ঢাকা ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শীত কাপড়ের বাজার গরম

শীত কাপড়ের বাজার গরম

পৌষের মাঝামাঝি এসে সারাদেশের মতো রাজধানীতেও জেঁকে বসেছে কনকনে শীত। কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। কনকনে শীতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানী ছিল কুয়াশার চাদরে ঢাকা। একই অবস্থা গতকাল শুক্রবার সকালেও। কনকনে শীতে বেড়েছে মানুষের ভোগান্তি। ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে ছিন্নমূল মানুষরা। রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ও সড়কে শীতার্তদের আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। লেপ-কাঁথা কিংবা সোয়েটার, চাদর জড়িয়ে যে যেভাবে পারে শীত নিবারণ করে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। গ্রামে কাঠ-খড় পুড়িয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা থাকলেও শহুরে জীবনে তা চলে না। বাড়ির বাইরে, ছাদ কিংবা বারান্দায় কিছুটা রোদের দেখা মিললেও ঘরের ভেতরে বেশ ঠান্ডা লাগে। ঘরে আরামদায়ক উষ্ণতা পেতে অনেকে কম্বল আর কমফোর্টারই বেছে নেন শীত নিবারণের জন্য। কয়েকদিন ধরে কংক্রিটের শহর ঢাকায়ও রোদের তেমন দেখা মিলছে না। দিনের বেলায় বাইরে শীত অনুভূত না হলেও রাতে মৃদু হিম বাতাস ও হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতের আগমনী বার্তায় রাজধানীর ফুটপাত থেকে শুরু করে নামিদামি শপিংমলেও এখন শীতের পোশাকের পসরা বসতে শুরু করেছে। এ সময়ে অন্য যে কোনো পোশাকের চেয়ে শীতের পোশাকের বেচাকেনাও ভালো। অনেকটাই জমে উঠেছে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা দোকানে গরম কাপড়ের বেচাকেনা।

সরেজমিনে রাজধানীর গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশের রাস্তা, ঢাকা ট্রেড সেন্টার ও নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতার ভিড়ও বাড়ছে। তবে পাইকারি দোকানে ঢাকার বাইরের ক্রেতাই বেশি। ওই সব এলাকার সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীতকেন্দ্রিক গরম কাপড়ের বেচাকেনা শুরু হয় অক্টোবর থেকে। এ বছর সেটি কিছুটা দেরিতে শুরু হয়েছে। তবে ডিসেম্বরের শুরু থেকে ব্যবসা অনেকটাই জমজমাট। দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন দামের শীতের পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও শৌখিন কম্বলের পুরোটা আমদানিনির্ভর। অন্যদিকে, ত্রাণের কম্বল তৈরি হয় দেশেই। গরম কাপড়ের বাজারগুলো ক্রেতাদের আনাগোনায় গরম হয়ে উঠছে। অনেকটাই জমে উঠেছে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা দোকানে গরম কাপড়ের বেচাকেনা। ব্যবসায়ীরা জানান, মৌসুমি ব্যবসা হওয়ায় বিনিয়োগ বেশি। কারণ, স্বল্প সময়ে ব্যবসা করতে হয়, তাই বেশি অর্থ লগ্নি করতে হয়। আবার ব্যবসা ভালো না হলে, পণ্য বিক্রি না হলে টাকা আটকে যায়। তখন পরের বছরের জন্য অপেক্ষা করতে হয় তাদের।

রাজধানীর গুলিস্তান অ্যানেক্স টাওয়ারের ৮০টি দোকান এবং গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের আরো ১৬০টি দোকান এ সময় কম্বলসহ বিভিন্ন শীতকালীন পণ্য বিক্রি করা হয়। যেখানে কম্বলের মধ্যে রয়েছে হেমার, ক্যাঙ্গারু, ডায়মন্ড কিং, চায়না, কোরিয়ান ও দেশি ডাবল এবং সিঙ্গেল কম্বল। বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর কম্বলের দাম একটু বেশি। একদিকে মূল্যস্ফীতি আবার ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি খরচ বেড়েছে। ফলে খুচরার পাশাপাশি পাইকারিতেও দাম খানিকটা বাড়তি। আবার ক্রেতার সংখ্যাও এখন পর্যন্ত তুলনামূলক কম।

গুলিস্তান বায়তুল মোকাররম মসজিদের পাশের রাস্তায় ফুটপাতে অনেক কম্বলের দোকান রয়েছে। সেখানকার এক ব্যবসায়ী হাসান বলেন, এ বছর ক্রেতা কম। আমাদের এখানে সব ধরনের মানুষ কম্বল কিনতে আসেন। সৌদি আরব, দুবাই থেকে লাগেজ পার্টি অনেক কম্বল কিনে আনেন। সেগুলো আমাদের এখানে পাওয়া যায়। আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের কাছে লোকাল কোনো কম্বল নেই। কম দামে ভালো মাল বিক্রি করি, ক্রেতাদের প্রতারিত হওয়ারও সুযোগ নেই। এখন বেচাকেনা কম, ঢাকার বাইরের ক্রেতাই বেশি। গুলিস্তানের পাশাপাশি নিউমার্কেট এলাকায়ও কম্বলের দোকান রয়েছে। নিউমার্কেটের বিসমিল্লাহ বেডিং স্টোরের স্বত্বাধিকারী সুলাইমান বলেন, আমার দোকানে সব ধরনের দামের কম্বল আছে। দেশি, চায়নিজ, ভিয়েতনামি, কোরিয়ান অনেক দেশের সিঙ্গেল ও ডাবল পার্ট কম্বল আছে। ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা দামের কম্বল বিক্রি করছি।

গুলিস্তানে ঢাকা ট্রেড সেন্টারের নিচ তলায় শরীয়তপুর এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার আহমেদ বলেন, আমাদের এখানে কেজি দরে কম্বল বিক্রি হয়। কোয়ালিটি অনুযায়ী কেজিপ্রতি ৮০০-১২০০ টাকা দাম থাকে। যেমন- ডলফিন কোম্পানির তিন কেজি সাতশ গ্রাম ওজনের ডাবল পার্ট কম্বলের দাম ৩ হাজার ৮০০ টাকা। কম্বলের চেয়ে দাম একটু কম হওয়ায় অনেকে কমফোর্টার ব্যবহার করেন। শীতের মাত্রা এবং ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের কমফোর্টার রয়েছে বাজারে। ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট দক্ষিণ ভবনের নিচ তলায় পপুলার বেডিং স্টোরের স্বত্বাধিকারী হানিফ বলেন, আমাদের এখানে সব ধরনের এসি কুইল্ট, নকশিকাঁথা, কম্বল, কমফোর্টার, আছে। কম্বলের চেয়ে কমফোর্টার ব্যবহার করা সহজ। ওজন কম, সহজে ওয়াশও করা যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত