এবার পূজার ছুটিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকের ভিড় জমে উঠেছে। নানা বয়সী নরনারী আশ্বিনের শেষে বৃষ্টিভেজা সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মনের আনন্দে। গত বৃহস্পতিবার থেকেই পর্যটন নগরী সিলেটের হোটেল মোটেলে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। অনেকেই সিট না পেয়ে বিপাকে পড়েন।
হজরত শাহজালাল (র.) ও হজরত শাহপরানসহ (র.) ৩৬০ আউলিয়ার দেশ সিলেটে দিগন্তবিস্তৃত হাওর, পাহাড়, ঝরণা, সবুজ ঢেউ খেলানো চা-বাগান, বনবনানী, দূরে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়, গভীর নীলে ভরা আকাশসহ প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্যের ডালি মেলে ধরেছে। জলার বন রাতারগুল, বিছনাকান্দি, জাফলং, টাঙ্গুয়া, হাকালুকি হাওরসহ বিভিন্ন নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক স্পট সিলেট বিভাগকে দিয়েছে আলাদা স্বকীয়তা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সিলেটে শীত, বর্ষা, হেমন্ত-সব মৌসুমই উপভোগ্য। কয়েক দিনের ছুটি পেলেই পর্যটকরা ছুটে আসেন এখানে। এবার সাপ্তাহিক ছুটিসহ পূজার ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় পর্যটকদের আগমনও বেড়ে গেছে। সবুজ পাহাড়, নীল আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা, চা-বাগানের সবুজ সৌন্দর্য মন কেড়ে নেয়। টিলার ফাঁকে ফাঁকে আঁকাবাঁকা রাস্তা, জাফলং, ভোলাগঞ্জ, ডাউকী ব্রিজ, তামাবিল স্থলবন্দর, মাধবকুণ্ড, লাউয়াছড়া, বিছনাকান্দিসহ শ্রীমঙ্গলের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমোহিত হন পর্যটকরা। এর মাঝে মাঝে হঠাৎ বৃষ্টির পরশ-সে এক অন্যরকম অনুভূতি। বিছনাকান্দিতে জলের ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাথরগুলো প্রকৃতির সৌন্দর্যে যোগ করেছে এক অন্যরকম মাত্রা। তেমনি গতকাল সকাল থেকেই উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় সিলেট নগরীসহ আশপাশের পর্যটন স্পটগুলোতে। কোম্পানীগঞ্জের খেয়াঘাটে কয়েক শ পর্যটক নৌকার অপেক্ষা ছিলেন। ওদিকে সারি সারি নৌকায় করে পর্যটকদের বিছনাকান্দির দিকে যেতে দেখা যায়। নোয়াখালী থেকে বিছনাকান্দিতে ঘুরতে আসা এনামুল বলেন, ‘এতদিন বিছনাকান্দির নাম শুনেছি। নিজ চোখে এর অপার সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। আমার পরিবারের সদস্যরাও খুশি।’ সিলেট নগরীর তালতলাস্থ হোটেল হিলটাউনের ম্যানেজার জানালেন হোটেলের ৭০টি রুম বুক হয়ে গেছে। কোনো সিট খালি নেই। মির্জাজাঙ্গাল এলাকার গ্রান্ড প্যালেস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার ফারুক রশিদ জানালেন, তাদের হোটেলের সবগুলো কক্ষই আগামী তিন-চার দিন বুকিং থাকবে। সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি গোলাম কিবরিয়া বলেন, এই ছুটিতে সাদা পাথর, জাফলং ও বিছনাকান্দিতে লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম হবে। বন্যা, আন্দোলনসহ নানা কারণে এতদিন সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোতে ‘খরা’ চলছিল। ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনছিলেন। এখন ছুটিতে সিলেটের পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মুখে হাসি ফুটেছে। জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা পর্যটকদের সেবাদানে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তাদের সার্বিক নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি নেই।’