ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শ্রাবন অন্ধত্বের পথে

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শ্রাবন অন্ধত্বের পথে

এক চোখে বুলেটের দুইটি স্প্রিন্ট আর আরেক চোখে পুলিশের বুটের আঘাতের ক্ষত নিয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছে ময়মনসিংহ নগরীর পুলিশ লাইন কাশর লাকীবাড়ীর শিক্ষার্থী মেরাজ উদ্দিন শ্রাবণ (২১)। এতে চিরতরে তার এক চোখের আলো হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এনিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে শ্রাবণ ও তার পরিবারের। এই অবস্থায় শ্রাবনের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোন ধরনের সহযোগিতায় পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। পাওয়া যায়নি আশ্বাসও। এতে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ নগরীর ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শ্রাবন।

জানা যায়, নগরীর পুলিশ লাইন কাশর লাকীবাড়ীর বাসিন্দা মিনহাজ উদ্দিনের ছেলে শ্রাবন। তার বাবা একজন গার্মেন্টস কর্মী। পরিবারের অভাবের কারণে নিজের পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাবার সাথে সে নিজেও গাজীপুর এলাকার একটি পোশাক কারখানায় মেকানিক্সের কাজ করত। সেখান থেকে বিগত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেয় শ্রাবন। এ সময় কোনাবাড়ি এলাকায় পুলিশের ছোরা গুলিতে আহত হয় সে। তার ডান চোখ, মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলিবিদ্ধ হলে সে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। এ সময় আহত অবস্থায় পুলিশ তাকে লাঠিপেটা করে চোখে বুটের আঘাত করে পিষে মারার চেষ্টা করে।

বর্তমানে শ্রাবন নিজ বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে। সপ্তাহে একবার তাকে ঢাকায় হাসপাতালে গিয়ে পরামর্শ নিতে হয় চিকিৎসকদের। চিকিৎসকরা জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ শ্রাবণের শরীর থেকে গুলির স্প্রিন্ট বের করা হয়েছে। কিন্তু এখনো তার চোখের অভ্যন্তরে দু’টি ও মাথার চারটি গুলির স্প্রিন্ট রয়ে গেছে, সেগুলো বের করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে গুলিবিদ্ধ চোখে এখন তার দৃষ্টি নেই। সে দৃষ্টি ফিরবে কী না তাও এখনই বলা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় শ্রাবনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে চান বাবা মিনহাজ উদ্দিন। কিন্তু অর্থ সংকটে তা তার পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন।

মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ছেলের দুঃসহ জীবন আমার ভালো লাগে না। ডাক্তাররা বলেছে- তাকে সুস্থ করতে হলে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা করতে হবে। কিন্তু আমার সেই সামর্থ্য নেই। সরকারিভাবে আমি আমার ছেলের চিকিৎসা চাই। শ্রাবনের মা শান্তনা ইসলাম বলেন, আমার ছেলে দেশের জন্য আন্দোলনে গিয়ে এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। কিন্তু কেউ আমার ছেলে খোঁজ নেয় না। এই সব বিষয়ে জানতে চাইলে মেরাজ উদ্দিন শ্রাবণ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতীর উদ্দেশ্যে ভাষন দিয়ে বলেছেন, আন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে থাকবেন। আহতদের জন্য উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু সরকার, প্রশাসন বা আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক এখনো আমার খোঁজ নেয়নি। কাকে বলব এসব কথা। চিকিৎসার জন্য প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় যাওয়া আসা আর ওষুধে অনেক খরচ। আমার দরিদ্র বাবা-মা কষ্ট করেই এসব ব্যবস্থা করছেন। জানি না, ভবিষ্যতে আল্লাহ আমার কপালে কি রেখেছেন, বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী এই তরুণ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত