পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার সমিতির ৯ দফা দাবি
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারবৃন্দের সমসাময়িক সমস্যা ও সমাধানকল্পে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ঠিকাদার নেতারা ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর এক রেস্তোরাঁয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার সমিতির মতবিনিময় সভায় এ নয় দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এ সময় ঠিকাদার সমিতির নেতারা বর্তমানে ঠিকাদারির সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে ও সমাধানের জন্য আলোচনা করেন। তাদের উপস্থাপিত ৯ দফা দাবি সমূহ হলো: ১. বর্তমানে সব কাজের ক্ষেত্রে ঙঞগ পদ্ধতিতে টেন্ডার আহ্বানের ফলে কয়েকজন নির্ধারিত ঠিকাদার সব কাজ বরাদ্দ পাচ্ছেন। এতে আঞ্চলিক সাধারন ঠিকাদারা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ছিটকে পড়ছেন। এই বিদ্যমান অবস্থার অবসানের জন্য অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতের সব কাজ খঞগ ভিত্তিতে বাস্তবায়ন এবং অউচ ভুক্ত সব প্রকল্পের কাজের ন্যূনতম ১০ ভাগ কাজ খঞগ ভিত্তেতে করার জন্য প্রয়োজনে প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান সংশোধন করার আহ্বান জানিয়েছেন। ২. ঠিকাদারদের ইন্সুরেন্স করতে প্রিমিয়াম ও ভ্যাট বাবদ যে অর্থ একতরফা তাদের চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে সাধারন বীমা করপোরেশন থেকে ইন্সুরেন্স করা বাধ্যতামূলক করেছে তা তাদের উপর জুলুম। তার জন্য চলমান কাজে ইন্সুরেন্স করা সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় ভেরিয়েশন হিসেবে প্রতিটি কাজের বিপরীতে প্রদান ও ভবিষ্যতের সকল টেন্ডারে ইন্সুরেন্স আইটেম বাবদ ফিক্সড রেট আইটেম অন্তর্ভুক্ত এবং ইন্সুরেন্স করা সংক্রান্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জারীকৃত সার্কুলার অবিলম্বে বাতিলের আহ্বান করা হয়। ৩. সরকার গঠিত টাস্ক ফোর্স হর হামেশাই সাইট থেকে ব্যাগের নমুনা সংগ্রহ করে কোনো ব্যতয় পেলেই ব?্যাগ বাতিল করেন। প্রতিটি গণনার সময় নমুনা সংগ্রহ ও টেস্ট সম্পাদনের যাবতীয় ব্যয় তাদের বহন করতে হয়। এ টেস্টের ফলাফল ঠিকাদারদের সরবরাহ করা হয় না এবং অনেক বিলম্বে তারা মৌখিকভাবে জানতে পারে। তখন ব্যাগ বাতিলের বিষয়ে জিও-টেক্সটাইল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এর নিকট কোনো অভিযোগই গ্রহণযোগ্য হয় না। এ অবস্থায় টাস্কফোর্স কর্তৃক সব জিও-টেক্সটাইল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে পানি উন্নয়ন বোর্ডে তালিকাভুক্ত করে জিও-ব্যাগ গণনার সময় যে নমুনা ফেল করবে, তাকে টাস্কফোর্স কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে। ৪. কোনো কাজে এক হাজার ব্লক টেস্ট করার পর যদি ১টি ব্লকের শক্তি যাচিত শক্তির নিচে নামে তাহলে গণনাকৃত সব ব্লকের উপর শতকরা হারে ব্লক বাতিল করা হয় এবং সেইসঙ্গে সেই তারিখে নির্মিত সব ব্লকও বাতিল করা হয়। এটি সরাসরি অন্যায়, অনৈতিক এবং ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। এতে ঠিকাদার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এ জন্য একই সাথে গণনাকৃত ও গৃহীত সব নমুনার প্রাপ্ত শক্তির গড় হিসেবে টাস্কফোর্সের ফলাফল নির্ধারণ করতে হবে এবং ব্লক বাতিলের ক্ষেত্রে রিডাকশন ফ্যাক্টর হিসেবে যথাক্রমে ১. ১.৫, ২, ২.৫, ৩ ও ৩.৫ ধরে হিসেব করতে হবে। ৫. সব কাজের ক্ষেত্রে প্রি এবং পোস্ট ওয়ার্ক পরিমাপ গ্রহণের ক্ষেত্রে যৌথ স্বাক্ষরের বিধান থাকলেও এটা অনুসরণ করা হচ্ছে না। এ ছাড়া নদী/খালের যে কোনো ড্রেজিং কাজ এর ক্ষেত্রে পরিমাপ গ্রহণে বিলম্বের কারণে ড্রেজিং করা জায়গায় ব্যাপক সিলট্রেশন ও বাঁধ নির্মাণ সমাপ্তির পরও পরিমাপ গ্রহণে বিলম্ব হওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ অবস্থায় যৌথ পরিমাপ গ্রহণ এর পর কাজের ভৌত পরিমাণ নির্ধারণ পূর্বক সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে অবহিত করণ ও সব ড্রেজিং ও বাঁধ এর কাজের ক্ষেত্রে ১০ ভাগ দৈর্ঘ্যে সেগমেন্ট বিবেচনা করে এক বা একাধিক সেগমেন্টের কাজ সমাপ্ত হলে সমাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।
৬. অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, টাকা বরাদ্দের পরও বিভিন্ন বিভাগীয় দপ্তর বিল প্রদানে অস্বাভাবিক বিলম্ব হয়। বিল বিলম্বের কারণে ঠিকাদারের ব্যাংক লোনের সুদের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় অর্থ বরাদ্দের ১০ দিনের মধ্যে প্রকল্পের চলমান সব কাজের বিল প্রণয়ন পূর্বক একই সঙ্গে দপ্তরে প্রেরণের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছেন। ৭. সম্পাদিত কাজের পিজি রিলিজ, চূড়ান্ত বিল প্রনয়ন, সার্টিফিকেট ইস্যু এবং রিটেনশন মানি ফেরত কঠিন হওয়ায় এবং অধিকাংশ কর্মকর্তা অনীহা প্রদর্শনসহ নানা সমস্যার কারণে তারা নানা বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে। এ অবস্থায় অচিরেই কোনো কাজ শেষ হওয়ার ২৮ দিনের মধ্যে পিজি রিলিজ করতে হবে এবং কাজ শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত বিল প্রণয়ন করে কমপ্লিশন সার্টিফিকেট ইস্যু করতে হবে। ৮. অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট এলাকার তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের পরিবর্তে দূরবর্তী এলাকা থেকে ঠিকাদার আমদানি করা হয় এবং আপদকালীন কাজ বাস্তবায়নের সময় নির্বাহী প্রকৌশলী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কাজ সম্পর্কিত কোন তথ্যাদি / নথি পত্রাদি সরবরাহ করেন না। সবকিছুই গোপন / অপ্রকাশিত থাকায় বিলের অংশবিশেষ বেনামে গোপনে করে আত্মসাৎ করা হয়। এই অবৈধ কাজ বন্ধ হওয়া জরুরি। এ অবস্থায় আপদকালীন কাজ বাস্তবায়ন তদারকির জন্য পাউবোর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এবং প্রধান প্রকৌশলী এর প্রতিনিধি নিয়োজিত করতে হবে। ৯. বাংলাদেশ ঠিকাদার সমিতি সরকারি নিবন্ধিত ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্যতম ডেভোলপমেন্ট পার্টনার। এই সংস্থার জন্য পানি ভবনে কোন অফিস স্পেস বরাদ্দ নাই। তাই পানি ভবনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার সমিতির জন্য একটি যথাযথ কক্ষ বরাদ্দের জন্য জোর দাবি জানানো হয়।
আরাধনা এন্টারপ্রাইজের মাহবুবুল হক রিপনের সঞ্চালনায় খন্দকার শাহিন আহমেদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন— খায়রুল হুদা, ভাওয়াল কন্সট্রাকশন লিমিটেডের ফকরুদ্দিন আহমেদ, ইব্রাহিম ট্রেডার্সের বাচ্চু মিয়া, নিয়াজ ট্রেডার্সের নিয়াজ আহমেদ খান, এএইচএম সাইফুল্লাহ রুবেল, প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির, বিপ্লব কুমার গুণ বাবু, ইঞ্জিনিয়ার ইয়াসিন মোল্লাসহ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুই শতাধিক ঠিকাদার।