ঢাকা ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রধান উপদেষ্টাকে শিক্ষক নেটওয়ার্কের খোলা চিঠি

প্রধান উপদেষ্টাকে শিক্ষক নেটওয়ার্কের খোলা চিঠি

ভিন্নমত বা সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে, তা সুস্পষ্ট করার দাবি তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর লেখা খোলা চিঠি পড়ে শোনান বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন।

খোলা চিঠিতে বলা হয়, অভ্যুত্থানের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের অসহিষ্ণু, আক্রমণাত্মক ও নৈরাজ্যবাদী জমায়েত আমরা লক্ষ করছি। সেসব জমায়েত থেকে অপছন্দের গোষ্ঠী ও দলের বিরুদ্ধে কেবল হিংসাত্মক কথাবার্তাই বলা হচ্ছে না, ক্ষেত্রবিশেষে সেসব মানুষের ওপর হামলাও চালানো হচ্ছে। তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্ঘবদ্ধ হিংস্রতায় নিহত হয়েছেন তিন জন। অপরাধীদের ধরতে গিয়ে একজন সেনা কর্মকর্তা হামলায় নিহত হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষকে। রাস্তায় ও পর্যটন অঞ্চলে নারীদের ওপর হামলা, নিগ্রহ এবং চরম হেনস্তা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শ্রমিকদের নিগৃহীত করছেন মালিকপক্ষের গুণ্ডারা।

বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও দফতরে ছোট ছোট অজস্র হিংস্রতার ঘটনা ঘটেই চলেছে। মাজার, মন্দির, শিল্প- স্থাপনা ভাঙচুর থেকে শুরু করে বাউল ও আহমেদিয়াদের ওপরও আক্রমণ হয়েছে। এসব দুর্ঘটনা দীর্ঘদিন সমাজের মধ্যকার নানাবিধ অমীমাংসা ও গণতন্ত্রহীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে আমরা মনে করি। এভাবে চলতে থাকলে নাগরিকদের নিরাপত্তাবোধের অভাব তীব্রতর হবে এবং সংকট উত্তরণে সরকারকে আরো বেগ পেতে হবে। এই ক্রান্তিকালে বর্তমান সরকারের নির্মোহ ভূমিকা পালন ও আশু পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি বলেও উল্লেখ করেন গীতি আরা নাসরিন। অতিউৎসাহী গোষ্ঠীগুলোর অসহিষ্ণুতা প্রশমণের জন্য যারা এসব ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচার করছেন এবং বিভিন্ন পরিচয় ও সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর বা নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করছেন তাদের থামানোর দাবি জানিয়ে খোলা চিঠিতে তিনি আরো বলেন, তা না করে সরকার বা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেরাই যদি এসব হস্তক্ষেপকারীদের সাহস যুগিয়ে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতার ভয় দেখিয়ে কোনো গোষ্ঠীর কথা পালনে বাধ্য করেন, যেমনটা ঘটেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সেখানে চাপে পড়ে প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে রাজি হয়নি বলে একটি আলোচনা সভা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন শিক্ষার্থীরা)। তাহলে আর এত দামে কেনা জুলাই অভ্যুত্থানের কোনো আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা হলো? এতে দাবি জানিয়ে বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা আসতে হবে যে তারা আসলে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ কীভাবে নিশ্চিত করবেন এবং অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে তাদের অবস্থান তাদের নীতিসমূহের মাধ্যমে কী করে স্পষ্ট করবেন। সহিংস জমায়েতের সংগবদ্ধ হিংস্রতা থেকে ভিন্ন মত বা সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবেন তা সুস্পষ্ট করতে হবে। কবে নাগাদ প্রধান উপদেষ্টা বরাবর এই চিঠি পাঠানো হবে জানতে চাইলে অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, আমরা চেষ্টা করবো আজকেই পাঠানোর তবে আজ সম্ভব না হলে সর্বোচ্চ দু একদিনের মধ্যেই এই চিঠি পাঠানো হবে।

এ সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সায়েদ ফেরদৌস বলেন, আমরা সরকারকে সময় না দিয়ে নিজেরাই আইন হাতে তুলে নিচ্ছি। মালিকপক্ষের গুন্ডারা শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার করছেন। মাজার, মন্দির ও বিভিন্ন শিল্পস্থাপনা ভাঙচুর করা হচ্ছে।

আমরা দেখেছি, একটা গোষ্ঠী আমাদের অনেক শিক্ষককে ইসলাম-বিদ্বেষী বলে ট্যাগ দিচ্ছে। আমাদের যোগ্যতা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলতে পারে, কিন্তু ঢালাওভাবে কেন এসব ট্যাগ দিয়ে শিক্ষকদের হেনেস্তা করা হচ্ছে আমরা বুঝতে পারছি না। তিনি আরো বলেন, সরকার পতনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। সরকারের পতনের আন্দোলনে সব ধর্মের, সব বর্ণের, সব দলের মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু তারপরেও কিছু গোষ্ঠী নিজেদের মূল স্টোকহোল্ডার হিসেবে দাবি করছে। ছাত্ররাজনীতি কোনো সমস্যা না। কিন্তু সেখানে গণতন্ত্র থাকতে হবে। রাজনীতির নামে কেউ চাঁদাবাজি, হল দখল, সিট দখল করলে সেটা তো কোনো রাজনীতি না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত