বুড়িগঙ্গা তীরে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক

প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মোস্তফা কামাল, কেরানীগঞ্জ

দখল, দূষণ আর ভরাটের কারণে জর্জরিত বুড়িগঙ্গা নদীতে নতুন করে দখলের মহোৎসব শুরু হয়েছে। রাতারাতি দোকানঘর, টংঘর নির্মাণ করা হচ্ছে নির্বিচারে। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর একশ্রেণির লোক নদীর তীর দখল করে এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছেন। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বুড়িগঙ্গা তীরের আগানগর বেড়িবাঁধ ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে শতাধিক নতুন দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এসব দোকানে কেউ ভাতের হোটেল, কেউ চা-সিগারেটে বিক্রি করছেন। আগে থেকেই বুড়িগঙ্গার এই অংশে শতাধিক দোকানঘর ও টংঘর রয়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে প্রতিদিনই বাড়ছে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের সংখ্যা। লাভলু নামে এক দোকানী বলেন, আমি মাসখানেক আগে দোকান তুলে চা-সিগারেট বিক্রি করছি। দোকান তুলতে কারো পারমিশন নিয়েছেন কী না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এলাকার এক বড় ভাইকে বলেই দোকান তুলেছি। বড় ভাই কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বোঝেন না বড় ভাই কে? সে রাজনীতি করে। পুরি সিংগারা বিক্রিতা আজাদ বলেন, এক মাস হলো আমি এখানে দোকানদারি করছি। সভাপতির কাছে থেকে অনুমতি নিছি। সভাপতি কে জানতে চাইলে তিনি ঘাটের পাশেই এক লোককে দেখিয়ে দেন। ওই লোক নিজেকে কেরানীগঞ্জ থানা ঘাট মাঝি শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার বলে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, অসহায় লোকজন দোকানপাট তুলে কিছু করে খাচ্ছে। সরকার চাইলে ভেঙে দিবে এতে অসুবিধা কোথায়। এখানেও আগেও তো দোকানপাট ছিল। কালিগঞ্জ তেলঘাট এলাকা ঘুরেও এমন চিত্র দেখা গেছে।

স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি বিআইডব্লিউটিএর কিছু অসাধু কর্মচারী এসব অবৈধ স্থাপনা থেকে মাসোহারা নিয়ে থাকে। নদী তীরের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারনে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতা এসবের সঙ্গে জড়িত। সরকারের প্রতি দ্রুত এসব স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানাই। আমরা নদীর তীরে মুক্ত হাওয়া নিতে চাই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৯ কিলোমিটার বুড়িগঙ্গার দুই তীরে ৬ হাজারেরও বেশি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। বছর তিনেক আগে টানা সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ৩ সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বিআইডব্লিউটিএ। এর মধ্যে ছিল বহুতল ভবন, পাকা মার্কেট, বাড়ি, দোকানঘরসহ নানা অবৈধ স্থাপনা।

তবে উচ্ছেদের পর বেশির স্থাপনাই প্রতিস্থাপিত হয়েছে। নদীর তীরের একটা অংশে দেখা যায়, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে তীরে। দুই তীরে শতাধিক স্পট রয়েছে যেগুলো ময়লার ভাগাড় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নদী দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা নদী বন্দরের (সদরঘাট) নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন বলেন, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি আমরা শুনেছি। এরই মধ্যে ওই এলাকায় স্থাপনা সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হয়েছে। তারা সরে না গেলে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।