‘এখনই সময় গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর’
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ মোটরযান, অনুপযুক্ত সড়ক, মালিক শ্রেণির অপেশাদারী ব্যবস্থাপনা, সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের আন্তঃসমন্বয়হীনতা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত দেশের সড়ক মহাসড়ক এবং পরিবহন খাত। এখনই সময় গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর। বিদ্যমান বাস্তবতায় সড়ক পরিবহন খাতে যথাযথ সংস্কার, শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে যথাযথ সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। গতকাল শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন (রোসেফা) কার্যালয়ে আয়োজিত সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা ও কাঠামোগত সংস্কার বিষয়ে জাতীয় সংলাপ আয়োজন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংলাপের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, যারা গণপরিবহন পরিচালনা সংক্রান্ত নীতি তৈরি করেন তারা গণপরিবহন ব্যবহার করেন না। ফলে নীতি কার্যকর হয় না। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতা এ খাতে শৃঙ্খলা না থাকার আরেকটি কারণ। ‘গণপরিবহন ৫৩ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করে। আর ব্যক্তিগত যানবাহন ১১ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করে। অথচ ব্যক্তিগত যানবাহন ৭০ শতাংশ সড়ক দখল করে চলে। এটা সাধারণ মানুষের প্রতি চরম বৈষম্য। তাই, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর এখনই সময়।’
ঘোষণাপত্রে আরো বলা হয়, রাজধানীতে মোটরবাইক ও ব্যক্তিগত যানবাহন নামাতে আইনগত কোনো বাধা নেই। কিন্তু বাস-মিনিবাস নামাতে নানা বাধা রয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সম্পর্কে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন প্রশাসনিক ক্যাডার থেকে, যাদের সড়ক বা মোটরযান-সম্পর্কিত বাস্তব জ্ঞান থাকে না। বিআরটিএতে সড়ক ও মোটরযান বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা কোনো অ্যাকাডেমিশিয়ানকে চেয়ারম্যান করার পরামর্শ দিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ্যতাসম্পন্ন জনশক্তি থাকা এবং বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণে চালক তৈরির প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করার জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে।
ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) সমালোচনা করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, মানুষ এই প্রতিষ্ঠান চেনে না, তাদের কার্যকারিতা নেই। ডিটিসিএকে কার্যকর করতে হবে। ফাউন্ডেশনটি আরো বলেছে, সড়ক ও সড়ক পরিবহনের সঙ্গে বিআরটিএ, ডিটিসিএ, বাংলাদেশ পুলিশ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, এলজিইডি, স্থানীয় সরকার প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ সফল হচ্ছে না। দুর্ঘটনাও কমছে না। এই সমন্বয়হীনতা দূর করতে একটি উচ্চপর্যায়ের কো-অর্ডিনেশন বডি তৈরি করতে হবে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন রাজধানীতে কোম্পানিভিত্তিক বাস সার্ভিস চালুর পরামর্শ দিয়েছে।
তাদের মতে, এতে রাজধানীতে ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার নিরুৎসাহিত হবে এবং যানজট কমবে বলে আশা তাদের। চাঁদাবাজিকে সড়কে বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ উল্লেখ করে ফাউন্ডেশন বলেছে, গণপরিবহনের চাঁদাবাজির বিপুল অর্থ রাষ্ট্রের বহুদূর পর্যন্ত পৌঁছায়। তাই গণপরিবহনের উন্নতি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। রাজনৈতিক পোশাকের একটি গোষ্ঠী গণপরিবহন খাতে অব্যবস্থাপনা টিকিয়ে রাখে নিজেদের স্বার্থে। তারা আরও বলেছে, অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ মোটরযান, অনুপযুক্ত সড়ক, মালিকশ্রেণির অপেশাদারি ব্যবস্থাপনার কারণে সড়কে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এই দায় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তৈরি করা সড়কের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অনুষ্ঠানে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন আগামী ৭ ও ৮ ডিসেম্বর একটি জাতীয় সংলাপের আয়োজনের ঘোষণা করেন।
এই সংলাপে জাতীয় টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পর্যালোচনা ও বাসবায়ন পদ্ধতি, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের ৩৭ অংশীজন অংশগ্রহণ করবেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ জাহাঙ্গীর, ফেরদৌস খান ও অধ্যাপক হাসিনা বেগম এবং বুয়েট অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ রাব্বি, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান ও যুগ্ম সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম।