বেরোবির উপহারের বাস উধাও!

প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রংপুর ব্যুরো

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) পরিবহন পুলের শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহৃত একটি উপহারের বাস (রংপুর-ব-০৫- ০০১৬) হঠাৎ পরিবহন পুল থেকে উধাও। বর্তমানে বাসটি কোথায় আছে সেটি কেউ জানে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের (প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী) স্বাক্ষরে বেরোবি/রেজি/২০২৪/৮১ স্মারকে এ কে এম ছায়াদত হোসেন বকুলকে পাঠানো এক চিঠিতে বাসটি ফেরত নিতে বলা হয়। কিন্তু বেরোবি প্রশাসন বাসটি হস্তান্তর করেছে বললেও কোনো প্রকার নথিপত্র দেখাতে পারে নাই। জানা যায়, ২০১২ সালের ১২ মার্চ তারিখে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে এ কে এম ছায়াদত হোসেন বকুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ৫২ সিটের একটি বাস উপহার দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মু আবদুল জলিল মিয়ার হাতে বাসটির চাবি আনুষ্ঠানিক ভাবে হস্তান্তর করেন ওয়াজেদ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ছায়াদত হোসেন বকুল। সে সময় বাস উপহার প্রদানের ছবি ও প্রেস রিলিজ জনসংযোগ দপ্তর থেকে প্রচারও করা হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর তারিখে ওয়াজেদ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পক্ষে বাসটি ফেরত চেয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলেন অ্যাডভোকেট রইচ উদ্দিন বাদশা।

এতে বলা হয়েছিল বাসটি ৩০ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়া হয়েছিল এবং তিন মাসের ভাড়াও তারা পেয়েছেন। কিন্তু তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. এ কে এম নূর-উন-নবী হিসাব দপ্তরে এ ধরনের কোনো চুক্তি বা ভাড়া পরিশোধের প্রমাণ পাননি। বরং চাবি হস্তান্তরের ছবি ও উপহার প্রদান সংক্রান্ত সংবাদ জাতীয় ও স্থানীয় একাধিক সংবাদপত্রে প্রচারের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। আবারো গত ৩০ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে ছায়াদত হোসেন বকুলের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে বাসটি ফেরত চাওয়া হলে সদ্য পদত্যাগকারী ভিসি প্রফেসর ড. হাসিবুর রশীদ উপহারের বাসটি ফেরত প্রদানের অনুমতি দেন এবং রেজিস্ট্রার চিঠি দিয়ে গাড়িটি ফেরত নিতে বলেন।

বেরাবির রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্ঠ সবাই পারস্পরিক যোগসাজশে উপহারের গাড়িটি ফেরত প্রদান করেছেন। বাসটি পরিবহন পুল থেকে নিয়ে যাওয়া হলেও সেটি এ কে এম ছায়াদত হোসেন বকুল গ্রহণ করেছেন এরকম কোনো প্রমাণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দেখাতে পারেনি। বর্তমানে গাড়িটি কোথায় আছে সেটি কেউ জানে না।

একাধিক সূত্রে জানা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তরের এক কর্মকর্তা, পরিবহন পুলের এক কর্মকর্তা এবং একজন চালক এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

তারা বাস ফেরত বিষয়ে ছায়াদত হোসেন বকুলের মাধ্যমে উপাচার্যকে বাস ফেরত দিতে কৌশলে বাধ্য করেন এবং বাসটি বিক্রি করে নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী, ‘সাবেক উপাচার্য ড. হাসিবুর রশীদের লিখিত অনুমতিক্রমে গাড়ি ফেরত আদেশ দেয়া হয়।

গাড়িকে রিসিভ করছেন তা পরিবহন পুল বলতে পারবে।’ পরিবহন পুলের সাবেক পরিচালকের কাছে জানতে চাওয়া হয় আপনি কি গাড়ি হস্তান্তর করছেন কি না উত্তরে ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘না না না! আমি কি দিতে পারি? আমি গাড়ি কিনতেও পারি না দিতেও পারি না।’ এই বলে ফোন কেটে দেন।

এ বিষয়ে পরিবহন দপ্তরের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার তাপস কুমার গোস্বামী এ বিষয়ে বলেন, ‘আসলে বাস ফেরত দেয়া হয়েছে কিন্তু ভুলে হস্তান্তরের কোনো ডকুমেন্টস গ্রহণ করা হয় নাই।’ ওয়াজেদ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ছায়াদত হোসেন বকুল সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল নাম্বার বন্ধ পাওয়া গেছে।