কুমিল্লায় গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৫৫টি ধর্ষণের অভিযোগের নমুনা পরীক্ষায় শতাধিক নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনার প্রমান মিলেছে। বাকিগুলো স্বেচ্ছায় বা সম্মতিতে হয়েছে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের (কুমেক) ফরেনসিক বিভাগ সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। কুমিল্লা জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার গুরুতর অপরাধ বিবরণীর তালিকা অনুযায়ী গত জানুয়ারি মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৬টি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ৯টি করে, এপ্রিল ও মে মাসে ১১টি করে, জুনে ৬টি, জুলাইয়ে ১০টি, আগস্টে ৬টি, সেপ্টেম্বরে ৫টি, অক্টোবরে ৮টি এবং নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ১২টি করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু ধর্ষণের ঘটনায় দেখা গেছে ধর্ষক তার হীনলিপ্সা চরিতার্থ করে ওই নারীকে হত্যা করেছে। এমন ঘটনার মধ্যে শিশুকে ধর্ষণ শেষে হত্যার মতো ঘটনাও রয়েছে। গত বছরের ২৯ এপ্রিল জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার খিলপাড়া গ্রামের ৯ বছরের এক শিশুকে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনাটি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। একই বছরের ২৮ আগস্ট জেলার তিতাস উপজেলার দাসকান্দি বাজারে ত্রাণের জন্য গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় এক প্রতিবন্ধী নারী। ঐ বছরের ৭ নভেম্বর জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলায় বাড়ির পাশে পুকুরে মাছ ধরা দেখে ফেরার পথে সাত বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। গত বছরে শতাধিক ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে অধিকাংশই চার বছর থেকে ১৫ বছরের শিশু রয়েছে, অন্যদের বয়স ২০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) ফরেনসিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী জেলায় গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের অভিযোগে ৩৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, এদের মধ্যে ৪ বছরের শিশু থেকে ৪০ বছরের নারী রয়েছে। সূত্র জানায়, যেসব নমুনায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে সেগুলো মামলায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। আবার এমন অনেক ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে যারা আত্মসম্মান ও সামাজিক লাজ-লজ্জায় আইনের দ্বারস্থ হননি।
কুমিল্লার সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, আইনজীবী, নারী সংগঠক ও আইনি সহায়তা সংস্থার কর্মীদের ভাষ্য, সামাজিক ও পারিবারিক অস্থিরতাই নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যার মতো গুরুতর অপরাধগুলো সংঘটিত হচ্ছে। আবার এ ধরনের মামলার দূর্বল তদন্ত ও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ায় বা কঠোর সাজা না হওয়ায় নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতামূলক অপরাধ প্রবণতা বেড়ে চলছে। তাদের মতে, এ ধরনের ঘটনায় স্বল্প সময়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নৈতিক অবক্ষয়রোধে সামাজিক ও সাংগঠনিকভাবে কাউন্সিলিং এবং গণমাধ্যমের বলিষ্ঠ ভূমিকা নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি কমাতে পারে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এসোসিয়েট প্রফেসর ডা. সারমিন সুলতানা বলেন, বিগত সময়ের তুলনায় ২০২৪ সালে ধর্ষণের অভিযোগের সংখ্যা তেমন বাড়েনি। তবে ধর্ষণের ঘটনাগুলো ১৬ থেকে ২২ বছরের মধ্যে বেশি দেখা যায়। অনেক সময় প্রেম সংক্রান্ত বিষয় থেকেও এমন ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের অভিযোগে ৩৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় শতাধিক আলামত মিলেছে, বাকিগুলো স্বেচ্ছায় বা সম্মতিতে হয়েছে।