নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ

৩৪ জনের মৃত্যুর বিচার শেষ হয়নি ৪ বছরেও

প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার তল্লায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে ৩৪ জন নিহতের ঘটনার ৪ বছরেও শেষ হয়নি বিচার কাজ। গ্যাসের পাইপলাইনের লিকেজ থেকে জমে থাকা গ্যাসে ভয়াবহ বিস্ফোরণে সৃষ্টি হয়েছিল বিভীষিকাময় পরিস্থিতির। শোকে বিহবল ছিল নারায়ণগঞ্জ তথা দেশবাসীও। তবে ৪ বছরেও শেষ হয়নি চাঞ্চল্যকর মামলাটির বিচার কাজ।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাতে তল্লার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজ পড়তে আসছিলেন মুসল্লিরা। প্রতিদিনের মতো ওইদিনও মুসল্লি দ্বারা ভরপুর ছিল মসজিদটি। মুসল্লিরা ইমামের পিছনে ৪ রাকায়াত ফরজ নামাজ আদায় করে কেউ কেউ বের হয়ে আসছিলেন। তবে বেশিরভাগ মুসল্লিই ভিতরে সুন্নাত নামাজ আদায় করছিলেন। এরই মধ্যে ঘটে যায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ। তিতাসের পাইপলাইনের লিকেজ থেকে জমে থাকা গ্যাসের কারণে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। সঙ্গে সঙ্গেই মসজিদের ভিতরে থাকা মুসুল্লীদের শরীর ঝলসে যায়। কারো কোনো কাপড়ও ছিল না। এরপরেই এলাকাজুড়ে শুরু হয় হুড়োহুড়ি। আর এই ঘটনায় দগ্ধ অবস্থায় ৩৭ জনকে জাতীয় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে একে একে ৩৪ জন মারা যান। নিহতদের মধ্যে ছিলেন পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদের ইমাম আবদুল মালেক নেসারি (৪৮), মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৫) ও তার ছেলে জুনায়েদ হোসেন (১৬), মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি আবদুল হান্নান (৫০), ইমরান (৩০), আবুল বাশার (৫১), মোহাম্মদ আলী মাস্টার (৫৫), জেলা প্রশাসনের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী শামীম হাসান (৪৫), স্থানীয় ফটো সাংবাদিক মোহাম্মদ নাদিম (৪৫), নারায়ণগঞ্জ কলেজের ছাত্র সাব্বির (২১), তোলারাম কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র জোবায়ের (১৮), জুলহাস উদ্দিন (৩০), কুদ্দুস বেপারী (৭২), মোস্তফা কামাল (৩৪), পোশাক শ্রমিক জুবায়ের ফরাজী (৭), পোশাক শ্রমিক মো. রাশেদ (৩০), হুমায়ুন কবির (৭২), জামাল আবেদিন (৪০), পোশাক শ্রমিক ইব্রাহিম বিশ্বাস (৪৩), নারায়ণগঞ্জ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী রিফাত (১৮), পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইন উদ্দিন (১২), মো. জয়নাল (৩৮), পোশাক শ্রমিক মো. নয়ন (২৭), ওয়ার্কশপের শ্রমিক কাঞ্চন হাওলাদার (৫০), শ্রমিক মো. রাসেল (৩৪), বাহার উদ্দিন (৫৫), নিজাম ওরফে মিজান (৪০), আবদুস সাত্তার (৪০), শেখ ফরিদ (২১), নজরুল ইসলাম (৫০), ছেলে রিফাত (১৮)। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুর গফুরসহ ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। অভিযুক্তরা হলেন মসজিদের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর মিয়া (৬০), মো. সামসুদ্দিন সরদার (৬০), মো. শামসু সরদার (৫৭), মো. শওকত আলী (৫০), মো. অসিম উদ্দিন (৫০), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৪০), মো. শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল (৪৫), মো. নাঈম সরদার (২৭), মো. তানভীর আহমেদ (৪৫), মো. আল আমিন (৩৫), মো. আলমগীর সিকদার (৩৫), মাওলানা মো. আল আমিন (৪৫), মো. সিরাজ হাওলাদার (৫৫), মো. নেওয়াজ মিয়া (৫৫), মো. নাজির হোসেন (৫৬), মো. আবুল কাশেম (৪৫), আব্দুল মালেক (৫৫), মো. মনিরুল (৫৫), মো. স্বপন মিয়া (৩৮), মো. আসলাম আলী (৪২), আলী তাজম মিল্কী (৫৫), মো. কাইয়ুম (৩৮), মো. মামুন মিয়া (৩৮), মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. বশির আহমেদ হৃদয় (২৮), মো. রিমেল (৩২), মো. আরিফুর রহমান (৩০), মো. মোবারক হোসেন (৪০) ও রায়হানুল ইসলাম (৩৬)। একই সঙ্গে আদালত অভিযুক্ত তিতাস গ্যাসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে তাদেরকেও অভিযুক্ত করা হয়। তিতাস গ্যাসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হলেন তিতাসের ফতুল্লা অঞ্চলের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম, উপ ব্যবস্থাপক মাহামুদুর রহমান রাব্বী, সহকারী প্রকৌশলী এসএম হাসান শাহরিয়ার, সহকারী প্রকৌশলী মানিক মিয়া, সিনিয়র সুপারভাইজার মো. মুনিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র উন্নয়নকারী মো. আইউব আলী, হেল্পার মো. হানিফ মিয়া ও কর্মচারী মো. ইসমাইল প্রধান। অভিযোগপত্রে মসজিদ পরিচালনায় কমিটির অবহেলা-অব্যবস্থাপনা, উদাসীনতা, সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা, কারিগরি দিক বিবেচনা না করে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ঝুঁকিপূর্ণভাবে লাগানো, গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েও মুসল্লিদের জীবনের নিরাপত্তায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নেয়া, ঢাকা পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানির মিটার রিডার কালেক্টর ও ইলেকট্রিশিয়ানদের মসজিদে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়াসহ তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবেহলা, গ্যাসলাইন সঠিকভাবে তদারক না করা, পাইপের লিকেজ মেরামত না করা, গ্যাসলাইন ঝুঁকিপূর্ণভাবে স্থাপন এবং স্থানান্তর না করার কারণে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৩৪ মুসল্লির মৃত্যু হয়।