চট্টগ্রামে ফুলপ্রেমীদের জন্য শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ফুল উৎসব। গতকাল শনিবার থেকে তৃতীয়বারের মতো বন্দর নগরীর ফৌজদারহাটের বঙ্গোপসাগরের তীরে গড়ে তোলা ডিসি পার্কে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী এ ফুল উৎসব। এদিন সকাল ১১টায় মাসব্যাপী এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ। উদ্বোধন শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ বলেন, এধরনের আয়োজন প্রশংসনীয়। নতুন প্রজন্মের সাথে প্রকৃতির মিতালী’তে তৈরী’তএ অন্যন্য ভূমিকা রাখবে এমন আয়োজন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম জানান, দেশি-বিদেশি ১৩৬ প্রজাতির দুই লক্ষাধিক ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের ফুলের স্বর্গরাজ্যে। পরিবার নিয়ে কোলাহলমুক্ত পরিবেশে নগরবাসী ফুলের রাজ্যে এসে প্রশান্তি পাবে। এবার কিছুটা নতুনত্ব রাখা হয়েছে মাসব্যাপী এ আয়োজন জুড়ে। ফুল উৎসবকে কেন্দ্র করে ফুলপ্রেমীদের মাঝে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডিসি পার্কে মানুষজন আসতে শুরু করেছে ফুলের রাজ্যের এই নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। যদিওবা ফুল উৎসব এখনো পুরোপুরি জমে উঠেনি। উৎসব আয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন ফুল উৎসব জমে উঠতে আরো বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। সড়কের পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে বাহারি রঙের ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে এই পার্ক। মাদকসেবী, মাদক বিক্রেতাদের দখলে ছিল সরকারের ১৯৪ একর জায়গা। ২০২৩ সালের মাদকের সেই আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়ে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করে জেলা প্রশাসন। গড়ে তোলা হয় নান্দনিক ডিসি পার্ক। জানা যায়, ১৩৬ প্রজাতির লক্ষাধিক ফুলের আসর বসবে সেখানে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এ উৎসবের আয়োজন করেছে। এরই মধ্যে টিউলিপ, গোলাপসহ প্রায় সব রকমের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে ডিসি পার্ক। লাল, হলুদের পাশাপাশি সাদা ও গোলাপি ফুলের সমারোহও উপভোগ করা যাবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফুল উৎসব। চট্টগ্রামে তৃতীয়বারের মতো এ আয়োজন হতে যাচ্ছে। এটি হবে আনন্দ, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের এক অপূর্ব সমাবেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা ফুলের সমারোহে ডিসি পার্ককে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি প্রজাতি ভিন্ন রঙ, আকৃতি এবং ঘ্রাণে সমৃদ্ধ যা সহজেই দর্শকদের মনকে আলোড়িত করবে।প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পার্ক দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। টিকিটের মূল্য হবে জনপ্রতি ৫০ টাকা। উৎসব ঘিরে বসবে বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা, হস্তশিল্প এবং স্থানীয় খাবার সমৃদ্ধ গ্রামীণ মেলা। সেই সঙ্গে চলবে নাচ, গান, ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম জানান, গতবছর এ ফুল উৎসবে ৯ লাখ দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেছিল। এবার ১২ লাখের মতো দর্শনার্থী সমাগম হওয়ার আশা করছে জেলা প্রশাসন। কাউন্টারের বাইরে দর্শনার্থীরা অনলাইনেও টিকিট কেটে ফুল উৎসবে যেতে পারবেন। ফুল উৎসবে গাছ সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছে ইফা ল্যান্ডস্ক্যাপ গার্ডেন ডিজাইন অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্মা। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী কাউসার আল ইমরান জানিয়েছেন, দেড় মাস ধরে ফুল উৎসবের প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম ছাড়াও যশোর, রংপুর, ঢাকা, দিনাজপুর, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফুল গাছ আনা হয়েছে।
এবারের উৎসবে স্থান পাচ্ছে- বেশিরভাগই বিদেশি প্রজাতির শীতকালীন ফুল। সেখানে আছে ২৫ ধরনের গোলাপ, স্টক, গেজানিয়া, ক্যামেলিয়া, হলিহক, স্নোবক, নেসটিয়াম, লিলিয়াম, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকার মতো ফুল। এ ছাড়া টিউলিপও আনা হবে বলে জানালেন কাউসার আল ইমরান। প্রসঙ্গত, ৪ ঠা জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আগামী ৪ ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পারবেন দর্শনার্থীরা।
এবারের আয়োজনে প্রবেশমূল্য রাখা হয়েছে ৫০ টাকা।এ উৎসবে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকবে মাসব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব, বই উৎসব, ভিআর গেইম, ভায়োলিন শো, পুতুল নাচ, ১৩০ প্রজাতির ফুলের সমারোহ, ২৪ থেকে ২৫ জানুয়ারি মাল্টিকালচারাল ফেস্টিভ্যাল, ৩১ জানুয়ারি ঘুড়ি উৎসব, ফুলের সাজে একদিন, ১৭ থেকে ২৩ জানুয়ারি পিঠা উৎসব, ১০ থেকে ১১ জানুয়ারি লেজার লাইট শো ও ১ থেকে ২ ফেব্রুয়ারি মুভি শো। মাসব্যাপী এ ফুল উৎসবের প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকবে। বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।