টানা ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড়
ঠাঁই নেই হোটেল-মোটেলে
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার
দুর্গাপূজার সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি যোগ হয়ে চার দিনের ছুটি চলছে। এই লম্বা ছুটিতে অবকাশ যাপনে দেশের নানা প্রান্ত থেকে কক্সবাজার ছুটে আসছেন পর্যটকেরা। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পর্যটকেরা শহরের সমুদ্রসৈকত ও আশপাশের পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করছেন। আগামীকাল রোববার পর্যন্ত শহরের অধিকাংশ হোটেল-মোটেল ও রির্সোটের কক্ষ বুকিং হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। দুপুরে লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী সমুদ্রসৈকতে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রসৈকতে ভরপুর পর্যটক। দীর্ঘদিন নিষ্প্রাণ থাকা সৈকত তীর সেই পুরোনো রূপে ফিরেছে। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যে চাঙাভাব দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া শহরের কলাতলী মোড় থেকে ৮৪ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে ছুটছেন পর্যটকেরা। এ সড়কে দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি, হিমছড়ির জাতীয় উদ্যান, ছড়া ও ঝরনা, ইনানী ও পাটুয়ারটেক পাথুরে সৈকত, টেকনাফ, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামু বৌদ্ধপল্লি, চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ও নিভৃতে নিসর্গে পর্যটক ভিড় করছেন। পর্যটকরা সকাল থেকে গভীররাত পর্যন্ত সৈকততীরে ঘুরে কেনাকাটাসহ আনন্দ-উচ্ছ্বাসে সময় পার করছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই চারদিনে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হবে।
আগামীকাল রোববার পর্যন্ত যেসব পর্যটক আসতে চান, তাদের অনলাইনে কক্ষ বুকিং দিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক ও হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার।
তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে আগামীকাল রোববার পর্যন্ত তারকা ও মাঝারি মানের সব হোটেল-মোটেলে কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। কিছু রিসোর্ট, গেস্ট হাউস ও কটেজে কক্ষ খালি থাকলেও তাও বুকিং হয়ে যাবে। ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম জানান, পর্যটকের চাপ সামাল দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।
হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন বিভাগের কক্সবাজার অফিস প্রধান ইমতিয়াজ নূর সুমেল বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া চারদিনের ছুটি। হঠাৎ ছুটি পেয়ে, কক্সবাজার আসতে আগাম বুকিং দিয়েছেন কিছু ভ্রমণপ্রেমী পরিবারে। চারদিনের ছুটিতে আমরা এখন পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ বুকিং পেয়েছি। এরপর ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বুকিং রয়েছে ৮০-৮৫ ভাগ রুম। সেন্ডি বিচ হোটেল ও রেস্তোরাঁর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও বৃহত্তর বীচ ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবদুর রহমান বলেন, ‘অনেকদিন পর টানা ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজার চেনা রূপে ফিরেছে। পর্যটক আসায় ব্যবসায়ীরা খুশি। হোটেল দি কক্স টু-ডের সহকারি মহাব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে সব কক্ষ বুকিং রয়েছে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঢাকা থেকে আসা স্কুল শিক্ষক রকিবুল ইসলাম জানান, তারা সহকর্মিরা মিলে মোট ৩০ জন গতকাল শুক্রবার সকালে কক্সবাজার এসেছেন। এসেই বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আনাগোনা দেখে খুশি বেড়েছে। সৈকতের পরিবেশ ও প্রকৃতি উপভোগ করছেন নিজেদের মত।
তবে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে হোটেল ভাড়া একটু বেশি নেয়া হচ্ছে। পর্যটক বেশি হওয়ায় এমন পরিস্থিতি বলে মন্তব্য করেন তিনি। পাহাড়ের ঝর্ণা হিমছড়ি, সৈকতের আকাশ জুড়ে শরতের বিমুগ্ধ কথন দেখেছেন ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফাজুল কানম। তিনি বলেন, কক্সবাজার সত্যিই প্রকৃতির রহস্য ঘেরা।
এক ঋতুতে এক এক পরিবেশ। চিকিৎসক দম্পতি আরিফুল আনোয়ার জানান, সন্তানসহ কক্সবাজার এসে সত্যিই আনন্দিত। প্রকৃতি উপভোগ করছেন নিজেরা। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘ভ্রমণপিপাসুদের বিচরণ নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটদের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছেন। কোথাও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণের নিদের্শ দেয়া আছে।