‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার সংক্রান্ত আইন ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী ২৭৩০/২০১৩ রিট নিষ্পত্তিতে বিলম্ব করার প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে ডাক্তারদের তিনটি সংগঠন। গতকাল শনিবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের উদ্দেশ্যে জড়ো হয় সংগঠন তিনটির নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেয় ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস, ইউনাইটেড মেডিকেল অর্গানাইজেশান অব বাংলাদেশ এবং বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক ফোরাম। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ডাক্তাররা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য পৃথিবীজুড়ে চিকিৎসকদের চিকিৎসা কর্মে সহায়তা করার জন্য অ্যালাইড হেলথ প্রফেশন রয়েছে, যেখানে নার্স, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, মিডওয়াইফারি, বিভিন্ন কারিগরি বিষয় সংশ্লিষ্ট টেকনোলজিস্টসহ নির্দিষ্ট কিছু জনশক্তি রয়েছে যারা নির্দিষ্ট কর্ম বাস্তবায়ন করে থাকেন। প্রত্যেকের উচিত তার নিজস্ব অবস্থানের স্বকীয়তা বজায় রেখে নির্ধারিত কাজ বাস্তবায়ন করা। মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট যদি দাবি করেন তারা ডাক্তার, নার্স যদি দাবি করেন তারা ডাক্তার, ফিজিওথেরাপিস্টসহ অন্যান্য টেকনোলজিস্টরা যদি দাবি করেন তারা ডাক্তার তাহলে তো পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধসে পড়বে। তারা বলেন, কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, ২০১৩ সালে ডিএমএফ ডিগ্রিধারী সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের (স্যাকমো) কয়েকজন বিএমডিসি আইনকে অবজ্ঞা করে নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করার জন্য আদালতে একটি অযৌক্তিক, আইন বিরোধী রিট দায়ের করেন। ২০১৩ সালের ৩০ই এপ্রিল এই রিটের প্রথম শুনানি হয়, তারপর থেকে এক অদৃশ্য কারণে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই রিটটি আদালতে ৬৭ বার কজ লিস্টে আসার পরও শুনানি হয়নি।
সর্বশেষ গত ২৭ অক্টোবর এই রিটের ৬৭তম শুনানি ছিল, কিন্তু ওই দিনও এই রিটের শুনানি হয়নি। বিভিন্ন মেডিকেলের এমবিবিএস ডাক্তাররা আরো বলেন, এভাবে জনগুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়কে বারবার পেছানোর মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষকে সঠিক স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির মৌলিক ও রাষ্ট্রীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। যারা ডাক্তার না তারা নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করে চিকিৎসা দেওয়ার মাধ্যমে জনগণকে প্রতারিত করে যাচ্ছেন, যার কারণে অবাধে শক্তিশালী এন্টিবায়োটিকগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে, এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য একটি বিশাল হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, অবাধে স্টেরয়েড নামক ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে যা জনস্বাস্থ্যের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে, অনেক জটিল রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ রকম অসংখ্য অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছে এই দেশের জনসাধারণ, যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার অন্যতম কারণ।
ডাক্তাররা বলেন, ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ যখন রাষ্ট্রের সব সেক্টরকে নিয়মতান্ত্রিক আর সুশৃঙ্খল করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে, ঠিক এই সময়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম অব্যবস্থাপনার অন্যতম কারণ এই অচিকিৎসকদের চিকিৎসক হিসেবে চিকিৎসা দেওয়ার বৈধতা। এটা এই দেশে কখনোই কাম্য নয়।