ঢাকা ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

নারায়ণগঞ্জে ভয়াবহ দূষণের কবলে শীতলক্ষ্যা নদী

নারায়ণগঞ্জে ভয়াবহ দূষণের কবলে শীতলক্ষ্যা নদী

নারায়ণগঞ্জে ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়েছে শীতলক্ষ্যা নদী। নদীর পানির সাথে দূষিত হচ্ছে খালগুলোর আশপাশের পরিবেশও। এক সময়ে এ নদীর পানি পান করা গেলেও বর্তমানে ডাইং কারখানাসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানার বর্জ্য ও বিষাক্ত কেমিক্যালের কারণে ভয়াবহভাবে দূষণের কবলে পড়েছে এ নদীর পানি। যার ফলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীর সব ধরনের মাছ। নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নদীর দু’পাড়ের বাসিন্দা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জেলায় ছোট-বড় সাড়ে চার শতাধিক ডাইং, ওয়াশিং ও ফিনিশিং কারখানাসহ নদীকেন্দ্রীক আরো দুই শতাধিক শিল্প-কারখানা রয়েছে। অধিকাংশ কারখানাতেই ব্যবহার হচ্ছে না বর্জ্য পরিশোধনকারী ইটিপি প্লান্ট। ফলে এসব কারখানার বিষাক্ত রঙ ও কেমিক্যালের রাসায়নিক বর্জ্য নদী ভয়াবহভাবে দূষণ করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এক সময়ের খরস্রোতা শীতলক্ষ্যা নদী এখন মৃত প্রায়। নদীতে গোসল করলে নানা ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। হারিয়ে যাচ্ছে নদীর সব ধরনের মাছ।

নার?্যয়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যার তীর ঘেঁষে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন ডাইং কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যালের এমন বর্জ্য খাল ও ডোবা-নালা দিয়ে সরাসরি গিয়ে পড়ছে শীতলক্ষ্যা নদীতে। নদীর পানির সাথে দূষিত হচ্ছে খালগুলোর আশপাশের পরিবেশও। নদী দূষণকারী এমন অসংখ্য ডাইং কারখানা গড়ে উঠেছে শীতলক্ষ্যার তীরবর্তী এলাকাগুলোতে।

এদিকে দূষণ থেকে নদী রক্ষায় ডাইং কারখানাগুলোতে ইটিপি প্লান্ট ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারসহ পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা। এ ছাড়াও শীতলক্ষ্যা নদী রক্ষার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন জেলার পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তবে নদী দূষণকারী  প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা উপ-পরিচালক। পাশাপাশি নদী রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাও।

পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, নদীকে দূষণ থেকে রক্ষার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছি। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোতে আমরা আবেদন জানিয়েছি। ডাইংসহ নদীকেন্দ্রীক সব শিল্প কারখানাগুলোতে ইটিপি প্লান্ট ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা নদী রক্ষা কমিশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতি জোড় দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা উপ-পরিচালক এ এইচ এম রাসেদ জানান, শীতলক্ষ্যাসহ অন্যান্য নদী দূষণ রোধে নানা কার্যক্রম চলছে। নদী দূষণের কারণে ইতিপূর্বে আমরা বিভিন্ন ডাইং কারখানাসহ দূষণকারী শিল্প-প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা করেছি। ওইসব প্রতিষ্ঠানের গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ আমরা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছি।

ডাইং কারখানাগুলোতে ইটিপি প্লান্ট ব্যবহার হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে আমরা নজরদারি করছি। এরপরেও যদি আমরা দেখি কোন প্রতিষ্ঠান ইটিপি প্লান্ট ব্যবহার করছে না বা বিষাক্ত বর্জ্য ফেলে নদী দূষণ করছে, তাহলে আমরা ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জে নদী ও খাল দূষণকারী ১৩০ টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে আর্থিক জরিমানা সহ আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ শহরের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে বিআইডব্লিউটিএ’র নির্মাণাধীন একটি প্রলল্প পরিদর্শনে এসে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। এসময় সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সম্মিলিত কাজ। কারো একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আমরা পরিবেশ অধিদপ্তর ও নদী রক্ষা কমিশনের সাথে কথা বলেছি। তাদের যতো ধরনের সহযোগিতা করা প্রয়োজন আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত