ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অন্তর্বর্তী সরকারকে বিতর্কিত করতেই মাজারে হামলা

ফরহাদ মজহার
অন্তর্বর্তী সরকারকে বিতর্কিত করতেই মাজারে হামলা

কবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার বলেছেন, মাজারে হামলাকে কখনোই তথাকথিত ইসলাম ও মাজার বিরোধীদের সংঘর্ষ বলে আখ্যায়িত করা যাবে না। এটি শুরু হয়েছে মূলত বিপ্লবের মধ্যে সংগঠিত সরকারকে বিতর্কিত করতে।’ গতকাল মঙ্গলবার মাজার ভাঙার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ যাত্রার আগে সুপ্রিমকোর্টের মাজার গেটে সমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। কবি ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমাদের এই সরকারকে সমর্থন করতে হবে। এখন যেই বিতর্ক চলছে, মাজার বনাম ইসলাম, এটাকে যেন আমরা গ্রহণ না করি।

আমরা ভারত উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েল শব্দটিও উচ্চারণ করবো। আমাদের উদ্দেশ্য হলো, বিপ্লবের মধ্যে সংগঠিত সরকারের শতভুল ও ব্যর্থতা থাকা সত্ত্বেও তাকে আমরা সমর্থন করবো। যদি কেউ এই সরকারকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো। এর মাধ্যমেই আমাদের সংবিধান তৈরি করতে হবে। তার প্রতিফলন কিন্তু আজকের এই সমাবেশ। আমরা এখানে মাজারপন্থিরা এসেছি, ইসলামপন্থিরা এসেছি, প্রগতিশীলরা এসেছি। আমরা সবাই এই বিপ্লবের শক্তি, ঐক্যের শক্তি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইসলামকে আরব বা ইরানের ইসলাম বানানোর চেষ্টা করবেন না। বাংলার ইতিহাস একই সঙ্গে ইসলামের ইতিহাস। আপনারা এতোদিন বাঙালিকে মুসলমান বলে অস্বীকার করেছেন, এখন শুরু করেছেন বাঙালি বলে অস্বীকার করা।

দুটোই কিন্তু একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। দুই রকম শত্রুর বিরুদ্ধে কীভাবে লড়াই করতে হয়, আমাদের তরুণরা কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে যে মাজার ভাঙা হয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের আলেমরা বলেছেন, আমাদের দেখান, কোন আলেম মাজার ভাঙার ফতোয়া দিয়েছেন? আলেমদের আমরা শ্রদ্ধা করি, তাদের কাউকে এমন ফতোয়া দিতে দেখিনি। আমরা যারা ধর্মের নামে সেকিউলারিজমের বিরোধিতা করি, যারা সেকিউলারিজমের নামে ধর্মের নিন্দা করি, তাদের এসব জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এটি ছাড়া আমরা কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র গঠন করতে পারবো না। গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশে মাজারে হামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাংলাদেশে ধর্মীয় বিতর্ক চলছে, এটি থাকবে। এটি নতুন কোনো বিষয় নয়। আমরা ধর্মীয় বিজ্ঞ আলেমদের আহ্বান জানাবো, আপনারা এই ধর্মীয় নির্দেশনা দেন, কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর ওপর হামলা করা যাবে না। ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে। মাজার-মন্দিরে যারা হামলা চালিয়েছে তাদের বিচার করতে হবে। এই সরকার শৃঙ্খলা ফেরাতে এখনো ব্যর্থ। এ সময় সমগীতের সদস্য বিথী ঘোষ মাজার ভাঙার প্রতিবাদে আট দফা দাবি পেশ করেন।

এর মধ্যে রয়েছে : ১. মাজার ও দরবারগুলোর ওপর চালানো প্রতিটি হামলায় যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। সরকার এরই মধ্যে তাদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে, অবিলম্বে সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করতে হবে। ২. মাজারকে মাজারের মতো থাকতে দিয়ে সব মাজার ও দরবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ভেঙে ফেলা প্রতিটি মাজার সরকারের পক্ষ থেকে পুনরায় নির্মাণ করে দিতে হবে।

৩. মাজারে হামলার কারণে যারা আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকারকে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে সম্মানজনক ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ৪. সব ধরনের মব জাস্টিস, মোরাল পুলিশিং, নারীবিদ্বেষী প্রচারণা বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে এবং যারা এগুলো করছে তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫. সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দিতে হবে এবং এটা নিশ্চিত করতে হবে যে শুধু ভিন্নমতের হওয়ার কারণে কিংবা যে কোনো মাধ্যমে যে কোনো ধরনের ভালো বা মন্দ কথা বা উক্তির জন্য কেউ কারো ওপর হামলা করতে পারবে না। হামলা করলে সরকার তার বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেবে। এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন আশিক্কীনে আউলিয়া ঐক্য পরিষদের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া হোসেন অনিমেষ, শিল্পী অরূপ রাহী, গোলাপ শাহ মাজারে পক্ষ থেকে নুরী আলম, নারী একটিভিস্ট সীমা দত্ত, সাংবাদিক সালাউদ্দিন শুভ্রসহ আরো অনেকে। সমাবেশ শেষে গণপ্রতিরোধ যাত্রাটি মাজার গেট থেকে শুরু হয়ে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত