ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বেদখলে জবির ১১টি হল

উদ্ধারের কথা বললেও নেই দৃশ্যমান কোনো শক্ত পদক্ষেপ

উদ্ধারের কথা বললেও নেই দৃশ্যমান কোনো শক্ত পদক্ষেপ

দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ৭ একর এই ছোট ক্যাম্পাসে ১৫ হাজারের মতো শিক্ষার্থী করেন পড়াশুনা। সুনাম কুড়াচ্ছেন বড় বড় অর্জনে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলসহ নানা সুসোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত তারা। হল সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়ে চুকাতে হয় শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। এ জন্য বিভিন্ন সময় করেন হলের জন্য আন্দোলন। পরে তোপের মুখে ২০২০ সালে মেয়েদের জন্য নির্মিত হয় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। মিলে আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা। কিন্তু তাতেই কাটেনি শিক্ষার্থীদের হলহীন দুর্বিষহ জীবন। শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ পার করছেন হলহীন সংগ্রামী জীবন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ১১টি হল থাকলেও চার দশক ধরে তা স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে। বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হল উদ্ধার চেষ্টা চালালেও তা সম্ভব হয়নি। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের তৎপরতায় ব্যর্থ হয় শিক্ষার্থীদের কয়েক দফা হল আন্দোলন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর যে কোনো মূল্যে হল উদ্ধারের ঘোষণা দেন জবির শিক্ষার্থীরা।

পরে জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থীদের আইনি প্রক্রিয়ায় হল উদ্ধারে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন।

হল উদ্ধারের অংশ হিসাবে গত ৩১ আগস্ট গুলশানারা সিটি (তিব্বত হল) ব্যবস্যায়ীদের ৩ দিনের মধ্যে উপযুক্ত নথিপত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় জেলা প্রশাসকের বরাত দিয়ে । এ দিকে সোশাল মিডিয়ায় হল ছাড়ার ৩ দিনের আল্টিমেটাম দেন জেলা প্রশাসক এমন একটি খবর ছড়িয়ে পরে। ফলে হল ছাড়ার সময়সীমা শেষ হলেও, হল ছাড়েনি ব্যবস্যায়ীরা এমন দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের (২০২১-২০২২) বর্ষের শিক্ষার্থী আরিয়ান সোহান বলেন, ফেসবুকের বিভিন্ন ভেরিফাইড গ্রুপ এবং পেজ থেকে দেখেছি, ঢাকা জেলা প্রশাসন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এর তিব্বত হল উদ্বারের ব্যাপারে সেখানে অবস্থানরত ব্যবসায়ীদের ৩ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। কিন্তু ৩ দিন পার হয়ে গেলেও প্রশাসন এ ব্যাপারে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না, এমনকি জানা যায় সেখানকার ব্যবসায়ীরা প্রশাসন থেকে কোনো লিখিত আল্টিমেটাম পায়নি, যার পরিপ্রেক্ষিতে তারা হল ছাড়বে। এ ব্যাপারে জবির শিক্ষার্থীরা খুবই হতাশ। প্রশাসনের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে লিখিত আল্টিমেটামের মাধ্যমে হল উদ্বার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা এবং লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অতিদ্রুত তিব্বত হল হস্তান্তর করা।

হল পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিবলী সাদিক (রাজস্ব) বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ব্যবস্যায়ীদের গুলসানারা সিটি মার্কেট (তিব্বত হল) ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়নি। ৩ দিনের মধ্যে মার্কেট কতৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমার নির্দেশনা দেয়া হয়। এবং সিভিল সার্জেনের একটি দল স্পটে পাঠানো হয়। পরে মার্কেট কতৃপক্ষ নথিপত্র জমা দেন। সেগুলো এখন পর্যাবেক্ষণ করছি।

আর হল পুনরুদ্ধারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জেলা প্রশাসক নিয়োগ হওয়ার পর আলোচনা মাধ্যমে উঠে আসবে। মার্কেটের কতৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কেট প্রধান কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। এ দিকে ব্যবস্যায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হল ছাড়ার কোােন নোটিশ দেয়া হয় নি তাদের। হল ছাড়ার খবরটা তাদের কাছে পুরোপুরি অজানা। এ বিষয়ে গুলশানারা সিটি মার্কেটের ব্যবস্যায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা এমন কোনো নির্দেশনা পাই নি মার্কেট কতৃপক্ষের কাছ থেকে। এ বিষয়ে মার্কেট কতৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে। তবে ফেসবুকে মার্কেট ছাড়ার খবরটা দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ অনুযায়ী, বিলুপ্ত কলেজের (২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়) সব সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে মুসিহ মুহিত অডিট ফার্মকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ফার্মটি তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের ১২টি হল ছিল বলে অডিটে উল্লেখ করে। জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো হলের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পরে আন্দোলনের জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন হল ইস্যুতে নীতি-নির্ধারণী মহলের টনক নড়ে। একই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক মাসের মধ্যে ১২টি হল ও বেদখল হওয়া অন্যান্য সম্পত্তি উদ্ধারে সুপারিশ করতে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। ২০০৯ সালের মার্চে পাঁচটি হল (আনোয়ার শফিক হল, শাহাবুদ্দিন হল, আজমল হোসেন হল, তিব্বত হল ও হাবিবুর রহমান হল) বিশ্ববিদ্যালয়কে লিজ দেওয়ার সুপারিশ করে কমিটি। একই বছরের ৫ মে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঁচটি হলের দীর্ঘমেয়াদি লিজের আবেদন করে। ৯ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্ত প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়। ২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক আইনগত সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়কে হলগুলো লিজের পরিবর্তে অধিগ্রহণের ব্যবস্থা নিতে বললেও একাধিক মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা ও আইনি জটিলতায় হল উদ্ধার কার্যক্রম থমকে থাকে।

এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের (২০২১-২০২২) বর্ষের শিক্ষার্থী মো আরমান হোসেন বলেন, প্রথমত একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসাবে আমি এই হল পুনরুদ্ধার আন্দোলনকে সমর্থন করি। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য হল থাকাটা অতীব জরুরি, আমরা যারা মেসে থেকে পড়াশোনা করছি এখানে নানা সংকীর্ণতার মধ্যে থাকতে হয়। অনেকের পক্ষে মেসের খরচ বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। আমি চাই যতদ্রুত সম্ভব হল পুনরুদ্ধার করা অথবা স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করে আমাদের আবাসন সমস্যা দূর করা। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরী বলেন, এর আগেও ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে হল উদ্ধারে আন্দোলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তখন হল উদ্ধারের জন্য ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে তারা। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে পেরে ওঠেনি শিক্ষার্থীরা। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করা হয়। পরবর্তীতে সরকার জবিকে কেরাণীগঞ্জে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি আরো বলেন, আমাদের এই ১১ হলে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন অবস্থান করেছে। যারা হলগুলো দখল করে নিয়েছে, তারা কোনো ডকুমেন্টসের ওপর ভিত্তি করে দখল করেছে সেটি দেখার বিষয় আছে। হল উদ্ধারের জন্য দুটি বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে। একটি হলো, আইনগত বিষয়, আরেকটি আমাদের অধিকারের বিষয়। আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য যা করা দরকার।

উল্লেখ যে, গত ৩১ আগস্ট ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিবলী সাদিক (রাজস্ব) এর রুমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বিষয়ক একটা মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মিটিংএর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোতোয়ালি জোনের মেহেরুনেছা এডিসি (রাজস্ব) নেতৃত্বে এল এ শাখার সার্ভেয়ারদের একটা টিম ইসলামপুরের শুলশান আরা সিটিতে গিয়ে ০৩ (তিন) দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে আসার কথা ছিল । যেন তারা নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে মার্কেট খালি করে দেন ।

তিব্বত হল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কে লিজ দেয়া হয়েছে ১ বছরের জন্য। কাগজপত্র নতুন জেলা প্রশাসক আসলে হস্তান্তর করা হবে।

দখলদার হাজী সেলিম স্বইচ্ছায় দখলকৃত জায়গা ছেড়ে না দিলে সেনাবাহিনী মার্কেট খালি করতে সর্বোচ্চ সহয়তা করবে, ছাত্র প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেন সেনাবাহিনী।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত