র?্যাংগস ভবনের চেয়েও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়ে শুধুমাত্র নীচতলার বেইজমেন্টে তল্লাশি করার পরামর্শ দেন বুয়েটের সিভিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রাকিব আহসান। এ সময় সঙ্গে ছিলেন জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান মাহমুদ রাসেল, গণপূর্ত বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী ছাইফুল ইসলাম, কলকারখানা অধিদপ্তর উপ-মহাপরিদর্শক রাজীব চন্দ্র ঘোষ, তিতাসের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মঞ্জুর আজিজ মোহন ও পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার হরেন্দ্র নাথ বর্মনসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা। বুয়েটের অধ্যাপক ও তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে বেলা ১১টার দিকে ভবনটির নীচতলার বেইজমেন্টে নিখোঁজদের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করে ফায়ার সার্ভিস কতৃপক্ষ। ভেতরের বিভিন্ন অংশ তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখেন কোন লাশ পাওয়া যায় কিনা। প্রায় আধ ঘণ্টা তল্লাশির পর বেলা সাড়ে এগারোটায় ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নান জানান, ভেতরে কোন লাশ বা মানবদেহের কোনো ধরনের অংশবিশেষ পাওয়া যায় নি।

তাই উদ্ধার অভিযান আপাতত শেষ করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী তাদের পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ফায়ার সার্ভিসের তল্লাশি অভিযানের সময় নীচতলার ভেতরে বেশ কয়েক জায়গায় এখনো আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আব্দুল মান্নান বলেন, ভেতরে কিছু কেমিকেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় স্বল্প পরিমানে আগুন জ্বলছে। তবে এতে ভয়ের কোনো কারণ নেই। এই আগুন আর ছড়াতে পারবে না। তবে পরিস্থিতি ঠিক রাখতে আমরা কারখানার ভেতরেই অবস্থান করব। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরবর্তী যে নির্দেশ দেবে সে অনুযায়ী আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালিত হবে। উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান ও নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে নারায়ণগঞ্জের আদালত ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার খবর ছড়িয়ে পড়লে দুপুরে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন কারখানার ভেতরে ঢুকে লুটপাট শুরু করেন। বিকাল ৪টার দিকে বরাব এলাকা থেকে একটি গ্রুপ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে পুরো কারখানার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে। এ নিয়ে আগে থেকেই লুটপাট চালানো দুর্বৃত্তদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। পরে অস্ত্রধারীরা পিছু হটে। রাত নয়টার সময় বিদ্যুৎহীন অন্ধকার ছয়তলা ভবনটিতে শত শত লোক লুটপাট চালাতে থাকেন। এ সময় কে বা কারা ভবনের নিচতলায় সিঁড়ির মুখে আগুন দিয়ে দেন। সেই সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা টানা ৩২ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চালিয়ে এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আর এই সময়ে কারখানার ভিতরে থাকা সবকিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুন লাগার পর কারখানার ভিতরে আটকে পড়া মানুষজনের স্বজনদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নিখোঁজদের তালিক করা হয়। সেই সঙ্গে স্বজনদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৭৫ জনের একটি তালিকা করেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। তবে পরে ফায়ার সার্ভিস তালিকা তৈরির বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নিখোঁজদের তালিকা করা হয়।

শিক্ষর্থীদের পক্ষ থেকে তালিকা করা মাহিমা মিম লিপা বলেন, নিখোঁজদের তালিকা নিয়ে গড়মিল হওয়ায় আমরা গত ২৭ আগস্ট তালিকা করা শুরু করি। সেই সঙ্গে সেদিন আমরা ১২৯ জনের তালিকা করেছি। গত বুধবার আমরা নতুন করে তিনজনের তালিকা পেয়েছি। সবমিলিয়ে আমাদের কাছে ১৩২ জনের তালিকা রয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান বলেন, যারা এখানে এসে বলছে তাদের স্বজনরা নিখোঁজ রয়েছে আমরা তাদের তালিকা লিপিবদ্ধ করে রাখছি। তবে নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না কতজন ভিতরে ছিলেন বা মারা গেছেন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাদের ড্রোন কিংবা তাদের মই দিয়ে দেখেছেন কোনো ডেডবডি নেই। আমরা মনে করতেছি যেহেতু এখানে অনেক কেমিকেল পোড়ানো হয়েছে কোনো মানুষ যদি থেকেও থাকে তাহলে ওইভাবে ডেডবডি পাওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই। কারণ ২১ থেকে ২২ ঘণ্টা টানা আগুন জ্বলছিল। সে হিসেবে নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত