চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সাথে আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত ডা. আবদেল ওহাব সাইদানি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে সাক্ষাৎকালে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রামে বিনিয়োগের মাধ্যমে আলজেরিয়া লাভবান হতে পারে বলে মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকালে মেয়র শাহাদাত বলেন, ইপিজেড, বন্দরসহ ব্যাপক বাণিজ্যিক অবকাঠামো থাকায় চট্টগ্রাম বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণভূমি। নগরীর যোগাযোগ অবকাঠামোকে ঢেলে সাজাতে আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। এ ছাড়া, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসণেও নেয়া হয়েছে একাধিক প্রকল্প। ফলে বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য চট্টগ্রাম একটি আদর্শ স্থানে পরিণত হয়েছে। আলজেরিয়া এই সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভবান হতে পারে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় থেকে আলজেরিয়া আমাদের প্রতি সমর্থন জুগিয়ে আসছে। আলজেরিয়া ছিল সেই দেশগুলোর মধ্যে একটি, যারা প্রথম দিকেই আমাদের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বাংলাদেশ এবং আলজেরিয়ার মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের আরো উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। আমরা এরই মধ্যে আলজেরিয়ায় আমাদের বিশ্বমানের পোশাক রপ্তানি করছি, এবং তাদের কাছ থেকে কৃষি পণ্য ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।
আমাদের লক্ষ্য হবে এই সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে দুই দেশের অর্থনীতির আরো উন্নয়ন করা। আমাদের দুই দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি একে অন্যকে সমৃদ্ধ করতে পারে। আলজেরিয়ার সাথে সাংস্কৃতিক বিনিময়, শিক্ষার্থী বিনিময় প্রোগ্রাম এবং ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের সম্পর্ককে আরো মজবুত করতে পারি। জাতিসংঘ, ওআইসি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে আমরা একে অন্যকে সমর্থন করে আসছি। এই সহযোগিতা বিশ্বশান্তি ও উন্নয়নের জন্য আমাদের একতাবদ্ধ অবস্থানের প্রমাণ। আমি দৃঢ?ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ ও আলজেরিয়ার সম্পর্ক কেবল কূটনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রেও আরো সমৃদ্ধ হবে। আমরা সকলে একসঙ্গে কাজ করলে এ বন্ধন হবে আরো মজবুত।
জবাবে রাষ্ট্রদূত ডা. আবদেল ওহাব সাইদানি বলেন, বাংলাদেশ মুসলিম দেশ হওয়ায় এবং আলজেরিয়া মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ আলজেরিয়ায় খাদ্যপণ্য, মেডিসিন, কৃষিজ পণ্য রপ্তানি করতে পারে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতসহ বেশ কিছু শিল্পখাত আলজেরিয়াতে কারখানা স্থাপন করে আফ্রিকাতে বাজার সম্প্রসারণ করতে পারে। আলজেরিয়া আফ্রিকা ও ইউরোপের বেশ কিছু দেশের সাথে নিকটবর্তী হওয়ায় দ্রুত পণ্য সরবরাহের সুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশের শিল্পখাত লাভবান হতে পারে। ‘আলজেরিয়ার রাষ্ট্রীয় তেল ও গ্যাস প্রতিষ্ঠান সোনাট্রাখ আফ্রিকার বৃহত্তম এবং বিশ্বের ১৫তম বৃহত্তম তেল ও গ্যাস কোম্পানি। সোনাট্রাচ আলজেরিয়ায় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন, পরিবহন ও বিপণনের দায়িত্বে রয়েছে। এ ছাড়াও, সোনাট্রাখ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শক্তি প্রকল্পে বিনিয়োগ করে থাকে। বাংলাদেশে এ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। এ ছাড়া, আমি আলজেরিয়ার অন্য শিল্পখাতগুলোকেও বাংলদেশে বিনিয়োগ করতে বলব। আলজেরিয়ার ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ ও দ্রুত হওয়ায় বাংলাদেশিরা আলজেরিয়ায় বিনিয়োগ ও বিনোদনের জন্য সহজে ভ্রমণ করতে পারে। সভায় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, মেয়রের একান্ত সচিব মো. জিল্লুর রহমান, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী।