ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বেরোবির বিদায়ী উপাচার্য!

মামলা প্রত্যাহারের শর্তে এক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে গেছেন

মামলা প্রত্যাহারের শর্তে এক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে গেছেন

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) কড়া নিষেধ উপেক্ষা করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) নয় কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (৪র্থ গ্রেড) পদে সম্প্রতি পদোন্নতি দিয়েছেন সদ্য বিদায়ী উপাচার্য প্রফেসর ড. হাসিবুর রশীদ। ওই কর্মকর্তাদের বাছাইবোর্ড গঠনেও মানা হয়নি কোন নিয়ম। ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতির বোর্ডে আইন লঙ্ঘন করে সদস্য ছিলেন একজন ৫ম গ্রেডের কর্মকর্তা। এতসব অনিয়মের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে করা একটি রিট মামলা প্রত্যাহার কিংবা নিষ্পত্তির শর্তে ড. জিয়াউল হককে উপ-রেজিস্ট্রার থেকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে যোগদানের সুপারিশ করে বাছাই বোর্ড।

জানা গেছে, গত বছরের ২৯ জুন সহকারী রেজিস্ট্রারের ৪টি শূন্যপদে নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে জিয়াউল হকসহ চারজন কর্মকর্তা ঐ পদসমূহে নিজেদের প্রতিস্থাপন চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন (নম্বর-৯৪১৫/২০২৩)। মএদিকে, গত ৩১ মে ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত বাছাইবোর্ডের শর্ত অনুযায়ী পিটিশনকারীদের মধ্য হতে জিয়া নিজেকে সরিয়ে নিলেও অন্যরা বলবৎ থাকায় মামলাটি এখনো উচ্চ আদালতে চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে বাছাইবোের্ডর শর্ত না মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরী তাকে গত ১০ জুলাই ২০২৪ তারিখে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদে যোগদান করান।

বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও উপাচার্য না থাকায় কারো কাছে অভিযোগ করতে পারছেন না। উপাচার্য নিয়োগ হলেই এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানানো হবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার আলমগীর চৌধুরী বলেন-রিটকারীর তালিকা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করায় তাকে যোগদান করানো হয়েছে। মামলা এখনো চলমান রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে পরে খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মামলা প্রত্যাহারের শর্ত দিয়ে পদোন্নতি দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বেরোবির লিগ্যাল অফিসার রেহেনা আক্তার মনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কোন পদে পদোন্নতি দেয়ার ক্ষেত্রে এমন শর্ত জুড়ে দিতে পারে না। এমন শর্ত দেয়া বৈধ নয় বলেও জানান তিনি। এদিকে ২০২১ সালে ইউজিসি প্রকাশিত এক পরিপত্রে দেখা যায়, দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (৪র্থ গ্রেড) ও সমমানের পদগুলোতে শূন্যপদে নিয়োগ প্রদান ছাড়া আপগ্রেডেশন দেয়া যাবে না। এর পরেও বেরোবির বিদায়ী উপাচার্য বার বার ওই পদে আপগ্রেডেশন দেয়ার আয়োজন করলে ইউজিসির পক্ষ থেকে ছয় বার চিঠি দিয়ে নিষেধ করা হয়। এতসব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গত ৩১ মে নজিরবিহীন গোপনীয়তার মধ্যে ‘অবৈধ’ বাছাই বোর্ড বসিয়ে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের মাধ্যমে নয় কর্মকর্তাকে আপগ্রেডেশন দেয়ার সুপারিশ করেন। যা গত ২৯ জুন অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট এর ১০৫তম সভায় অনুমোদন করিয়ে নেন তিনি।

ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উপ-রেজিস্ট্রার থেকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদের জন্য অনুষ্ঠিত বাছাইবোর্ডের সুপারিশপত্রে বলা হয়। ‘ড. মো. জিয়াউল হক পিতা. মো. আব্দুল ওহাব ৫নং প্রার্থীর ক্ষেত্রে মামলা প্রত্যাহার/নিষ্পত্তি হওয়ার পর এই পদোন্নতি কার্যকর হবে’। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদকে ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেন নি। রিটকারী কর্মকর্তাদের একজন সাহানা পারভীন জানান, মামলার আবেদনকারী চারজনের মধ্যে মাত্র একজন পদোন্নতি পেলেও বাকিরা পান নি। এ কারণে অন্যরা মামলা প্রত্যাহারে সম্মত হননি। রিট মামলাটি এখনো বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে বহাল হিসেবে দেখা যাচ্ছে। সাহানা পারভীন বলেন, আমরা মামলাটি আদালত থেকে প্রত্যাহার করি নি। সুতরাং মামলা নিষ্পত্তির প্রশ্নই আসে না। এ ছাড়াও সাবেক উপাচার্য ড. এ কে এম নূর-উন-নবীর সময়ে সংস্থাপন শাখার প্রধান হিসেবে বেতন বিহীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন চালু ও বকেয়া প্রদানের জন্য পদায়ন প্রক্রিয়াতে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে। তার তৈরি করা তালিকা অনুযায়ী জনসংযোগ দপ্তরের এমএলএসএস মো. আমিনুল ইসলামকে চাকরিতে যোগদানের পর থেকে অনুপস্থিত থাকা সত্ত্বেও পদায়ন করে ৩৪ মাসের বকেয়াসহ বেতন প্রদান করা হয়। বিয়ষটি নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল তখন। এদিকে, ৩১.৫.২০২৪ তারিখের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদের জন্য গঠিত নিয়োগ বোর্ড ত্রুটিপূর্ণ দাবি করে সেটি বাতিল চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন কর্মকর্তা হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করলে আদালত ২৪.৭.২০২৪ তারিখে পুরো পদোন্নতি প্রক্রিয়ার উপর স্ট্যাটাস-ক্যো প্রদান করেন। আদালতের এই আদেশ অমান্য করে সাবেক ভিসি জিয়াউল হককে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে বেতন-ভাতা প্রদান করেন এবং গত ৭.৮.২৪ তারিখে রেজিস্ট্রার আলমগীর চৌধুরী ছুটিতে গেলে তাকে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব প্রদান করেন। বিষয়টি আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে বলে মনে করেন রিটকারীরা এবং এজন্য তারা আদালত অবমাননার মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন রিটকারী মো. সামসুল হক। যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত কর্মকর্তা ড. জিয়াউল হক বলেন, বাছাইবোর্ডের শর্ত অনুযায়ী আমি রিট পিটিশনকারীর তালিকা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করেছি। আমার বিরুদ্ধে করা অন্যান্য অভিযোগও ঠিক নয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত