ঢাকা ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজধানীর যানজটে দৈনিক ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট

রাজধানীর যানজটে দৈনিক ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট

ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের কারণে রাজধানী ঢাকায় যানজট বাড়ছে। প্রতিদিন যানজটে প্রায় ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে বলে তথ্য উঠে এসেছে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসের আলোচনা সভায়। বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস উপলক্ষে সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা পরিবহন কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) আলোচনা সভায় এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। ‘ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার সীমিত করি, হাঁটা, বাইসাইকেল ও গণপরিবহনবান্ধব শহর গড়ি’ শিরোনামের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক।

তিনি বলেন, ঢাকা শহরে চার কোটি ট্রিপের মধ্যে ৩৮ শতাংশ ট্রিপ সংঘটিত হয় হেঁটে। ফুটপাতও এ শহরে অনেক অপ্রশস্ত হয়ে গেছে। পথচারীদের প্রাধান্য দিয়ে নগর যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আমাদের চেষ্টা থাকবে। এ শহরে দেখা যায় একটি শিশুর জন্য একটি ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার হচ্ছে। ফলে যানজট বাড়ছে এবং গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়লেও শৃঙ্খলা না থাকায় সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি জানান, রাজধানীর একটি সড়ককে যেন সপ্তাহে একদিন গাড়িমুক্ত রাখা যায়, সে জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করবেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স-বিআইপির সভাপতি ড. আদিল মোহাম্মদ খান মূল প্রবন্ধে বলেন, গাড়িভিত্তিক উন্নয়নের দুষ্টুচক্রের ফলে রাস্তা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভারের সংখ্যা বেড়েছে, গাড়িও বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে যানজট এবং দূষণ। যানজটের কারণে রাজধানীতে দিনে বাংলাদেশে ‘কার ফ্রি ডে’ অনেক বছর ধরে উদযাপন করা হলেও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নীতি নির্ধারণী মহল থেকে কোনো স্থায়ী উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করা, ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে।

ড. আদিল মুহাম্মদ খান তার বক্তব্যে ‘কার ফ্রি স্কুল জোন’ গড়ে তোলা, পথচারীবান্ধব রাস্তা তৈরি, ব্যক্তিগত গাড়ির প্রণোদনা সীমাবদ্ধ করা, বাস রুট যৌক্তিকীকরণ প্রকল্পের সেবা ও পরিধি বৃদ্ধি, গণপরিবহন তথা বাস, রেল ও নৌপথ এবং হাঁটার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলেন। ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, ঢাকা শহরে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিবন্ধিত মোট মোটরযানের মধ্যে গণপরিবহন মাত্র ১০ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যক্তিগত গাড়ির অনুপাতে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ছে না। জনবান্ধব নগর যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার সীমিত করে বহু মাধ্যমভিত্তিক সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।

২০০১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্বের ৩৩টি দেশের প্রায় ১ হাজার শহরে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন করা হয়। বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ৪ হাজার শহরে দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। এদিকে রাজধানীর রাস্তায় দিনের বেলায়ও চলছে দূরপাল্লার বাস, রাস্তায় দেদারছে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। তার ওপর সড়কের খানাখন্দেও তৈরি হচ্ছে যানজট।

ট্রাফিক পুলিশ থেকেও নেই। কেউ অবশ্য আগের মতো মানছেও না পুলিশের নির্দেশ। অফিস ছুটি হয় বিকেলে; সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতে চললেও মোড়ে মোড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে যানবাহন। রাত পেরিয়ে সকাল। পরদিন আবারও কাজে বেরিয়ে আবারও সেই যানজট। মোহাম্মদপুর থেকে রওনা দিয়ে বারিধারার দিকে যাচ্ছিলেন এক বেসরকারি চাকরিজীবী। বিজয় সরণি আসতেই চলে গেছে তার দেড় ঘণ্টা। এমন অনেকেই আছেন হুট করে যানজট বেড়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না।

এতো যানজটের কী কারণ? সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পুরো রাস্তাজুড়ে দিনের বেলাতেও চলছে দূরপাল্লার বাস। মূল রাস্তায় দেদারছে উঠে পড়ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। প্রতি মোড়ে মোড়ে সংযোগ সড়কের মুখগুলো আটকে পড়ছে এ রিকশার কারণে। রাস্তার মাঝেও যেখানে সেখানে ঘুরছে রিকশা, আটকে পড়ছে অন্য যানবাহন। যাচ্ছেতাই চলায় ঘটছে দুর্ঘটনা। তাৎক্ষণিক লেগে যাচ্ছে বাকবিতণ্ডা। সমাধান করার যেন কেউ নেই। এ ঘটনাগুলো আগে সমাধান করে রাস্তা চালু রাখতো পুলিশ, এখন সবাই মিলে বিচারক, আর সব মিলে যানজট। রাস্তায় কোনো কোনো পয়েন্টে দেখা যাচ্ছে পুলিশ, তবে তাদের নির্দেশ কেউ মানছে না। যেখানে দাঁড়াতে মানা, পুলিশের সামনেই সেখানে দাঁড়াচ্ছে বাস।

গত ৫ আগস্টের পর রাস্তায় ট্রাফিকের কাজ করেছিল শিক্ষার্থীরা। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলছেন, পুলিশের ভীতির আসলে কোনো কারণ নেই। এছাড়াও একই পথে চলছে পাতাল মেট্রোরেলের কাজ। রাস্তার অর্ধেক বন্ধ সে কাজে। সরুপথে যান চলে ধীর গতিতে। ততক্ষণে পেছনে তৈরি হয় লম্বা লাইন। এর বাইরে টানা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে রাস্তা। মেরামত হয়নি বলে বেড়েছে খানাখন্দ। সেসব পথেও যান চলছে ধীর গতিতে। রাস্তায় সীমিত পুলিশ, কার্যক্রমও সীমিত। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ কতটা জরুরি হারে হারে টের পাওয়া যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা কারণ বের করে সমাধানের কথা বলেছেন, দেখা যাক কী হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত