ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে আশু প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ধূমপানের নির্দিষ্ট স্থান বিলুপ্তি, তামাক পণ্যের প্রদর্শন ও কোম্পানির কার্যক্রম নিষিদ্ধ, তামাক পণ্যের খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করাসহ ৬টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
গতকাল বেলা ১১টায় ঢাবির কলা অনুষদের শহীদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পূয়র (ডরপ) এর কারিগরি সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা) এই সভার আয়োজন করে। সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহির সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিটিএফকে-এর লিড পলিসি এডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ও সমন্বয়ক আব্দুল কাদের।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডরপ-এর উপদেষ্টা মো. আজহার আলী তালুকদার এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডরপ-এর উপ-নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান। সভায় উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসির সাথে সামঞ্জস্য রেখে, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রণীত খসড়ার সংশোধনীতে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো- অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা; তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয়কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা; তামাক পণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা; ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা। অনুষ্ঠানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের চূড়ান্ত খসড়াটি পাশের জন্য সরকারের নিকট প্রেরণের অগ্রগতির বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। ডরপ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সংশোধনীর চূড়ান্ত খসড়াটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলেও ‘অজ্ঞাত’ কারণে তা অনুমোদন না দিয়ে ফেরৎ পাঠানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, তামাকের ব্যবহার বন্ধে আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি করতে হবে। আমাকে উৎপাদন, ক্রয় বিক্রয় এবং ব্যবহার শুধু আইন দিয়েই বন্ধ করা যাবে বলে আমার মনে হয় না। এই খাতকে ভালো কিছু দিয়ে রিপ্লেস করে বা এই খাত সংশ্লিষ্টদেরকে বিকল্প কিছুর ব্যবস্থা করে দিয়ে তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তা ফলপ্রসু হবে বলে মনে হয়। সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, তামাক বা মাদক উৎপাদন ও ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা বা আইন সংশোধন বা এর বাস্তবায়নের পাশাপাশি তামাক জাতীয় দ্রব্যাদির ব্যবহার বৃদ্ধির মূল কারণটা বের করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ধরে ধরে কাজ করতে হবে। এর পেছনে পরিবেশ, প্রেম, সম্পর্কচ্ছেদ, সঙ্গদোষ, হতাশা, মানসিক অসুস্থতা, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবসহ আরো অনেককিছুই দায়ী বলে মনে হয়।