ক্যাডার বৈষম্যের কারণে পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। প্রশাসনসহ অন্য ক্যাডারগুলোতে এমনকি স্বাস্থ্য ক্যাডারের বেশকিছু স্পেশালিটিতে পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি নিশ্চিত করা হলেও গাইনিসহ অনেক বিভাগে বছরের পর বছর একই পদে আটকে আছেন বলে জানিয়েছেন তারা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ‘পদ নাই, পদোন্নতি নাই’ নীতি থেকে বের হয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
বক্তারা দেশের চিকিৎসা সেবা ও চিকিৎসা শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং অন্তঃ ও আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিতে যোগ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্রুত পদোন্নতির দাবি জানান। এতে সরকারের অতিরিক্ত আর্থিক খরচ হবে না বলেও জানান চিকিৎসকরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরামের আহ্বায়ক ডা. মির্জা মো. শামসুল আরেফিন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত। অন্য ক্যাডারে থাকা আমাদের জুনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তারাও পদে আমাদের সিনিয়র। এটা আমাদের জন্য একটা মানসিক পীড়ার কারণ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দীর্ঘদিন মেডিকেল অফিসার পদে আটকে থাকা চিকিৎসকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির দাবি জানাচ্ছি। এতে সরকারের আর্থিক কোনো চাপ পড়বে না। কারণ আমরা এরই মধ্যে ওই বেতন পাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি জানিয়ে আসছি। তবে আশ্বাস ছাড়া কোনো কিছুই পাইনি। জনগণের ভোগান্তি হয় এমন কোনো কর্মসূচিতে আমরা যাবো না। আমরা মানুষকে জিম্মি করে দাবি-দাওয়া আদায় করবো না। মেধার অপচয়ের কথা উল্লেখ করে ডা. শামসুল আরেফিন বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতার ইচ্ছে হয়েছে মেডিকেল কলেজ স্থাপন করেছে। এসব শিক্ষার্থীদের কে পড়াবে সে চিন্তা কেউ করেনি। আমাদের কোয়ালিটি চিকিৎসক প্রয়োজন। সঠিক স্থানে সঠিক লোক নিয়োগ করা প্রয়োজন। একজন কার্ডিওলজি সার্জনকে উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে প্যারাসিটামল লেখার জন্য বসিয়ে রেখেছে। এটা মেধার অপচয়। মেধার মূল্যায়ন না হলে মেধাবিরা দেশত্যাগ করে। তখন আমাদের কতজনের সামর্থ্য রয়েছে দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করার। আমরা দেশের মানুষকে সেবা দিতে চাই। আমরা চাইনা বাংলাদেশের রোগীরা অন্য দেশে মেডিকেল টুরিজমের হাতিয়ার হোক।
স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের দাবি দাওয়া নিয়ে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনে দেখা করে আমাদের সুপারিশ জানিয়েছি। আমরা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানের সাথে কথা বলেছি। তিনিও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। যুগ্ম-আহ্বায়ক ডা. বশির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আর্থিক সুবিধা চাচ্ছি না। আমরা শুধু আমাদের সম্মান চাচ্ছি। যারা রাষ্ট্র কাঠামো ঠিক করে তারা এই সমস্যাটা তৈরি করেছে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরতরা যদি চিকিৎসক হতেন তাহলে হয়তো তারা আমাদের বিষয়টা বুঝতেন। বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রশাসন ক্যাডারের যারা আছেন, তারা এদেশে চিকিৎসা নেন না। তাদের সন্তানরাও এদেশে থাকেন না। বাংলাদেশের এমবিবিএস ডিগ্রির মান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের এমবিবিএস ডিগ্রির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হুমকির মুখে। এর কারণ চিকিৎসক সংকট। আর এ সংকটের কারণ চিকিৎসকদের সময়মতো পদোন্নতি না হওয়া। নিয়ম অনুযায়ী মেডিকেল কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থী রেসিও হবে ৩০:১। কিন্তু আমাদের তা হচ্ছে না। কারণ পদ নেই বলে বিশেষজ্ঞদের পদোন্নতি হচ্ছে না। এ সময় বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফোরামের পক্ষ থেকে এ সমস্যা সমাধানে চার দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।